৩১ আগস্ট শুরু, সভাপতিত্ব করবেন শি জিনপিং
চীনের তিয়ানজিন শহরে ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের বৈঠক। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি মূল বক্তব্য দেবেন এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ছাড়াও একাধিক আন্তর্জাতিক আয়োজনের নেতৃত্ব দেবেন।
এবারের আয়োজনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে তিয়ানজিন। বিশ্বনেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের উপস্থিতিতে এটি চীনের এ বছরের অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক আয়োজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় সম্মেলন
২৪ বছর আগে গঠিত এসসিও বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বড় আঞ্চলিক জোট। এর সদস্য সংখ্যা এখন ১০, পর্যবেক্ষক দেশ ২ এবং সংলাপ অংশীদার রয়েছে ১৪টি। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মিলিয়ে এর ভূরাজনৈতিক বিস্তৃতি বিশাল, আর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও উল্লেখযোগ্য।
চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ বিন জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান অংশ নেবেন। এর মধ্যে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট, ভিয়েতনামের নেতা, জাতিসংঘ মহাসচিব ও আসিয়ানের মহাসচিব।

এসসিও-র ইতিহাসে এটিই হবে সবচেয়ে বড় সম্মেলন।
তিয়ানজিনের প্রস্তুতি ও চীনের প্রত্যাশা
সম্মেলনের আগে তিয়ানজিন শহরকে সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক আয়োজনের উপযোগী করে। শহরের কর্মকর্তা ইউ পেংঝৌ জানিয়েছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে যাতে অংশগ্রহণকারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারেন। শহরজুড়ে চলছে নিরাপত্তা, পরিবহন ও আতিথেয়তার বিশেষ ব্যবস্থা।
কিরগিজস্তানের বিশ্লেষক শেরাদিল বাকতিগুলভ মনে করেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিয়ানজিনকে নতুনভাবে চিনবে বিশ্ব।
চীনের নেতৃত্বে নতুন এজেন্ডা
চীন ২০২৪–২০২৫ মেয়াদে এসসিও-র ঘূর্ণায়মান সভাপতি। এই সময়ে তারা ঘোষণা করেছে “এসসিও টেকসই উন্নয়ন বছর”। ইতোমধ্যেই কূটনীতি, অর্থনীতি, অর্থায়ন, প্রতিরক্ষা, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ১০০টিরও বেশি বৈঠক আয়োজন করেছে চীন।
তিয়ানজিন সম্মেলনে গ্রহণ করা হবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এর মধ্যে রয়েছে—
- • “তিয়ানজিন ঘোষণা”,
- • আগামী ১০ বছরের উন্নয়ন কৌশল,
- • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি এবং জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যৌথ বিবৃতি,
- • নিরাপত্তা, অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ।

এসবের মাধ্যমে এসসিও কেবল আঞ্চলিক নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কেও সহযোগিতার মঞ্চ হিসেবে আরও শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
“সাংহাই স্পিরিট”-এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা
এসসিও-র আদর্শ বা “সাংহাই স্পিরিট” হলো পারস্পরিক আস্থা, সমতা, পরামর্শ, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও যৌথ উন্নয়নের নীতি। শি জিনপিং তাঁর মূল বক্তব্যে এই চেতনার ওপর জোর দেবেন।
চীন মনে করছে, এই চেতনা বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চীন এর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায়।
এসসিও-র উপ-মহাসচিব আহমদ সাঈদমুরোদজোদা বলেছেন, তিয়ানজিন সম্মেলন প্রমাণ করছে এসসিও কেবল আলোচনার সংগঠন নয়, বরং বাস্তব উদ্যোগের জায়গা।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও কৌশলগত গুরুত্ব
সম্মেলনের সময়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়া–পশ্চিম সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাসবাদ ও জ্বালানি বাণিজ্য ইস্যুতে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এটি ২০১৯ সালের পর তাঁর প্রথম চীন সফর। সম্মেলনের আগে তিনি জাপান সফর করবেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য।
চীনের কূটনৈতিক পরীক্ষা
তিয়ানজিন সম্মেলন চীনের জন্য কেবল আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক কূটনৈতিক নেতৃত্বেরও বড় পরীক্ষা। শি জিনপিংয়ের বক্তৃতা ও এজেন্ডা নির্ধারণ করবে, ভবিষ্যতে এসসিও কতটা কার্যকরভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
চীন বিশ্বাস করে, একটি মৈত্রীপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকরী এসসিও-র মাধ্যমে তারা বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থায় নতুন সমাধান হাজির করতে পারবে এবং মানবজাতির জন্য “যৌথ ভবিষ্যৎ সম্প্রদায়” গঠনে অবদান রাখবে।
আপনি চাইলে আমি এই প্রতিবেদনের শেষে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যোগ করে দিতে পারি—যেমন এসসিও-তে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষক অবস্থান, বা এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের জন্য কী শিক্ষা বা সুযোগ থাকতে পারে। সেটা কি যুক্ত করে দিতে চাইবেন?

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















