১২:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
ক্যাটসআই × 5 গাম: ‘ফাইনাল ড্রপ’-এ পপ কালচারের কামব্যাক কামড় আজ পার্থ থেকে ডব্লিউডব্লিউই ক্রাউন জুয়েল—দেখবেন কীভাবে গঙ্গামতি নির্ধারিত বন: কুয়াকাটার সবুজ ঢেউ ও হারিয়ে যাওয়া প্রাণের আর্তনাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৪) দিল্লিতে এ মৌসুমের প্রথম শীতল রাত নেমেছে- ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’: প্রচলিত ভোটব্যবস্থা শক্তিশালী করার আহ্বানে বিএনপি নেতারা বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২৫ ট্রাম্পের বয়স ৭৯ হলেও হৃদযন্ত্র ৬৫ বছরের মানুষের মতো, চিকিৎসকের প্রতিবেদন দ্রুত পদক্ষেপ ও সৌভাগ্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ড মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতি অর্ধেকে নেমেছে জাতীয় পার্টির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের হামলার অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া

 নতুন ১০০% শুল্ক ঘোষণার পরও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের দরজা খোলা রেখেছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এক বহুপাক্ষিক ফোরামের আড়ালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক এখনও হতে পারে। একই দিনে তিনি ঘোষণা দেন, বিদ্যমান করের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে সব চীনা আমদানিতে আরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে—যা তাঁর কড়া বাণিজ্য অবস্থানকে আরও জোরালো করে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা

ট্রাম্প বলেন, “আমি বৈঠক বাতিল করিনি, কিন্তু নিশ্চিতও না যে সেটা হবে। যাই হোক, আমি সেখানে থাকব। তাই ধরে নেওয়া যায়, আমাদের বৈঠক হতে পারে।” তিনি বেইজিংয়ের নতুন দুর্লভ খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন “বিশ্বের ওপর এমন কিছু চাপিয়েছে, যা অন্যরা করবে না—এটা ছিল চমকে দেওয়ার মতো।”

শুল্কের সময়সূচি ও নমনীয়তার ইঙ্গিত

ট্রাম্প জানান, তাঁর নতুন শুল্ক পরিকল্পনা পরিবর্তিতও হতে পারে এবং “আমদানি–রপ্তানির পুরো ধারণা” অনেকেরই পুরো বোঝা নেই। তাঁর ভাষায়, “দেখা যাক কী হয়। তাই আমি ১ নভেম্বর তারিখটা রেখেছি—তার মধ্যে কী ঘটে দেখি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা: শুল্ক ও সফটওয়্যার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ

এর কিছু ঘণ্টা আগে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে (বা চীনের আরও পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে তার আগেও) চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে—“বর্তমানে যা দিচ্ছে, তার ওপর অতিরিক্ত হিসেবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, ওই দিন থেকেই “সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের ওপর” রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। চীনের “শত্রুভাবাপন্ন” বাণিজ্য আচরণকেই তিনি এর জন্য দায়ী করেন এবং এই পদক্ষেপগুলোকে “আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অভূতপূর্ব” ও “নৈতিকতার পরিপন্থী” বলে আখ্যা দেন।

China says 'door open' to trade talks after Trump signals tariffs will fall  - World - Business Recorder

বৈঠক ‘বাতিলের ইঙ্গিত’ ও ‘বৃহৎ’ শুল্কের হুমকি

দিনের শুরুতে ট্রাম্প শির সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিলের ইঙ্গিত দিয়ে “বৃহৎ” শুল্কের হুমকি দেন। তাঁর দাবি, বিশ্বের বহু দেশ চীনের কাছ থেকে “চিঠি” পেয়েছে—দুর্লভ খনিজ সংশ্লিষ্ট উৎপাদনের প্রতিটি উপাদানে এবং “তাদের মাথায় যা আসে” তার ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপের ইচ্ছা জানিয়ে। তাঁর দীর্ঘ পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, চীনের এই পদক্ষেপ বাজারে “জট” সৃষ্টি করবে এবং বহু খাতে বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যাহত করবে। তিনি এটিকে “পার্থিব বিশ্বকে বন্দি করে রাখা”র প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করে “অশুভ ও শত্রুভাবাপন্ন” বলেন। ট্রাম্প জানান, তিনি দুই সপ্তাহ পর দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে শির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল—এখন তা নাও হতে পারে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের হুমকিতে ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ শতাংশ পড়ে যায়—এপ্রিলের পর সবচেয়ে খারাপ দিন। ডাও জোন্স ১.৯ শতাংশ এবং নাসডাক ৩.৬ শতাংশ হ্রাস পায়।

চীনের নতুন রপ্তানি বিধিনিষেধ

বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী চীন দুর্লভ খনিজের একাধিক পরিশোধন প্রযুক্তি রপ্তানি সীমিত করেছে এবং সতর্ক করেছে—চীনা উপকরণ ব্যবহারকারী বিদেশি উৎপাদকদেরও চীনের নিয়ম মানতে হবে।

মন্ত্রীসভা বৈঠকে ট্রাম্পের মন্তব্য

হোয়াইট হাউসের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণে আমদানি করি—হয়তো সেটা বন্ধই করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “শির সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। এর একটি হলো সয়াবিন।” প্রথম মেয়াদে তিনি নাকি “প্রতি দুই সপ্তাহে” শিকে ফোন করে বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি—বিশেষত সয়াবিন ক্রয়—মানা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতেন। তাঁর অভিযোগ, উত্তরসূরি জো বাইডেন ২০২০ সালের ‘ফেজ ওয়ান’ চুক্তির বাস্তবায়ন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

Event Recap: Virtual Offering of The Future of U.S.-China Conference -  Interactive Discussion with Ryan Hass | Asia Society

নীতিবিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জন এল. থরন্টন চায়না সেন্টারের পরিচালক রায়ান হাস মন্তব্য করেন, দৃশ্যত অনেক কর্মকাণ্ড থাকলেও দুই দেশই ভেতরে ভেতরে পারস্পরিক নির্ভরতা কমানোর কৌশল নিচ্ছে। তাঁর মতে, শি স্বনির্ভরতাকে জাতীয় এজেন্ডার কেন্দ্রে এনেছেন এবং দুর্লভ খনিজে প্রভাব নিয়ে বেইজিং কিছুটা ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী’। হাস ধারণা করেন, কোরিয়ায় ট্রাম্প–শি দেখা হলেও বড় কোনো ছাড়–পাওনা হবে না; বৈঠকের লক্ষ্য হবে ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার দিকনির্দেশ ও সীমানা নির্ধারণ, সম্পর্ককে কিছুটা স্থিতি ও পূর্বানুমানযোগ্যতার সংকেত দেওয়া।

নীতিগত তুলনা নিয়ে এক একাডেমিক মত

ইয়েল ল’ স্কুলের অধ্যাপক তাইসু ঝ্যাং সামাজিক মাধ্যমে লেখেন—চীনের দুর্লভ খনিজ প্রযুক্তিতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘বুদ্ধিমানের কাজ’ মনে হলে, যুক্তরাষ্ট্রের চিপ প্রযুক্তিতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে ‘অবিবেচক’ বলা যৌক্তিক নয়—বা উল্টোটা। তাঁর মতে, উভয় দেশেই আর্থিক নীতির টানাপোড়েনে গবেষণা–পরিবেশ নড়বড়ে; মাঝামাঝি মেয়াদে প্রযুক্তিগত পারস্পরিক নির্ভরতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ‘ডিটাঁত’ই সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিণতি।

টিকটক ইস্যু: সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি, তবে ব্রেকথ্রু নয়

মেরিল্যান্ডভিত্তিক নীতি–পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেডা পার্টনার্স জানায়, শি–ট্রাম্প বৈঠক হলেও বড় কোনো অগ্রগতি সম্ভাবনা কম। সর্বোচ্চ টিকটক বিক্রয় নিয়ে আরও আলোচনা এগোতে পারে; কিন্তু দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার বা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য—বিশেষত সয়াবিন—কেনার চীনা প্রতিশ্রুতি এই বৈঠকের পরেই ঘোষণা হবে—এমনটি সম্ভাব্য নয়।

4+ Thousand China–united States Relation Royalty-Free Images, Stock Photos  & Pictures | Shutterstock

কংগ্রেসে পাল্টাপাল্টি অবস্থান

প্রতिনিধি পরিষদের চীন–বিষয়ক বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান জন মুলেনার চীনের নতুন বিধিনিষেধকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “অর্থনৈতিক যুদ্ধের ঘোষণা” বলে অভিহিত করেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে সরবরাহশৃঙ্খল সুরক্ষা ও চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজি–প্রযুক্তি প্রবাহ বন্ধে কাজ করার প্রস্তুতির কথা জানান। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ডেমোক্র্যাট শীর্ষ সদস্য গ্রেগরি মীকস জানান, চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘হঠাৎ’ আসেনি—ট্রাম্পের ‘উচ্ছৃঙ্খল’ বাণিজ্যযুদ্ধ এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে দরকষাকষির হাতিয়ার বানানোর ফলেই এর ব্যয়সাপেক্ষ প্রতিক্রিয়া এখন আমেরিকানদের ওপর পড়ছে।

আলোচনার সময়সীমা ও সয়াবিন ক্রয়

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সামনে ১০ নভেম্বরের মধ্যে বিস্তৃত বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। আলোচনার মাঝেও চীন চলতি মৌসুমে এখনো মার্কিন সয়াবিন কেনেনি; বরং ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় অর্ডার ঘুরিয়ে দিয়েছে।

ট্রাম্প–শি ফোনালাপ ও টিকটক চুক্তি

গত মাসে ট্রাম্প তৃতীয়বারের মতো শির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প কথোপকথনকে “খুব ফলপ্রসূ” এবং বেইজিং “বাস্তবমুখী, ইতিবাচক ও গঠনমূলক” বলে বর্ণনা করে—যার ফলশ্রুতিতে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের একটি টিকটক চুক্তির ভিত্তি তৈরি হয়। ওই কলের আগে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিকে “ভদ্রলোক” আখ্যা দিয়ে দুই নেতার এই মাসেই সাক্ষাতের ঘোষণা দেন। পরে তিনি আরেক পোস্টে চলতি মৌসুমে মার্কিন সয়াবিনে চীনের ‘অনাগ্রহ’ নিয়ে অসন্তোষ জানান। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের অন্যতম বড় ক্রেতা; ট্রাম্প বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপকে আলোচনার কৌশল হিসেবে আখ্যা দেন।

বিশ্ব মহামারি নিয়ে ট্রাম্প-শি ফোনালাপ | The Business Standard

ফের উত্তপ্ত শুল্কযুদ্ধ: ফেন্টানিল, সয়াবিন ও ‘১০০%’

হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরার পর জানুয়ারিতেই ট্রাম্প ফেন্টানিল–সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ দেখিয়ে চীনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক বসান; জবাবে বেইজিং পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এপ্রিলে চীন মার্কিন সয়াবিনে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেয়, ফলে প্রতিযোগিতা–ক্ষমতা কমে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের পাল্টা–পাল্টি শুল্ক ১০০ শতাংশেরও ওপরে ওঠে।

আলোচনার অগ্রগতি ও গড় শুল্কের বাস্তবতা

মে মাস থেকে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে—কিছু শুল্ক কমানো এবং দুর্লভ খনিজ ও সেমিকন্ডাক্টরে সীমিত বাণিজ্য নিয়ে প্রাথমিক কাঠামোতে অগ্রগতি হয়েছে। তবু চীনা আমদানিতে গড় শুল্ক এখনো প্রায় ৫৫ শতাংশের কাছাকাছি; ট্রাম্প প্রশাসন ফেন্টানিল–সংশ্লিষ্ট শুল্ক সরাতে অনাগ্রহী এবং আলোচনাকে বৃহত্তর ইস্যু—রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি, অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ—কেন্দ্রিক রেখেছে।

টেলিকম নিরাপত্তা নিয়ে এফসিসির অবস্থান

মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেনডান কার সামাজিক মাধ্যমে জানান, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি “বহুমুখী প্রচেষ্টায় অনিরাপদ ডিভাইস” আমেরিকান বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, এফসিসির নতুন উদ্যোগের ফলে নিষিদ্ধ ‘কাভার্ড লিস্ট’-এ থাকা ডিভাইস—যার মধ্যে নির্দিষ্ট হুয়াওয়ে ও জেডটিই যন্ত্রপাতিও রয়েছে—সংক্রান্ত “মিলিয়ন মিলিয়ন তালিকা” বড় বড় ই–কমার্স ও অনলাইন খুচরা প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্যাটসআই × 5 গাম: ‘ফাইনাল ড্রপ’-এ পপ কালচারের কামব্যাক কামড়

 নতুন ১০০% শুল্ক ঘোষণার পরও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের দরজা খোলা রেখেছেন ট্রাম্প

০৩:৪৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় এক বহুপাক্ষিক ফোরামের আড়ালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক এখনও হতে পারে। একই দিনে তিনি ঘোষণা দেন, বিদ্যমান করের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে সব চীনা আমদানিতে আরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে—যা তাঁর কড়া বাণিজ্য অবস্থানকে আরও জোরালো করে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা

ট্রাম্প বলেন, “আমি বৈঠক বাতিল করিনি, কিন্তু নিশ্চিতও না যে সেটা হবে। যাই হোক, আমি সেখানে থাকব। তাই ধরে নেওয়া যায়, আমাদের বৈঠক হতে পারে।” তিনি বেইজিংয়ের নতুন দুর্লভ খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন “বিশ্বের ওপর এমন কিছু চাপিয়েছে, যা অন্যরা করবে না—এটা ছিল চমকে দেওয়ার মতো।”

শুল্কের সময়সূচি ও নমনীয়তার ইঙ্গিত

ট্রাম্প জানান, তাঁর নতুন শুল্ক পরিকল্পনা পরিবর্তিতও হতে পারে এবং “আমদানি–রপ্তানির পুরো ধারণা” অনেকেরই পুরো বোঝা নেই। তাঁর ভাষায়, “দেখা যাক কী হয়। তাই আমি ১ নভেম্বর তারিখটা রেখেছি—তার মধ্যে কী ঘটে দেখি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্তা: শুল্ক ও সফটওয়্যার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ

এর কিছু ঘণ্টা আগে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে বলা হয়, ১ নভেম্বর থেকে (বা চীনের আরও পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে তার আগেও) চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে—“বর্তমানে যা দিচ্ছে, তার ওপর অতিরিক্ত হিসেবে।” একই সঙ্গে তিনি জানান, ওই দিন থেকেই “সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের ওপর” রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। চীনের “শত্রুভাবাপন্ন” বাণিজ্য আচরণকেই তিনি এর জন্য দায়ী করেন এবং এই পদক্ষেপগুলোকে “আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অভূতপূর্ব” ও “নৈতিকতার পরিপন্থী” বলে আখ্যা দেন।

China says 'door open' to trade talks after Trump signals tariffs will fall  - World - Business Recorder

বৈঠক ‘বাতিলের ইঙ্গিত’ ও ‘বৃহৎ’ শুল্কের হুমকি

দিনের শুরুতে ট্রাম্প শির সঙ্গে নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিলের ইঙ্গিত দিয়ে “বৃহৎ” শুল্কের হুমকি দেন। তাঁর দাবি, বিশ্বের বহু দেশ চীনের কাছ থেকে “চিঠি” পেয়েছে—দুর্লভ খনিজ সংশ্লিষ্ট উৎপাদনের প্রতিটি উপাদানে এবং “তাদের মাথায় যা আসে” তার ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপের ইচ্ছা জানিয়ে। তাঁর দীর্ঘ পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, চীনের এই পদক্ষেপ বাজারে “জট” সৃষ্টি করবে এবং বহু খাতে বৈশ্বিক উৎপাদন ব্যাহত করবে। তিনি এটিকে “পার্থিব বিশ্বকে বন্দি করে রাখা”র প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করে “অশুভ ও শত্রুভাবাপন্ন” বলেন। ট্রাম্প জানান, তিনি দুই সপ্তাহ পর দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনের ফাঁকে শির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল—এখন তা নাও হতে পারে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের হুমকিতে ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ শতাংশ পড়ে যায়—এপ্রিলের পর সবচেয়ে খারাপ দিন। ডাও জোন্স ১.৯ শতাংশ এবং নাসডাক ৩.৬ শতাংশ হ্রাস পায়।

চীনের নতুন রপ্তানি বিধিনিষেধ

বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী চীন দুর্লভ খনিজের একাধিক পরিশোধন প্রযুক্তি রপ্তানি সীমিত করেছে এবং সতর্ক করেছে—চীনা উপকরণ ব্যবহারকারী বিদেশি উৎপাদকদেরও চীনের নিয়ম মানতে হবে।

মন্ত্রীসভা বৈঠকে ট্রাম্পের মন্তব্য

হোয়াইট হাউসের মন্ত্রিসভা বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, “আমরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণে আমদানি করি—হয়তো সেটা বন্ধই করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “শির সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। এর একটি হলো সয়াবিন।” প্রথম মেয়াদে তিনি নাকি “প্রতি দুই সপ্তাহে” শিকে ফোন করে বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি—বিশেষত সয়াবিন ক্রয়—মানা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতেন। তাঁর অভিযোগ, উত্তরসূরি জো বাইডেন ২০২০ সালের ‘ফেজ ওয়ান’ চুক্তির বাস্তবায়ন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

Event Recap: Virtual Offering of The Future of U.S.-China Conference -  Interactive Discussion with Ryan Hass | Asia Society

নীতিবিশ্লেষকদের মূল্যায়ন

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জন এল. থরন্টন চায়না সেন্টারের পরিচালক রায়ান হাস মন্তব্য করেন, দৃশ্যত অনেক কর্মকাণ্ড থাকলেও দুই দেশই ভেতরে ভেতরে পারস্পরিক নির্ভরতা কমানোর কৌশল নিচ্ছে। তাঁর মতে, শি স্বনির্ভরতাকে জাতীয় এজেন্ডার কেন্দ্রে এনেছেন এবং দুর্লভ খনিজে প্রভাব নিয়ে বেইজিং কিছুটা ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী’। হাস ধারণা করেন, কোরিয়ায় ট্রাম্প–শি দেখা হলেও বড় কোনো ছাড়–পাওনা হবে না; বৈঠকের লক্ষ্য হবে ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার দিকনির্দেশ ও সীমানা নির্ধারণ, সম্পর্ককে কিছুটা স্থিতি ও পূর্বানুমানযোগ্যতার সংকেত দেওয়া।

নীতিগত তুলনা নিয়ে এক একাডেমিক মত

ইয়েল ল’ স্কুলের অধ্যাপক তাইসু ঝ্যাং সামাজিক মাধ্যমে লেখেন—চীনের দুর্লভ খনিজ প্রযুক্তিতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘বুদ্ধিমানের কাজ’ মনে হলে, যুক্তরাষ্ট্রের চিপ প্রযুক্তিতে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে ‘অবিবেচক’ বলা যৌক্তিক নয়—বা উল্টোটা। তাঁর মতে, উভয় দেশেই আর্থিক নীতির টানাপোড়েনে গবেষণা–পরিবেশ নড়বড়ে; মাঝামাঝি মেয়াদে প্রযুক্তিগত পারস্পরিক নির্ভরতার ভিত্তিতে বাণিজ্যিক ‘ডিটাঁত’ই সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিণতি।

টিকটক ইস্যু: সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি, তবে ব্রেকথ্রু নয়

মেরিল্যান্ডভিত্তিক নীতি–পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভেডা পার্টনার্স জানায়, শি–ট্রাম্প বৈঠক হলেও বড় কোনো অগ্রগতি সম্ভাবনা কম। সর্বোচ্চ টিকটক বিক্রয় নিয়ে আরও আলোচনা এগোতে পারে; কিন্তু দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার বা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য—বিশেষত সয়াবিন—কেনার চীনা প্রতিশ্রুতি এই বৈঠকের পরেই ঘোষণা হবে—এমনটি সম্ভাব্য নয়।

4+ Thousand China–united States Relation Royalty-Free Images, Stock Photos  & Pictures | Shutterstock

কংগ্রেসে পাল্টাপাল্টি অবস্থান

প্রতिনিধি পরিষদের চীন–বিষয়ক বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যান জন মুলেনার চীনের নতুন বিধিনিষেধকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “অর্থনৈতিক যুদ্ধের ঘোষণা” বলে অভিহিত করেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে সরবরাহশৃঙ্খল সুরক্ষা ও চীনে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজি–প্রযুক্তি প্রবাহ বন্ধে কাজ করার প্রস্তুতির কথা জানান। অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ডেমোক্র্যাট শীর্ষ সদস্য গ্রেগরি মীকস জানান, চীনের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ‘হঠাৎ’ আসেনি—ট্রাম্পের ‘উচ্ছৃঙ্খল’ বাণিজ্যযুদ্ধ এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকে দরকষাকষির হাতিয়ার বানানোর ফলেই এর ব্যয়সাপেক্ষ প্রতিক্রিয়া এখন আমেরিকানদের ওপর পড়ছে।

আলোচনার সময়সীমা ও সয়াবিন ক্রয়

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সামনে ১০ নভেম্বরের মধ্যে বিস্তৃত বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। আলোচনার মাঝেও চীন চলতি মৌসুমে এখনো মার্কিন সয়াবিন কেনেনি; বরং ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় অর্ডার ঘুরিয়ে দিয়েছে।

ট্রাম্প–শি ফোনালাপ ও টিকটক চুক্তি

গত মাসে ট্রাম্প তৃতীয়বারের মতো শির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প কথোপকথনকে “খুব ফলপ্রসূ” এবং বেইজিং “বাস্তবমুখী, ইতিবাচক ও গঠনমূলক” বলে বর্ণনা করে—যার ফলশ্রুতিতে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের একটি টিকটক চুক্তির ভিত্তি তৈরি হয়। ওই কলের আগে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিকে “ভদ্রলোক” আখ্যা দিয়ে দুই নেতার এই মাসেই সাক্ষাতের ঘোষণা দেন। পরে তিনি আরেক পোস্টে চলতি মৌসুমে মার্কিন সয়াবিনে চীনের ‘অনাগ্রহ’ নিয়ে অসন্তোষ জানান। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের অন্যতম বড় ক্রেতা; ট্রাম্প বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপকে আলোচনার কৌশল হিসেবে আখ্যা দেন।

বিশ্ব মহামারি নিয়ে ট্রাম্প-শি ফোনালাপ | The Business Standard

ফের উত্তপ্ত শুল্কযুদ্ধ: ফেন্টানিল, সয়াবিন ও ‘১০০%’

হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরার পর জানুয়ারিতেই ট্রাম্প ফেন্টানিল–সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ দেখিয়ে চীনা পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক বসান; জবাবে বেইজিং পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এপ্রিলে চীন মার্কিন সয়াবিনে ২৫ শতাংশ শুল্ক দেয়, ফলে প্রতিযোগিতা–ক্ষমতা কমে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের পাল্টা–পাল্টি শুল্ক ১০০ শতাংশেরও ওপরে ওঠে।

আলোচনার অগ্রগতি ও গড় শুল্কের বাস্তবতা

মে মাস থেকে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে—কিছু শুল্ক কমানো এবং দুর্লভ খনিজ ও সেমিকন্ডাক্টরে সীমিত বাণিজ্য নিয়ে প্রাথমিক কাঠামোতে অগ্রগতি হয়েছে। তবু চীনা আমদানিতে গড় শুল্ক এখনো প্রায় ৫৫ শতাংশের কাছাকাছি; ট্রাম্প প্রশাসন ফেন্টানিল–সংশ্লিষ্ট শুল্ক সরাতে অনাগ্রহী এবং আলোচনাকে বৃহত্তর ইস্যু—রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি, অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ—কেন্দ্রিক রেখেছে।

টেলিকম নিরাপত্তা নিয়ে এফসিসির অবস্থান

মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) চেয়ারম্যান ব্রেনডান কার সামাজিক মাধ্যমে জানান, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি “বহুমুখী প্রচেষ্টায় অনিরাপদ ডিভাইস” আমেরিকান বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, এফসিসির নতুন উদ্যোগের ফলে নিষিদ্ধ ‘কাভার্ড লিস্ট’-এ থাকা ডিভাইস—যার মধ্যে নির্দিষ্ট হুয়াওয়ে ও জেডটিই যন্ত্রপাতিও রয়েছে—সংক্রান্ত “মিলিয়ন মিলিয়ন তালিকা” বড় বড় ই–কমার্স ও অনলাইন খুচরা প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।