ট্রাম্পের দাবি ও শান্তি প্রচেষ্টা
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি একাধিক যুদ্ধ শেষ করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি ছয়টি যুদ্ধ শেষ করেছি… এসব চুক্তি করতে গিয়ে ‘সিজফায়ার’ শব্দটিও ব্যবহার করতে হয়নি।” পরদিন আবার তিনি দাবি করেন, সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতটিতে।
ট্রাম্প প্রশাসন এখন বলছে, “শান্তির দূত” হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সময় অনেক আগেই হয়ে গেছে। তবে এসব যুদ্ধ কতটা সত্যিকার অর্থে শেষ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী শান্তি নয়, বরং অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিই কার্যকর হয়েছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের কিছু স্থাপনায় আঘাত হানে। ২৩ জুন ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন, “১২ দিনের যুদ্ধ শেষ হলো, ইরান ও ইসরায়েল সিজফায়ার শুরু করেছে।”
তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি দাবি করেন, এটি তাদের “সিদ্ধান্তমূলক বিজয়।” বিশ্লেষকদের মতে, এখানে স্থায়ী শান্তি নয়, বরং অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিই হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা
মে মাসে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মাত্র চার দিনের মধ্যে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি উভয় দেশকে নিয়ে রাতভর আলোচনার মাধ্যমে “পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি” করিয়েছেন। পাকিস্তান কৃতজ্ঞতা জানালেও ভারত জানায়, আলোচনা হয়েছে দুই দেশের সেনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল না।
রুয়ান্ডা-কঙ্গো চুক্তি
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের দখল নেওয়া নিয়ে উত্তেজনা বাড়লে জুনে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রুয়ান্ডা ও কঙ্গো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে দুই দেশ যুদ্ধবিরতি মানতে রাজি হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, এ চুক্তি বাণিজ্য বাড়াতেও সাহায্য করবে।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত
জুলাইয়ে সীমান্তে স্বল্পমেয়াদি সংঘাত শুরু হলে ট্রাম্প সরাসরি ফোন করে যুদ্ধবিরতি দাবি করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ট্রাম্প এও হুমকি দেন, লড়াই বন্ধ না হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় বসবে না।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সমঝোতা
৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে দুই দেশের নেতারা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। নাগর্নো-কারাবাখ ইস্যুতে প্রায় চার দশকের সংঘাত কমাতে এ উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। উভয় দেশের নেতাই ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেন।
মিশর-ইথিওপিয়া বিরোধ
এটি সরাসরি যুদ্ধ ছিল না, বরং নীলনদে ইথিওপিয়ার বিশাল বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘ বিরোধ। মিশর আশঙ্কা প্রকাশ করে, এতে তাদের পানির সরবরাহ কমে যাবে। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত এ বিরোধ মেটাবে। তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক সমাধান হয়নি।
সার্বিয়া-কসোভো পরিস্থিতি
২৭ জুন ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি সংঘাত শুরু হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, তখন তারা সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত ছিল না।
সমালোচনা ও বাস্তবতা
ট্রাম্প নিজেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার নায়ক হিসেবে তুলে ধরলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রেই তিনি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু স্থায়ী শান্তি নয়। কিছু চুক্তি কতটা টেকসই হবে, সেটিও অনিশ্চিত। তবে একাধিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ করে তিনি আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















