০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ড্যান ব্রাউনের নতুন বই নিয়ে বিশ্লেষণ

নতুন বইয়ের সূচনা

ড্যান ব্রাউনের সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’-এর প্রথম পাতাতেই ঘোষণা করা হয়েছে—“সব শিল্পকর্ম, প্রতীক, নথি বাস্তব”, “সব পরীক্ষাই বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলে যায়”, এবং “সব সংগঠন সত্যি বিদ্যমান।” পাঠকদের জন্য এটি রোমাঞ্চকর হলেও ভাষার দিক থেকে খানিকটা বিভ্রান্তিকর।

তবে পাঠকরা জানেন, এটি ড্যান ব্রাউনের বই। গত দুই দশক ধরে তিনি এমন গল্প লিখে আসছেন যেখানে বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রণ থাকে। এই কৌশল তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ও বিপুল বিক্রি এনে দিয়েছে। তার লেখা বই যেমন ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’, ‘অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমন্স’ বা ‘ইনফার্নো’ ইতোমধ্যেই ২৫ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং চলচ্চিত্রে রূপ নিয়েছে।

সমালোচনা ও জনপ্রিয়তা

ব্রাউনের লেখনীর সমালোচনা কম হয়নি। অনেকেই তার বাক্যবন্ধকে দুর্বল বলে বিদ্রূপ করেছেন—যেমন, “তার চোখ সাদা হয়ে গেল, ঠিক যেন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত একটি হাঙরের মতো।” এমনকি তার নাম ব্যবহার করে প্যারোডি, কৌতুক ও অনলাইন ‘সিক্যুয়েল জেনারেটর’ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।

তবু কোটি কোটি পাঠক তাকে গুরুত্ব সহকারে পড়েন। যদিও তার গল্পে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ থাকে, পাঠকরা বই পড়ার পাশাপাশি গুগলে সার্চ দিয়ে তথ্যে মিলিয়ে দেখতে পছন্দ করেন।

নতুন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট

এই বইয়েও মূল চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন—বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় প্রতীকের বিশেষজ্ঞ। তিনি প্রাগে আছেন তার নতুন প্রেমিকা, একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত ‘নোয়েটিক বিজ্ঞানী’র সঙ্গে। গল্প শুরু হয় ককটেল, চেতনার রহস্য ও দার্শনিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে।

প্রথম দিকে পরিবেশ বেশ শান্ত, তবে অল্প সময়েই উত্তেজনা বাড়ে। ল্যাংডন প্রেমিকাকে হারান, নতুন শত্রুর মুখোমুখি হন এবং নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর আসে পুলিশের ধাওয়া, অপহরণ, ধাঁধা, খ্রিস্টীয় প্রতীক, গোপন সংগঠন এবং জটিল সংক্ষিপ্ত শব্দের বন্যা—CIA, ESP, SUV, WTF!

মূল ধারণা

ব্রাউনের প্রতিটি বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে একটি বড় আইডিয়া। ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এ ছিল যিশুর বিবাহের গোপন রহস্য। এবার তিনি এনেছেন চেতনার প্রকৃত স্বভাব নিয়ে আলোচনা। বইয়ের দাবি—মানব মস্তিষ্ক শুধু বাস্তবতা পর্যবেক্ষণই করে না, কোনো না কোনোভাবে সেটিকে তৈরি করে।

এটি নতুন কিছু নয়; বৌদ্ধ দর্শন, যিশুর শিক্ষা এবং আধুনিক মোটিভেশনাল বইতেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। বইয়ের চরিত্ররা উদ্ধৃতি টেনে আনেন—“বুদ্ধ: আমাদের চিন্তাতেই সৃষ্টি হয় পৃথিবী” বা “যিশু: প্রার্থনায় যা চাইবে, তা পাবে।” এমনকি ব্যবসায়িক লেখক রবিন শর্মার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাগের বর্ণনা

গল্পের গতির সঙ্গে সঙ্গে পাঠককে প্রাগ শহরের ভেতর দিয়ে ঘোরানো হয়। প্রতিটি স্থাপনার সঠিক ইতিহাস, নাম ও বিবরণ দেয়া হয়েছে—যেমন ১৮৯১ সালে নির্মিত পেত্রিন টাওয়ার বা প্রাগের জ্যোতির্বিদ্যা টাওয়ার। বই পড়তে পড়তে মনে হয়, এটি যেন অ্যাকশন থ্রিলারের সঙ্গে একটি ভ্রমণ গাইডও।

সমালোচক ও পাঠকের টানাপোড়েন

সমালোচকরা নিশ্চয়ই বইটিকে দুর্বল বলবেন। কিন্তু ব্রাউনের উপন্যাসগুলো এক ধরনের শিক্ষামূলক আকর্ষণ রাখে। তিনি জটিল বিষয় যেমন ইতালীয় শিল্প, খ্রিস্টীয় ইতিহাস বা ল্যাটিন শব্দকে সহজ করে ব্যাখ্যা করেন।

‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এর প্রথম পর্যালোচনাগুলো ছিল প্রশংসায় ভরা। এখন হয়তো বিশ্ব আরো কঠিন ও সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠেছে, কিন্তু এই সময়ে ড্যান ব্রাউনের পুরোনো নায়ক রবার্ট ল্যাংডনের সঙ্গে সময় কাটানো অনেক পাঠকের কাছে সান্ত্বনার মতো।

ড্যান ব্রাউনের নতুন বই নিয়ে বিশ্লেষণ

০৬:২৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন বইয়ের সূচনা

ড্যান ব্রাউনের সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য সিক্রেট অব সিক্রেটস’-এর প্রথম পাতাতেই ঘোষণা করা হয়েছে—“সব শিল্পকর্ম, প্রতীক, নথি বাস্তব”, “সব পরীক্ষাই বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলে যায়”, এবং “সব সংগঠন সত্যি বিদ্যমান।” পাঠকদের জন্য এটি রোমাঞ্চকর হলেও ভাষার দিক থেকে খানিকটা বিভ্রান্তিকর।

তবে পাঠকরা জানেন, এটি ড্যান ব্রাউনের বই। গত দুই দশক ধরে তিনি এমন গল্প লিখে আসছেন যেখানে বাস্তব ও কল্পনার মিশ্রণ থাকে। এই কৌশল তাকে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ও বিপুল বিক্রি এনে দিয়েছে। তার লেখা বই যেমন ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’, ‘অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমন্স’ বা ‘ইনফার্নো’ ইতোমধ্যেই ২৫ কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, ৫৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং চলচ্চিত্রে রূপ নিয়েছে।

সমালোচনা ও জনপ্রিয়তা

ব্রাউনের লেখনীর সমালোচনা কম হয়নি। অনেকেই তার বাক্যবন্ধকে দুর্বল বলে বিদ্রূপ করেছেন—যেমন, “তার চোখ সাদা হয়ে গেল, ঠিক যেন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত একটি হাঙরের মতো।” এমনকি তার নাম ব্যবহার করে প্যারোডি, কৌতুক ও অনলাইন ‘সিক্যুয়েল জেনারেটর’ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে।

তবু কোটি কোটি পাঠক তাকে গুরুত্ব সহকারে পড়েন। যদিও তার গল্পে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ থাকে, পাঠকরা বই পড়ার পাশাপাশি গুগলে সার্চ দিয়ে তথ্যে মিলিয়ে দেখতে পছন্দ করেন।

নতুন উপন্যাসের প্রেক্ষাপট

এই বইয়েও মূল চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন—বিশ্বখ্যাত ধর্মীয় প্রতীকের বিশেষজ্ঞ। তিনি প্রাগে আছেন তার নতুন প্রেমিকা, একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত ‘নোয়েটিক বিজ্ঞানী’র সঙ্গে। গল্প শুরু হয় ককটেল, চেতনার রহস্য ও দার্শনিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে।

প্রথম দিকে পরিবেশ বেশ শান্ত, তবে অল্প সময়েই উত্তেজনা বাড়ে। ল্যাংডন প্রেমিকাকে হারান, নতুন শত্রুর মুখোমুখি হন এবং নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর আসে পুলিশের ধাওয়া, অপহরণ, ধাঁধা, খ্রিস্টীয় প্রতীক, গোপন সংগঠন এবং জটিল সংক্ষিপ্ত শব্দের বন্যা—CIA, ESP, SUV, WTF!

মূল ধারণা

ব্রাউনের প্রতিটি বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে একটি বড় আইডিয়া। ‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এ ছিল যিশুর বিবাহের গোপন রহস্য। এবার তিনি এনেছেন চেতনার প্রকৃত স্বভাব নিয়ে আলোচনা। বইয়ের দাবি—মানব মস্তিষ্ক শুধু বাস্তবতা পর্যবেক্ষণই করে না, কোনো না কোনোভাবে সেটিকে তৈরি করে।

এটি নতুন কিছু নয়; বৌদ্ধ দর্শন, যিশুর শিক্ষা এবং আধুনিক মোটিভেশনাল বইতেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। বইয়ের চরিত্ররা উদ্ধৃতি টেনে আনেন—“বুদ্ধ: আমাদের চিন্তাতেই সৃষ্টি হয় পৃথিবী” বা “যিশু: প্রার্থনায় যা চাইবে, তা পাবে।” এমনকি ব্যবসায়িক লেখক রবিন শর্মার নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাগের বর্ণনা

গল্পের গতির সঙ্গে সঙ্গে পাঠককে প্রাগ শহরের ভেতর দিয়ে ঘোরানো হয়। প্রতিটি স্থাপনার সঠিক ইতিহাস, নাম ও বিবরণ দেয়া হয়েছে—যেমন ১৮৯১ সালে নির্মিত পেত্রিন টাওয়ার বা প্রাগের জ্যোতির্বিদ্যা টাওয়ার। বই পড়তে পড়তে মনে হয়, এটি যেন অ্যাকশন থ্রিলারের সঙ্গে একটি ভ্রমণ গাইডও।

সমালোচক ও পাঠকের টানাপোড়েন

সমালোচকরা নিশ্চয়ই বইটিকে দুর্বল বলবেন। কিন্তু ব্রাউনের উপন্যাসগুলো এক ধরনের শিক্ষামূলক আকর্ষণ রাখে। তিনি জটিল বিষয় যেমন ইতালীয় শিল্প, খ্রিস্টীয় ইতিহাস বা ল্যাটিন শব্দকে সহজ করে ব্যাখ্যা করেন।

‘দ্য দা ভিঞ্চি কোড’-এর প্রথম পর্যালোচনাগুলো ছিল প্রশংসায় ভরা। এখন হয়তো বিশ্ব আরো কঠিন ও সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠেছে, কিন্তু এই সময়ে ড্যান ব্রাউনের পুরোনো নায়ক রবার্ট ল্যাংডনের সঙ্গে সময় কাটানো অনেক পাঠকের কাছে সান্ত্বনার মতো।