ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মন্দিরের প্রথম দিকেই এক বিশেষ কৌণিক আকার গড়ে তোলা হয়। মন্দির সাজসজ্জার ডালি সাজানো হয় সাপ, জাগুয়ার, ঈগল এইসব মূর্তি দিয়ে এবং এইসব প্রাণী যেন পরপর হেঁটে যাচ্ছে এমন একটা ধারাবাহিকতা তৈরি করা হয়। মায়া-স্থাপত্য এবং মন্দিরের গঠনশৈলীর মধ্যে আমরা নানারকম প্রাণীর মূর্তি দেখি। এর মধ্যে লক্ষ্যণীয় দিক হল এসবের সঙ্গে কোনো এক সময় ভারতীয় সংস্কৃতির মিল ছিল।
উদাহরণ হিসেবে সাগরতীরে পাওয়া সংস্কৃত ভাষার স্থাপত্য নিদর্শন। এই পাঠ থেকে জানা যায় অসুরকে বলা হয়েছে। এই অসুর দুটির নাম হল মায়ামাতাম (Mayamatam) এবং মায়াশাস্ত্রম (Mayasastram)। মায়া অঞ্চলের বিভিন্ন মন্দিরের দেখা স্থাপত্যের সঙ্গে ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যর ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। এ প্রসঙ্গে গবেষক হেইন গেলদেন (Hein Gelden) এবং এখলম (Ekholm) মন্তব্য করেছেন যে মায়া এবং ভারতীয় স্থাপত্যে কিছু মিলের কেন্দ্র হল পদ্ম (Lotus) এবং মাছ (Fish)। আমেরিন্দিয়া এবং গ্রীক স্থাপত্যশৈলী যা মেক্সিকোতে দেখা যায় তার কিছু চিহ্ন ভারতবর্ষের অজন্তার গুহা-স্থাপত্যকে মনে করিয়ে দেয়। এই স্থাপত্যশৈলীর সময় মোটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে পঞ্চম খ্রিস্টাব্দ।
মায়া-সভতা মেক্সিকো, গুয়াতেমালার যেসব অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিল তার বহু বৈচিত্র্য এখনো সম্পূর্ণভাবে ধরা পড়েনি। পুরাতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক এবং বিশেষ করে অনেক আমেরিকান গবেষক নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অজানা তথ্য জানার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন, তবে মূল কথা হিসেবে এই অধ্যায়ের প্রতিপাদ্য হল মায়া-সভ্যতা ও জনসমাজের বেশ কিছু স্মরণীয় এবং দ্রষ্টব্য দিক আছে যা নিজস্ব সৌন্দর্যে ভাস্বর। তার অনেক পালককে তুলে ধরার চেষ্টা করা হল এই অধ্যায়ে।
(চলবে)
মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৫৪)