১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২৪) শেখ হাসিনার রায় কবে, জানা যাবে আজ পাকিস্তানে দরিদ্র্যর সংখ্যা বিশ্বব্যাংক ও সরকার নানা ভাবে নির্ধারণ থাই রাজার ঐতিহাসিক চীন সফর: ১৯৪৯ সালের পর প্রথমবার কোনো থাই সম্রাটের বেইজিং যাত্রা উমর নবি: যিনি ‘সাদা কলার গ্রুপ’কে উত্সাহিত করেছিলেন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৩) দ্বিতীয় মার্কিন তেল চালানঃ ১ মিলিয়ন ব্যারেল নিয়ে পাকিস্তানে পৌঁছেছে সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে” সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব

নেপালের পুরোনো শাসনব্যবস্থার বিদায় কেন অনিবার্য হলো

সবকিছুর শুরু হয়েছিল একটি হিট-অ্যান্ড-রান দিয়ে। কোশি প্রদেশের অর্থমন্ত্রীর গাড়িযিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলির দলের নেতাএকজন ১১ বছরের মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। চালককে পরে আটক করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তি দেওয়া হয়। ওলি এটিকে ক্ষুদ্র ঘটনা আখ্যা দেন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষয়টি এভাবেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছিল দিনের আলোয়। হতভম্ব মেয়েটির ধীরে দাঁড়িয়ে উঠে দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জেনারেশন-জেড তরুণ প্রতিবাদকারীরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে। তারা ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয় এবং ওলি ও তার দলের নেতাদের সংবেদনহীন ও আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে তুলে ধরে। এর কয়েকদিন আগে ইন্দোনেশিয়ায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেযেখানে সংসদ সদস্যরা নিজেদের জন্য মাসিক ৩,০০০ ডলারের আবাসন ভাতা অনুমোদন করার পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েআর এক সরকারি গাড়ি এক ডেলিভারি কর্মীকে চাপা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো পরে সিদ্ধান্তটি বাতিল করলেও ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। নেপালেও একই অবস্থা। প্রযুক্তিজ্ঞানী নেপালি তরুণরাযাদের তিন প্রধান দলকমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল)নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী)সম্পর্কে আগেই নেতিবাচক ধারণা ছিলএবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তারা প্রকাশ্যে তা জানিয়ে দিল।

বছরের পর বছর ধরে পুরোনো দলের নেতারা এবং তাদের সন্তান-নাতিদের বিলাসবহুল জীবনযাপন জনসমালোচনার কেন্দ্রে ছিল। তাদের বিদেশ ভ্রমণদেশের বাইরে শিক্ষা গ্রহণদামি বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের ব্যবহার সবার নজরে পড়ে। যেসব নেতা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে কোনো পারিবারিক সম্পদ পাননিতারাই পরে ধনী হয়ে ওঠেন। এসব তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

যেখানে প্রচলিত সাংবাদিকতায় সংবাদদাতা ও পাঠকের মধ্যে সীমারেখা ছিলসামাজিক মাধ্যম সেই রেখা মুছে দিয়েছে। পাইলটরা বিমানচালনা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেনডাক্তাররা চিকিৎসা উদ্ভাবন নিয়ে বলেনরাঁধুনিরা খাবার বিষয়ক পডকাস্ট চালান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালে তরুণ কনটেন্ট নির্মাতাদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকার সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

হিট-অ্যান্ড-রান ঘটনার পর তিন দিনের মধ্যেই বংশপরম্পরাগত স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে ওঠে। সোমবার সেই ক্ষোভ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে কাঠমান্ডুইটাহারি ও নারায়ণঘাটে। জেন-জেড প্রতিবাদকারীরাযাদের অনেকেই স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরা ছাত্রছাত্রীরাস্তায় নামে। দিনের শেষে অন্তত ১৯ জন তরুণ পুলিশি দমনপীড়নে নিহত হয়যেখানে নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়েছিল।

দলের নেতারা হয়তো ভেবেছিলেনতরুণদের ক্ষোভ একদিনে প্রশমিত হবে। কিন্তু হলো উল্টোটা। প্রতিবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কাঠমান্ডু উপত্যকায় তিন প্রধান দলের সব প্রতীকী স্থাপনাদলীয় কার্যালয়গাড়িব্যক্তিগত সম্পদলক্ষ্যে পরিণত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শেরবাহাদুর দেউবাকে বুধানিলকণ্ঠার বাসা থেকে টেনে বের করা হয়। বিকেলের মধ্যে ওলি পদত্যাগ করেনতবে তার অবস্থান অজানা রয়ে যায়। একই অবস্থা আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডের ক্ষেত্রেও।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারো প্রতিবাদকারীযারা ওলির দলীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছিলবিজয় মিছিল শুরু করে। তবে হামলা থেমে থাকেনিদেশের সুপ্রিম কোর্টসিংহ দরবার (সরকারের আসন) ও সংসদ ভবনও আক্রান্ত হয়। এটি ছিল পুরোনো রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতীকী ভাঙন। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় নেপাল বদলে যায়।

এরপর কী?

কাঠমান্ডুর তরুণ ও জনপ্রিয় মেয়র বালেন শাহ সম্ভবত অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হবেন। ওলি পদত্যাগের পর যখন ভাঙচুর চলছিলশাহ প্রতিবাদকারীদের শান্ত হতে এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরে সহায়তা করতে আহ্বান জানান। তিনি জনসম্পদ ধ্বংস না করার অনুরোধ জানান এবং ঘোষণা করেন যে পরবর্তী নেতা তরুণ প্রজন্ম থেকে আসবেন।

এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীদের জন্য কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বড় কোনো ভূরাজনৈতিক খেলা তেমন নেইযদিও ভারতীয় গণমাধ্যম চীন ফ্যাক্টর’ তুলে ধরে এবং নেপালের কিছু ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদ আমেরিকান ফ্যাক্টর’ দেখেন। তাদের যুক্তি: ওলির সময়ে চীনের টিকটক খোলা থাকলেও আমেরিকার মেটা অ্যাপস বন্ধ হয়ে যায়। প্রো-চীন মহল মনে করে ওলি চীনের ঘনিষ্ঠতাই ভারত তাকে সরাতে চেয়েছে। আসলেওলিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব অনুমান প্রমাণশূন্য।

কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেছেবিশেষ করে সিপিএন-ইউএমএল সদর দপ্তরের আশেপাশেতা হলো অধিকাংশ প্রতিবাদকারী তরুণ। নেপালের তরুণরা মেধাবীনিজেদের ওপর আস্থা রাখে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবলভাবে চিন্তিত। প্রচলিত গণমাধ্যম যেমন সেকেলে মনে হয়তেমনি সেকেলে হয়ে পড়েছে পুরোনো ধাঁচের দলীয় নেতারা।

এখানে বড় শিক্ষা হলোতরুণ প্রজন্মের শক্তিকে কখনো খাটো করে দেখা উচিত নয়। তারা ভবিষ্যৎকে প্রবীণ প্রজন্মের চেয়ে অনেক ভালোভাবে দেখতে পায়। তারা স্পষ্টতই হতাশ সেই রাজনৈতিক শ্রেণির ওপরযারা ১৯৯০ সালের পর এবং বিশেষ করে ২০০৬ সালের গণআন্দোলনের পর নেপালকে ব্যর্থ করেছে।

এখন দুটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট সামনে আসতে পারে। প্রথমতদ্রুত সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা। দ্বিতীয়তবর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাযদিও তা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। নতুন নির্বাচন সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে রাখবেরাজনৈতিক অরাজকতা ও সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াবেএবং নাগরিকদের নতুন করে আশাবাদী করবে।

লেখক: অখিলেশ উপাধ্যায়কাঠমান্ডু পোস্টের সাবেক সম্পাদকবর্তমানে কাঠমান্ডু-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক IIDS-এর সিনিয়র ফেলো। তার বই ইন দ্য মার্জিনস অব এম্পায়ারস: এ হিস্ট্রি অব দ্য চিকেনস নেক’ ডিসেম্বর মাসে পেঙ্গুইন র‌্যান্ডম হাউস থেকে প্রকাশিত হবে। 

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ

নেপালের পুরোনো শাসনব্যবস্থার বিদায় কেন অনিবার্য হলো

১১:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সবকিছুর শুরু হয়েছিল একটি হিট-অ্যান্ড-রান দিয়ে। কোশি প্রদেশের অর্থমন্ত্রীর গাড়িযিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলির দলের নেতাএকজন ১১ বছরের মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। চালককে পরে আটক করা হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তি দেওয়া হয়। ওলি এটিকে ক্ষুদ্র ঘটনা আখ্যা দেন এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিষয়টি এভাবেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছিল দিনের আলোয়। হতভম্ব মেয়েটির ধীরে দাঁড়িয়ে উঠে দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জেনারেশন-জেড তরুণ প্রতিবাদকারীরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে। তারা ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয় এবং ওলি ও তার দলের নেতাদের সংবেদনহীন ও আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে তুলে ধরে। এর কয়েকদিন আগে ইন্দোনেশিয়ায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেযেখানে সংসদ সদস্যরা নিজেদের জন্য মাসিক ৩,০০০ ডলারের আবাসন ভাতা অনুমোদন করার পর ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েআর এক সরকারি গাড়ি এক ডেলিভারি কর্মীকে চাপা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো পরে সিদ্ধান্তটি বাতিল করলেও ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। নেপালেও একই অবস্থা। প্রযুক্তিজ্ঞানী নেপালি তরুণরাযাদের তিন প্রধান দলকমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউএমএল)নেপালি কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদী)সম্পর্কে আগেই নেতিবাচক ধারণা ছিলএবার ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তারা প্রকাশ্যে তা জানিয়ে দিল।

বছরের পর বছর ধরে পুরোনো দলের নেতারা এবং তাদের সন্তান-নাতিদের বিলাসবহুল জীবনযাপন জনসমালোচনার কেন্দ্রে ছিল। তাদের বিদেশ ভ্রমণদেশের বাইরে শিক্ষা গ্রহণদামি বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের ব্যবহার সবার নজরে পড়ে। যেসব নেতা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে কোনো পারিবারিক সম্পদ পাননিতারাই পরে ধনী হয়ে ওঠেন। এসব তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

যেখানে প্রচলিত সাংবাদিকতায় সংবাদদাতা ও পাঠকের মধ্যে সীমারেখা ছিলসামাজিক মাধ্যম সেই রেখা মুছে দিয়েছে। পাইলটরা বিমানচালনা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করেনডাক্তাররা চিকিৎসা উদ্ভাবন নিয়ে বলেনরাঁধুনিরা খাবার বিষয়ক পডকাস্ট চালান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালে তরুণ কনটেন্ট নির্মাতাদের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকার সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিলে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

হিট-অ্যান্ড-রান ঘটনার পর তিন দিনের মধ্যেই বংশপরম্পরাগত স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে ওঠে। সোমবার সেই ক্ষোভ রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে কাঠমান্ডুইটাহারি ও নারায়ণঘাটে। জেন-জেড প্রতিবাদকারীরাযাদের অনেকেই স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরা ছাত্রছাত্রীরাস্তায় নামে। দিনের শেষে অন্তত ১৯ জন তরুণ পুলিশি দমনপীড়নে নিহত হয়যেখানে নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়েছিল।

দলের নেতারা হয়তো ভেবেছিলেনতরুণদের ক্ষোভ একদিনে প্রশমিত হবে। কিন্তু হলো উল্টোটা। প্রতিবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কাঠমান্ডু উপত্যকায় তিন প্রধান দলের সব প্রতীকী স্থাপনাদলীয় কার্যালয়গাড়িব্যক্তিগত সম্পদলক্ষ্যে পরিণত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নেপালি কংগ্রেসের সভাপতি শেরবাহাদুর দেউবাকে বুধানিলকণ্ঠার বাসা থেকে টেনে বের করা হয়। বিকেলের মধ্যে ওলি পদত্যাগ করেনতবে তার অবস্থান অজানা রয়ে যায়। একই অবস্থা আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ডের ক্ষেত্রেও।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজারো প্রতিবাদকারীযারা ওলির দলীয় কার্যালয় ঘিরে রেখেছিলবিজয় মিছিল শুরু করে। তবে হামলা থেমে থাকেনিদেশের সুপ্রিম কোর্টসিংহ দরবার (সরকারের আসন) ও সংসদ ভবনও আক্রান্ত হয়। এটি ছিল পুরোনো রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতীকী ভাঙন। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় নেপাল বদলে যায়।

এরপর কী?

কাঠমান্ডুর তরুণ ও জনপ্রিয় মেয়র বালেন শাহ সম্ভবত অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হবেন। ওলি পদত্যাগের পর যখন ভাঙচুর চলছিলশাহ প্রতিবাদকারীদের শান্ত হতে এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরে সহায়তা করতে আহ্বান জানান। তিনি জনসম্পদ ধ্বংস না করার অনুরোধ জানান এবং ঘোষণা করেন যে পরবর্তী নেতা তরুণ প্রজন্ম থেকে আসবেন।

এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীদের জন্য কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বড় কোনো ভূরাজনৈতিক খেলা তেমন নেইযদিও ভারতীয় গণমাধ্যম চীন ফ্যাক্টর’ তুলে ধরে এবং নেপালের কিছু ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদ আমেরিকান ফ্যাক্টর’ দেখেন। তাদের যুক্তি: ওলির সময়ে চীনের টিকটক খোলা থাকলেও আমেরিকার মেটা অ্যাপস বন্ধ হয়ে যায়। প্রো-চীন মহল মনে করে ওলি চীনের ঘনিষ্ঠতাই ভারত তাকে সরাতে চেয়েছে। আসলেওলিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এসব অনুমান প্রমাণশূন্য।

কিন্তু বাস্তবে যা দেখা গেছেবিশেষ করে সিপিএন-ইউএমএল সদর দপ্তরের আশেপাশেতা হলো অধিকাংশ প্রতিবাদকারী তরুণ। নেপালের তরুণরা মেধাবীনিজেদের ওপর আস্থা রাখে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রবলভাবে চিন্তিত। প্রচলিত গণমাধ্যম যেমন সেকেলে মনে হয়তেমনি সেকেলে হয়ে পড়েছে পুরোনো ধাঁচের দলীয় নেতারা।

এখানে বড় শিক্ষা হলোতরুণ প্রজন্মের শক্তিকে কখনো খাটো করে দেখা উচিত নয়। তারা ভবিষ্যৎকে প্রবীণ প্রজন্মের চেয়ে অনেক ভালোভাবে দেখতে পায়। তারা স্পষ্টতই হতাশ সেই রাজনৈতিক শ্রেণির ওপরযারা ১৯৯০ সালের পর এবং বিশেষ করে ২০০৬ সালের গণআন্দোলনের পর নেপালকে ব্যর্থ করেছে।

এখন দুটি সম্ভাব্য দৃশ্যপট সামনে আসতে পারে। প্রথমতদ্রুত সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা। দ্বিতীয়তবর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাযদিও তা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। নতুন নির্বাচন সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে টিকিয়ে রাখবেরাজনৈতিক অরাজকতা ও সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াবেএবং নাগরিকদের নতুন করে আশাবাদী করবে।

লেখক: অখিলেশ উপাধ্যায়কাঠমান্ডু পোস্টের সাবেক সম্পাদকবর্তমানে কাঠমান্ডু-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক IIDS-এর সিনিয়র ফেলো। তার বই ইন দ্য মার্জিনস অব এম্পায়ারস: এ হিস্ট্রি অব দ্য চিকেনস নেক’ ডিসেম্বর মাসে পেঙ্গুইন র‌্যান্ডম হাউস থেকে প্রকাশিত হবে।