০৫:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
বিহার নির্বাচনে নতুন অধ্যায়: রঙিন ছবি সহ ইভিএম, ১৭টি সংস্কার উদ্যোগে নজির স্থাপন এইবার তোমরা তোমাদের যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়বে”: ভারতকে যুদ্ধবাদের প্রতি খোয়াজা আসিফের হুঁশিয়ারি নাটোরে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে তিনজন নিহত নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ভারতীয় নারীদের অপ্রতিরোধ্য জয়রথ: পাকিস্তানকে ৮৮ রানে হারিয়ে টানা ১২তম সাফল্য নির্বাচনী জোট ও মনোনয়নের কৌশল নিয়ে যা বললেন তারেক রহমান ফ্যাশনে ফেরত পাম্প ও হিল: বসন্তে জুতোর মঞ্চে এলিগ্যান্সের প্রত্যাবর্তন রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩৬) বিদ্যুৎচালিত গাড়ির দৌড়ে চীনের জয়যাত্রা: প্রযুক্তির আধিপত্যে কাঁপছে ওয়াশিংটন আমেরিকায় কাজের জন্য ১০০,০০০ ডলারের ফি: ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বাধা

নরেন্দ্র মোদি’র নিবন্ধঃ দেশসেবার ১০০ বছর

বিজয়াদশমীর পবিত্র দিনে একশো বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এটি পুরোপুরি নতুন কোনো সৃষ্টির সূচনা ছিল নাবরং ভারতের শাশ্বত জাতীয় চেতনারই এক নতুন প্রকাশযে চেতনা সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়ে যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। আমাদের সময়ে সংঘ সেই শাশ্বত জাতীয় চেতনারই জীবন্ত প্রতিমূর্তি। আমাদের প্রজন্মের স্বয়ংসেবকদের সৌভাগ্য যে আমরা সংঘের শতবর্ষ প্রত্যক্ষ করছি।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্তেজাতি ও জনগণের সেবার প্রতিজ্ঞায় অবিচল অসংখ্য স্বয়ংসেবককে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। সংঘের প্রতিষ্ঠাতাআমাদের প্রেরণার আদর্শ পরম পূজ্য ড. হেডগেওয়ারকে শ্রদ্ধাভরে প্রণাম করি। এই দীপ্তিময় শতবর্ষ-পথচলার স্মারক হিসেবে ভারত সরকার বিশেষ ডাকটিকিট ও স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেছে।

যেমন মহাস্রোতের তীরে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটেছেতেমনি সংঘের প্রভাব থেকে অসংখ্য জীবনের বিকাশ হয়েছে। নদী তার জলে যে ভূমিকে স্পর্শ করেতাকে সমৃদ্ধ করে তোলেসংঘও তেমনি আমাদের জাতির প্রতিটি অংশসমাজের প্রতিটি পরিমণ্ডলকে সজীব করেছে। যেমন কোনো নদী নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে বিস্তার লাভ করেসংঘের যাত্রাপথেও তেমনই ঘটেছে। শিক্ষাকৃষিসামাজিক কল্যাণজনজাতি কল্যাণনারীশক্তির বিকাশজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংঘের বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য সত্ত্বেও সবার মধ্যেই একটিই মনোবল ও একটিই সংকল্প—‘জাতি সর্বাগ্রে

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংঘ দেশগঠনে ব্রতী। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংঘ বেছে নিয়েছিল চরিত্রগঠনের পথব্যক্তি নির্মাণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ। এই দর্শন বাস্তবায়নে সংঘ রচনা করেছে সহজঅনন্য ও স্থায়ী একটি পদ্ধতিপ্রতিদিনের শাখা। শাখা হলো অনুপ্রেরণার স্থানযেখানে প্রত্যেক স্বয়ংসেবক আমি” থেকে আমরা”—এই যাত্রায় পদার্পণ করে এবং ব্যক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়।

Dr Keshav Hedgewar Death Anniversary: Lesser-Known Facts About RSS Founder  | Lifestyle News - News18

শতবর্ষের যে ভিত্তিতা দাঁড়িয়ে আছে এক মহান জাতীয় সাধনার ওপরব্যক্তির রূপান্তর ও শাখাভিত্তিক বাস্তব কর্মপদ্ধতির ওপর। এই ধারায় সংঘ লক্ষ লক্ষ স্বয়ংসেবককে গড়ে তুলেছেযারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজও নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত থেকেই সংঘ জাতির অগ্রাধিকারকেই নিজের অগ্রাধিকার মেনে এসেছে। পরম পূজ্য ড. হেডগেওয়ারসহ অনেক স্বয়ংসেবক স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেনড. হেডগেওয়ার নিজেও বহুবার কারাবরণ করেছেন। স্বাধীনতা লাভের পরও সংঘ জাতির কাজে অব্যাহতভাবে নিবেদিত থাকে।

এ পথচলায় ষড়যন্ত্র হয়েছেসংঘকে চেপে ধরার চেষ্টাও হয়েছে। দ্বিতীয় সরসংঘচালক পরম পূজ্য গুরুজিকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করা হয়। কিন্তু সংঘ কখনো তিক্ততাকে হৃদয়ে জায়গা দেয়নিকারণ স্বয়ংসেবকদের বিশ্বাস—“আমরা সমাজ থেকে আলাদা নইসমাজ আমাদেরই সমষ্টি।” সমাজের সঙ্গে এই একাত্মতা এবং সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা স্বয়ংসেবকদের মনকে দৃঢ় করেছে এবং কঠিনতম সংকটেও সমাজের প্রতি সংবেদনশীল রেখেছে।

দেশপ্রেম ও সেবার সমার্থক নামসংঘ। দেশভাগের ভয়াবহতায় লক্ষ লক্ষ পরিবার যখন গৃহহীনতখন শরণার্থীদের সেবায় স্বয়ংসেবকেরা এগিয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্টপ্রতিটি দুর্যোগে সীমিত সম্পদ নিয়েই তারা প্রথম সারিতে থেকে কাজ করেছে। তাদের কাছে এটি কেবল ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া নয়জাতির আত্মাকে শক্তিশালী করার কাজ। নিজে কষ্ট সহ্য করে অন্যের বেদনা লাঘব করাএটাই প্রত্যেক স্বয়ংসেবকের ব্রত।

India to have more people than China by mid-2023, UN says

শতবর্ষের যাত্রায় সমাজের নানা স্তরে আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছে সংঘ। দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তারা কাজ করেছে। বহু দশক ধরে জনজাতি সমাজের ঐতিহ্যরীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও লালনে নিবেদিত থেকেছে। সেবা ভারতীবিদ্যা ভারতীএকল বিদ্যালয় এবং বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আজ জনজাতি সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে শক্ত ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাতিভেদঅস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক ব্যাধি হিন্দু সমাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। ড. হেডগেওয়ারের সময় থেকে আজ পর্যন্ত সংঘের প্রতিটি সদস্যপ্রতিটি সরসংঘচালক এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন। পরম পূজ্য গুরুজি’ ক্রমাগত উচ্চারণ করেছেন—‘না হিন্দু পতিতো ভবেত’—অর্থাৎ কোনো হিন্দুই পতিত হতে পারে না। পূজ্য বালাসাহেব দেওরাস ঘোষণা করেছিলেন—“অস্পৃশ্যতা যদি ভুল না হয়তবে পৃথিবীতে আর কোনো ভুল নেই।” পরে পূজ্য রাজ্জু ভাইয়া ও পূজ্য সুদর্শনও এই বার্তা বহন করেছেন। বর্তমান সরসংঘচালক সম্মানীয় মোহন ভাগবত সবাইকে এক কূপএক মন্দিরএক শ্মশানের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যের স্পষ্ট ডাক দিয়েছেন।

সংঘ যখন শতবর্ষ আগে প্রতিষ্ঠিত হয়তখনকার প্রয়োজন ও সংগ্রাম আজকের থেকে ভিন্ন ছিল। আজ ভারত যখন উন্নত দেশের পথে এগোচ্ছেতখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছেবিদেশনির্ভরতাআমাদের ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্রঅনুপ্রবেশের ফলে জনমিতির পরিবর্তন ইত্যাদি। আমাদের সরকার এগুলোর মোকাবিলায় সক্রিয়। আনন্দের বিষয়রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘও এদের মোকাবিলায় একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রস্তুত করেছে।

Republic Day 2025: Know the difference between hoisting the flag on  Independence Day and unfurling it on R-Day - The Economic Times

সংঘের পঞ্চ পরিবর্তন’ আজকের চ্যালেঞ্জ জয়ের পথ নির্দেশ করে

১) স্ব-বোধ: ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্তিঐতিহ্যের গৌরবে অহংকার এবং স্বদেশি নীতির অগ্রগতি।
২) সামাজিক সমরসতা: সমাজের প্রান্তিকদের অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য। আজ অনুপ্রবেশজনিত জনমিতিক অসামঞ্জস্য আমাদের সমরসতাকে বড় চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। এটি সমাধানে জাতি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জনমিতি মিশন ঘোষণা করেছে।
৩) পরিবার প্রবোধন: পরিবার নামের যে প্রতিষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির ভিত্তিতার মূল্যবোধকে দৃঢ় করা।
৪) নাগরিক শিষ্টাচার: প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে নাগরিকবোধ ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা।
৫) পরিবেশ: আগামীর প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় পরিবেশ রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

এই সংকল্পে পরিচালিত হয়ে সংঘ এখন প্রবেশ করছে তার পরবর্তী শতকে। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার অভিযানে সংঘের অবদান হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবারও প্রতিটি স্বয়ংসেবককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

(বুধবারনয়া দিল্লিতে আরএসএস-এর শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভাষণের ভিত্তিতে এই নিবন্ধটি রচিত)

জনপ্রিয় সংবাদ

বিহার নির্বাচনে নতুন অধ্যায়: রঙিন ছবি সহ ইভিএম, ১৭টি সংস্কার উদ্যোগে নজির স্থাপন

নরেন্দ্র মোদি’র নিবন্ধঃ দেশসেবার ১০০ বছর

০৯:১২:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

বিজয়াদশমীর পবিত্র দিনে একশো বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এটি পুরোপুরি নতুন কোনো সৃষ্টির সূচনা ছিল নাবরং ভারতের শাশ্বত জাতীয় চেতনারই এক নতুন প্রকাশযে চেতনা সময়ে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়ে যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। আমাদের সময়ে সংঘ সেই শাশ্বত জাতীয় চেতনারই জীবন্ত প্রতিমূর্তি। আমাদের প্রজন্মের স্বয়ংসেবকদের সৌভাগ্য যে আমরা সংঘের শতবর্ষ প্রত্যক্ষ করছি।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্তেজাতি ও জনগণের সেবার প্রতিজ্ঞায় অবিচল অসংখ্য স্বয়ংসেবককে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। সংঘের প্রতিষ্ঠাতাআমাদের প্রেরণার আদর্শ পরম পূজ্য ড. হেডগেওয়ারকে শ্রদ্ধাভরে প্রণাম করি। এই দীপ্তিময় শতবর্ষ-পথচলার স্মারক হিসেবে ভারত সরকার বিশেষ ডাকটিকিট ও স্মারক মুদ্রা প্রকাশ করেছে।

যেমন মহাস্রোতের তীরে মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটেছেতেমনি সংঘের প্রভাব থেকে অসংখ্য জীবনের বিকাশ হয়েছে। নদী তার জলে যে ভূমিকে স্পর্শ করেতাকে সমৃদ্ধ করে তোলেসংঘও তেমনি আমাদের জাতির প্রতিটি অংশসমাজের প্রতিটি পরিমণ্ডলকে সজীব করেছে। যেমন কোনো নদী নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে বিস্তার লাভ করেসংঘের যাত্রাপথেও তেমনই ঘটেছে। শিক্ষাকৃষিসামাজিক কল্যাণজনজাতি কল্যাণনারীশক্তির বিকাশজীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংঘের বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে। কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য সত্ত্বেও সবার মধ্যেই একটিই মনোবল ও একটিই সংকল্প—‘জাতি সর্বাগ্রে

প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংঘ দেশগঠনে ব্রতী। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংঘ বেছে নিয়েছিল চরিত্রগঠনের পথব্যক্তি নির্মাণের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ। এই দর্শন বাস্তবায়নে সংঘ রচনা করেছে সহজঅনন্য ও স্থায়ী একটি পদ্ধতিপ্রতিদিনের শাখা। শাখা হলো অনুপ্রেরণার স্থানযেখানে প্রত্যেক স্বয়ংসেবক আমি” থেকে আমরা”—এই যাত্রায় পদার্পণ করে এবং ব্যক্তিগত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়।

Dr Keshav Hedgewar Death Anniversary: Lesser-Known Facts About RSS Founder  | Lifestyle News - News18

শতবর্ষের যে ভিত্তিতা দাঁড়িয়ে আছে এক মহান জাতীয় সাধনার ওপরব্যক্তির রূপান্তর ও শাখাভিত্তিক বাস্তব কর্মপদ্ধতির ওপর। এই ধারায় সংঘ লক্ষ লক্ষ স্বয়ংসেবককে গড়ে তুলেছেযারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আজও নিরন্তর কাজ করে চলেছে।

প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত থেকেই সংঘ জাতির অগ্রাধিকারকেই নিজের অগ্রাধিকার মেনে এসেছে। পরম পূজ্য ড. হেডগেওয়ারসহ অনেক স্বয়ংসেবক স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেনড. হেডগেওয়ার নিজেও বহুবার কারাবরণ করেছেন। স্বাধীনতা লাভের পরও সংঘ জাতির কাজে অব্যাহতভাবে নিবেদিত থাকে।

এ পথচলায় ষড়যন্ত্র হয়েছেসংঘকে চেপে ধরার চেষ্টাও হয়েছে। দ্বিতীয় সরসংঘচালক পরম পূজ্য গুরুজিকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাবন্দি করা হয়। কিন্তু সংঘ কখনো তিক্ততাকে হৃদয়ে জায়গা দেয়নিকারণ স্বয়ংসেবকদের বিশ্বাস—“আমরা সমাজ থেকে আলাদা নইসমাজ আমাদেরই সমষ্টি।” সমাজের সঙ্গে এই একাত্মতা এবং সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা স্বয়ংসেবকদের মনকে দৃঢ় করেছে এবং কঠিনতম সংকটেও সমাজের প্রতি সংবেদনশীল রেখেছে।

দেশপ্রেম ও সেবার সমার্থক নামসংঘ। দেশভাগের ভয়াবহতায় লক্ষ লক্ষ পরিবার যখন গৃহহীনতখন শরণার্থীদের সেবায় স্বয়ংসেবকেরা এগিয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্টপ্রতিটি দুর্যোগে সীমিত সম্পদ নিয়েই তারা প্রথম সারিতে থেকে কাজ করেছে। তাদের কাছে এটি কেবল ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া নয়জাতির আত্মাকে শক্তিশালী করার কাজ। নিজে কষ্ট সহ্য করে অন্যের বেদনা লাঘব করাএটাই প্রত্যেক স্বয়ংসেবকের ব্রত।

India to have more people than China by mid-2023, UN says

শতবর্ষের যাত্রায় সমাজের নানা স্তরে আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছে সংঘ। দেশের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তারা কাজ করেছে। বহু দশক ধরে জনজাতি সমাজের ঐতিহ্যরীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও লালনে নিবেদিত থেকেছে। সেবা ভারতীবিদ্যা ভারতীএকল বিদ্যালয় এবং বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আজ জনজাতি সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে শক্ত ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাতিভেদঅস্পৃশ্যতার মতো সামাজিক ব্যাধি হিন্দু সমাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। ড. হেডগেওয়ারের সময় থেকে আজ পর্যন্ত সংঘের প্রতিটি সদস্যপ্রতিটি সরসংঘচালক এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন। পরম পূজ্য গুরুজি’ ক্রমাগত উচ্চারণ করেছেন—‘না হিন্দু পতিতো ভবেত’—অর্থাৎ কোনো হিন্দুই পতিত হতে পারে না। পূজ্য বালাসাহেব দেওরাস ঘোষণা করেছিলেন—“অস্পৃশ্যতা যদি ভুল না হয়তবে পৃথিবীতে আর কোনো ভুল নেই।” পরে পূজ্য রাজ্জু ভাইয়া ও পূজ্য সুদর্শনও এই বার্তা বহন করেছেন। বর্তমান সরসংঘচালক সম্মানীয় মোহন ভাগবত সবাইকে এক কূপএক মন্দিরএক শ্মশানের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যের স্পষ্ট ডাক দিয়েছেন।

সংঘ যখন শতবর্ষ আগে প্রতিষ্ঠিত হয়তখনকার প্রয়োজন ও সংগ্রাম আজকের থেকে ভিন্ন ছিল। আজ ভারত যখন উন্নত দেশের পথে এগোচ্ছেতখন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আসছেবিদেশনির্ভরতাআমাদের ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্রঅনুপ্রবেশের ফলে জনমিতির পরিবর্তন ইত্যাদি। আমাদের সরকার এগুলোর মোকাবিলায় সক্রিয়। আনন্দের বিষয়রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘও এদের মোকাবিলায় একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রস্তুত করেছে।

Republic Day 2025: Know the difference between hoisting the flag on  Independence Day and unfurling it on R-Day - The Economic Times

সংঘের পঞ্চ পরিবর্তন’ আজকের চ্যালেঞ্জ জয়ের পথ নির্দেশ করে

১) স্ব-বোধ: ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্তিঐতিহ্যের গৌরবে অহংকার এবং স্বদেশি নীতির অগ্রগতি।
২) সামাজিক সমরসতা: সমাজের প্রান্তিকদের অগ্রাধিকার দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য। আজ অনুপ্রবেশজনিত জনমিতিক অসামঞ্জস্য আমাদের সমরসতাকে বড় চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। এটি সমাধানে জাতি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জনমিতি মিশন ঘোষণা করেছে।
৩) পরিবার প্রবোধন: পরিবার নামের যে প্রতিষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির ভিত্তিতার মূল্যবোধকে দৃঢ় করা।
৪) নাগরিক শিষ্টাচার: প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে নাগরিকবোধ ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা।
৫) পরিবেশ: আগামীর প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় পরিবেশ রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।

এই সংকল্পে পরিচালিত হয়ে সংঘ এখন প্রবেশ করছে তার পরবর্তী শতকে। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার অভিযানে সংঘের অবদান হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবারও প্রতিটি স্বয়ংসেবককে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

(বুধবারনয়া দিল্লিতে আরএসএস-এর শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভাষণের ভিত্তিতে এই নিবন্ধটি রচিত)