০৩:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১০৩)

দশম পরিচ্ছেদ

‘আর এর গতি কী করব?’

‘এটার? গুলি করে দিতে পারেন। না, থাক। ভাবছি, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এটাকে আটকে রাখা ভালো। ওর সঙ্গে আরেকবার আলাপ করা যাবে। পাখোমভ,’ এবার গলা চড়িয়ে ক্যাপটেন বলতে লাগল, ‘ঘোড়া তৈরি? আমার দূরবীনটা দে দেখি। আর, হ্যাঁ ছেলেটা ঘুম থেকে উঠলে ওকে কিছু খেতে দিস, বুঝলি? আমার জন্যে আর খানা রাখার দরকার নেই। আমি ওখানেই খেয়ে নেব’খন।’

দেয়ালে কাঠের ফাঁক দিয়ে দেখলুম আর্দালিদের কালো পাপাখা-টুপির কয়েক ঝলক। ধুলোর ওপর ঘোড়ার খুরের চাপা ধপুস্তুপ শব্দ শোনা গেল। ওই একই

ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলুম, সকালে আমাকে যে কড়ের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল চুককে এখন রক্ষীরা সেই কাঁড়েয় নিয়ে গেল।

ভাবলুম, ‘ক্যাপুটেনের ফিরতে রাত হবে। তার মানে, চুবুককে পরের বার জেরা করার জন্যে রাত্তিরে এখানে আনা হবে।’

আর তার মানে, অল্প একটু আশা। মৃদু নিশ্বাসের মতো এক ঝলক আশা আমার উত্তপ্ত মাথাটা ঠান্ডা করল।

ওখানে আমি ছিলুম স্বাধীন। কেউ আমাকে সন্দেহ করছিল না। তাছাড়া ছিলুম খোদ ক্যাপুটেনের অতিথি। যেখানে খুশি আমি যেতে পারতুম। তাই ভাবলুম, যখন অন্ধকার হবে তখন যেন একটু পায়চারি করছি এমনি ভাব করে চুবুক যেখানে আছেন সেই কুড়েটার পেছন দিকের জানলার পাশ দিয়ে যে গলিটা চলে গেছে সেই গলিতে যাব। আর ঝোপ থেকে আমার মাওজারটা কুড়িয়ে নিয়ে জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে ভেতরে চালান করে দেব।

রাত্রে শাল্বীরা যখন চুবুককে নিতে আসবে তখন ঘরের সামনের গাড়িবারান্দায় বেরোনোর পর, শাস্ত্রীরা চুবুককে নিরস্ত্র বলে জানে এই সুযোগটা নিয়ে, উনি ওদের দুটোকেই, ওরা রাইফেল ব্যবহার করতে পারার আগেই, দেবেন নিকেশ করে। তারপরের ব্যাপারটা খুব সোজা রাত্তিরের অন্ধকারে যে-কোনো একদিকে গোটা দুই লাফে চুবুক নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারবেন। আসল ব্যাপার হল, পিস্তলটা জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দেয়া। কিন্তু কাজটা কঠিন হওয়া তো উচিত নয়। কুড়েটা ইটের-তৈরি পাকা ঘর, জানলার গরাদগুলোও বেশ মোটা।

কাজেই পাহারাদার শাস্ত্রীটা, জানলা দিয়ে কয়েদী পালানোর ভয় নেই দেখে, সামনের দরজার সিড়ির ওপর বসে থেকে খালি দরজাটাই পাহারা দেয়। হয়তো কখনও-সখনও এক-আধবার সে ঘরটার পেছনের কোণের দিকে গিয়ে এদিক-ওদিক দেখে, তারপর ফের স্বস্থানে ফিরে আসে।

 

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-১০৩)

০৮:০০:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দশম পরিচ্ছেদ

‘আর এর গতি কী করব?’

‘এটার? গুলি করে দিতে পারেন। না, থাক। ভাবছি, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এটাকে আটকে রাখা ভালো। ওর সঙ্গে আরেকবার আলাপ করা যাবে। পাখোমভ,’ এবার গলা চড়িয়ে ক্যাপটেন বলতে লাগল, ‘ঘোড়া তৈরি? আমার দূরবীনটা দে দেখি। আর, হ্যাঁ ছেলেটা ঘুম থেকে উঠলে ওকে কিছু খেতে দিস, বুঝলি? আমার জন্যে আর খানা রাখার দরকার নেই। আমি ওখানেই খেয়ে নেব’খন।’

দেয়ালে কাঠের ফাঁক দিয়ে দেখলুম আর্দালিদের কালো পাপাখা-টুপির কয়েক ঝলক। ধুলোর ওপর ঘোড়ার খুরের চাপা ধপুস্তুপ শব্দ শোনা গেল। ওই একই

ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলুম, সকালে আমাকে যে কড়ের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল চুককে এখন রক্ষীরা সেই কাঁড়েয় নিয়ে গেল।

ভাবলুম, ‘ক্যাপুটেনের ফিরতে রাত হবে। তার মানে, চুবুককে পরের বার জেরা করার জন্যে রাত্তিরে এখানে আনা হবে।’

আর তার মানে, অল্প একটু আশা। মৃদু নিশ্বাসের মতো এক ঝলক আশা আমার উত্তপ্ত মাথাটা ঠান্ডা করল।

ওখানে আমি ছিলুম স্বাধীন। কেউ আমাকে সন্দেহ করছিল না। তাছাড়া ছিলুম খোদ ক্যাপুটেনের অতিথি। যেখানে খুশি আমি যেতে পারতুম। তাই ভাবলুম, যখন অন্ধকার হবে তখন যেন একটু পায়চারি করছি এমনি ভাব করে চুবুক যেখানে আছেন সেই কুড়েটার পেছন দিকের জানলার পাশ দিয়ে যে গলিটা চলে গেছে সেই গলিতে যাব। আর ঝোপ থেকে আমার মাওজারটা কুড়িয়ে নিয়ে জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে ভেতরে চালান করে দেব।

রাত্রে শাল্বীরা যখন চুবুককে নিতে আসবে তখন ঘরের সামনের গাড়িবারান্দায় বেরোনোর পর, শাস্ত্রীরা চুবুককে নিরস্ত্র বলে জানে এই সুযোগটা নিয়ে, উনি ওদের দুটোকেই, ওরা রাইফেল ব্যবহার করতে পারার আগেই, দেবেন নিকেশ করে। তারপরের ব্যাপারটা খুব সোজা রাত্তিরের অন্ধকারে যে-কোনো একদিকে গোটা দুই লাফে চুবুক নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারবেন। আসল ব্যাপার হল, পিস্তলটা জানলার গরাদের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দেয়া। কিন্তু কাজটা কঠিন হওয়া তো উচিত নয়। কুড়েটা ইটের-তৈরি পাকা ঘর, জানলার গরাদগুলোও বেশ মোটা।

কাজেই পাহারাদার শাস্ত্রীটা, জানলা দিয়ে কয়েদী পালানোর ভয় নেই দেখে, সামনের দরজার সিড়ির ওপর বসে থেকে খালি দরজাটাই পাহারা দেয়। হয়তো কখনও-সখনও এক-আধবার সে ঘরটার পেছনের কোণের দিকে গিয়ে এদিক-ওদিক দেখে, তারপর ফের স্বস্থানে ফিরে আসে।