শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৩৫)

  • Update Time : শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

হিজরী ১১৬৯ অব্দের জমাদিয়ল আউয়ল মাসের ৯ই হইতে তিনি শোথরোগে আক্রান্ত হইয়া পড়িলেন। নবাব প্রথমতঃ জলপান পরিত্যাগ করিয়াছিলেন; কিন্তু যখন বুঝিতে পারিলেন যে, তাঁহার ন্যায় বৃদ্ধ বয়সে এই ভীষণ রোগের হস্ত হইতে নিকৃতির কিছুমাত্র সম্ভাবনা নাই, তখন হইতে তিনি পানাহারের প্রতি তাদৃশ মনোযোগ প্রদান করিতেন না।  ক্রমে ক্রমে রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি পাইলে, দেশের যাবতীয় লোক তাঁহার নিকটে সমাগত হইতে লাগিল। তাঁহার পরিবারবর্গের মুখশ্রী স্নান হইয়া গেল। এই সময়ে সিরাজ উদ্দৌলার সহিত ঘসেটা বেগমের বিবাদ গুরুতর তাবেই চলিতেছিল।

ঘসেটা যে ইংরেজদিগের সহিত সিরাজের বিরুদ্ধে পরামর্শ করিতেছিলেন, আলিবর্দ্দদী সে কথা জানিতে পারিলেন। তিনি ইংরেজদিগের রাজ্যলালসার কথা বুঝিতে পারিয়া, সিরাজকে উপদেশ দিয়া যান যে, ইংরেজদিগকে যেরূপে পার দাসানুদাসের ন্যায় দমন করিয়া রাখিবে; ইংরেজদিগকে দমন করিতে না পারিলে, তাহারা নিশ্চয়ই তোমার রাজ্য অধিকার করিয়া বসিবে।’

মুতাক্ষরীনকার লিখিয়াছেন যে, নবাবের মৃত্যুর পূর্ব্বে নগরের প্রধান প্রধান ব্যক্তি সমবেত হইয়া, সিরাজ উদ্দৌলার হস্তে তাঁহাদিগের হস্ত বিন্যাস করিয়া, তাঁহাদিগকে প্রীতির চক্ষে দেখিবার জন্য সিরাজকে অনুরোধ করিতে নবাবের নিকট প্রার্থনা করেন। নবাব তাহাতে এই রূপ উত্তর প্রদান করিয়াছিলেন যে, যদি তোমরা আমার মৃত্যুর পর তিন দিবস পর্য্যন্ত সিরাজের মাতামহীর সহিত তাহার সম্ভাব দেখিতে পাও, তাহা হইলে তোমাদের কতকটা আশা থাকিতে পারে। মুতা- স্বরীনকারের এই কথায় শ্রদ্ধাস্থাপন করিতে আমাদের প্রবৃত্তি হয় না।

যে আলিবন্দী কূটনীতিবিশারদ ইংরেজদিগকে দমন করিবার জন্য সিরাজকে পুনঃ পুনঃ উপদেশ দিয়াছিলেন, তাঁহার যে সিরাজের প্রতি ঐরূপ ঘৃণাব্যঞ্জক ভাব ছিল, তাহা আমরা বিশ্বাস করিতে পারি না। বরং সিরাজের প্রতি তাঁহার ভাব অন্য প্রকারই ছিল, আমরা অনেক স্থলে তাহার প্রমাণ পাইয়াছি। সিরাজ মসনদে বসিয়া যে মাতামহীর আজ্ঞা লঙ্ঘন করেন নাই, তাহারও যথেষ্ট প্রমাণ আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024