০৪:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৯৩)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
  • 19

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মজেদ-প্রাঙ্গণের দক্ষিণ দিকে একটি বিশাল তোরণদ্বার মস্তক উত্তোলন করিয়া অ্যাপি বিরাজ করিতেছে। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ অত্যন্ত মুক্তহস্ত পুরুষ ছিলেন, মজ্জদে ও অতিথিশালায় তিনি অনেক অর্থ ব্যয় করিতেন। দরিদ্র ও আর্ত্তদিগের জন্য তাঁহার মাসিক ৩৭,০০০ টাকা ব্যয়িত হইত। মুর্শিদাবাদের যাবতীয় বিপন্না বিধবা ও অনাথগণ তাঁহার পরিবার বলিয়া গণ্য ছিল। তিনি অত্যন্ত ধীরপ্রকৃতি ও স্নেহপ্রবণ ছিলেন। এক্রান উদ্দৌলাকে তিনি প্রাণ অপেক্ষাও অধিক ভাল বাসিতেন।

এক্রাম উদ্দৌলার বসন্তরোগে প্রাণবিয়োগ হইলে, তাহাকে মোতিঝিলের মজেদ- প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ এক্রামের শোকে উন্মত্ত হইয়া উঠেন; বাস্তবিকই তৎকালে তিনি হিতাহিত-জ্ঞান-বর্জিত হইয়াছিলেন। তাঁহার ধীর প্রকৃতি অস্থির হইয়া উঠিল, জগতের সকল কার্য্যে তিনি অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ কারতে লাগিলেন। তাঁহার প্রণয়িণী ঘসেটা বেগম ও পূজ্যপাদ পিতৃব্য আলিবদ্দী খাঁ কিছুতেই তাঁহাকে শান্ত করিতে পারিলেন না; ক্রমে তিনি ভয়ঙ্কর শোথরোগে আক্রান্ত হইয়া পড়েন।

আলিবর্দ্দদী তাঁহাকে নিজ প্রাসাদে লইয়া গিয়া সুচিকিৎ- সকের হস্তে অর্পণ করিলেন, কিছুতেই ফলোদয় হইল না। ঘসেস্টী বেগম সিরাজ উদ্দৌলার ভয়ে পুনর্ব্বার তাঁহাকে নগরমধ্যস্থ স্বীয় প্রাসাদে’ লইয়া গেলেন। তথায় হিজরী ১১৬৯ অব্দে (১৭৫৫/৫৬ খৃঃ অব্দে) তিনি চিরদিনের জন্য চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। তাঁহার ইচ্ছানুসারে তাঁহার প্রিয়তম এক্রামের পার্শ্বে মোতিঝিলের মজেদ-প্রাঙ্গণে নওয়া- থেকে সমাহিত করা হয়।

তাঁহাকে সমাধিস্থ করার কথা মুতাক্ষরীনে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে,-“প্রভাত হইতে না হইতে জ্ঞানিশ্রেষ্ঠ মীর মহম্মদ আলি, আলি- বন্দী খাঁ স্বয়ং, তাঁহার পরিবারস্থ যাবতীয় আত্মীয় স্বজন এবং নগরের স্ত্রী- পুরুষ অসংখ্য লোক মৃতদেহের সৎকারে উপস্থিত হইল। মুসল্যান শাস্ত্রানুসারে মৃতদেহ ধৌত হইলে, জানাজী (শাস্ত্রীয় প্রার্থনা) পাঠের পর শববহন করিয়া, মধ্যে মধ্যে স্কন্ধ বিনিময় করিতে করিতে, তাহারা তাঁহার প্রিয় গ্রাম্যভবন মোতিঝিদ্ধে উপস্থিত হইল। তথায় কিছুক্ষণ তাঁহার স্ব-নির্থিত মংজদে মৃতদেহ রাখিয়া তাহারই প্রাঙ্গণে, এক্রাম উদ্দৌলার পার্শ্বে তাঁহাকে সমাহিত করিল।

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৯৩)

১১:০০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

মজেদ-প্রাঙ্গণের দক্ষিণ দিকে একটি বিশাল তোরণদ্বার মস্তক উত্তোলন করিয়া অ্যাপি বিরাজ করিতেছে। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ অত্যন্ত মুক্তহস্ত পুরুষ ছিলেন, মজ্জদে ও অতিথিশালায় তিনি অনেক অর্থ ব্যয় করিতেন। দরিদ্র ও আর্ত্তদিগের জন্য তাঁহার মাসিক ৩৭,০০০ টাকা ব্যয়িত হইত। মুর্শিদাবাদের যাবতীয় বিপন্না বিধবা ও অনাথগণ তাঁহার পরিবার বলিয়া গণ্য ছিল। তিনি অত্যন্ত ধীরপ্রকৃতি ও স্নেহপ্রবণ ছিলেন। এক্রান উদ্দৌলাকে তিনি প্রাণ অপেক্ষাও অধিক ভাল বাসিতেন।

এক্রাম উদ্দৌলার বসন্তরোগে প্রাণবিয়োগ হইলে, তাহাকে মোতিঝিলের মজেদ- প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ এক্রামের শোকে উন্মত্ত হইয়া উঠেন; বাস্তবিকই তৎকালে তিনি হিতাহিত-জ্ঞান-বর্জিত হইয়াছিলেন। তাঁহার ধীর প্রকৃতি অস্থির হইয়া উঠিল, জগতের সকল কার্য্যে তিনি অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ কারতে লাগিলেন। তাঁহার প্রণয়িণী ঘসেটা বেগম ও পূজ্যপাদ পিতৃব্য আলিবদ্দী খাঁ কিছুতেই তাঁহাকে শান্ত করিতে পারিলেন না; ক্রমে তিনি ভয়ঙ্কর শোথরোগে আক্রান্ত হইয়া পড়েন।

আলিবর্দ্দদী তাঁহাকে নিজ প্রাসাদে লইয়া গিয়া সুচিকিৎ- সকের হস্তে অর্পণ করিলেন, কিছুতেই ফলোদয় হইল না। ঘসেস্টী বেগম সিরাজ উদ্দৌলার ভয়ে পুনর্ব্বার তাঁহাকে নগরমধ্যস্থ স্বীয় প্রাসাদে’ লইয়া গেলেন। তথায় হিজরী ১১৬৯ অব্দে (১৭৫৫/৫৬ খৃঃ অব্দে) তিনি চিরদিনের জন্য চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। তাঁহার ইচ্ছানুসারে তাঁহার প্রিয়তম এক্রামের পার্শ্বে মোতিঝিলের মজেদ-প্রাঙ্গণে নওয়া- থেকে সমাহিত করা হয়।

তাঁহাকে সমাধিস্থ করার কথা মুতাক্ষরীনে এইরূপ বর্ণিত হইয়াছে,-“প্রভাত হইতে না হইতে জ্ঞানিশ্রেষ্ঠ মীর মহম্মদ আলি, আলি- বন্দী খাঁ স্বয়ং, তাঁহার পরিবারস্থ যাবতীয় আত্মীয় স্বজন এবং নগরের স্ত্রী- পুরুষ অসংখ্য লোক মৃতদেহের সৎকারে উপস্থিত হইল। মুসল্যান শাস্ত্রানুসারে মৃতদেহ ধৌত হইলে, জানাজী (শাস্ত্রীয় প্রার্থনা) পাঠের পর শববহন করিয়া, মধ্যে মধ্যে স্কন্ধ বিনিময় করিতে করিতে, তাহারা তাঁহার প্রিয় গ্রাম্যভবন মোতিঝিদ্ধে উপস্থিত হইল। তথায় কিছুক্ষণ তাঁহার স্ব-নির্থিত মংজদে মৃতদেহ রাখিয়া তাহারই প্রাঙ্গণে, এক্রাম উদ্দৌলার পার্শ্বে তাঁহাকে সমাহিত করিল।