সারাক্ষণ ডেস্ক
বাশার আল-আসাদের আকস্মিক পতনের পর, সিরিয়ার জনগণের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। বিদ্রোহী বাহিনীর বিজয়ের ফলে একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এটি কতটা স্থিতিশীল এবং কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি ঘোষণা দিয়েছেন, পূর্বতন শাসন ব্যবস্থার যেসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক বন্দিদের উপর নির্যাতনে জড়িত ছিলেন, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
এছাড়া, যারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাদের ফেরত আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা সন্দিহান।

বিদ্রোহীদের বিজয় উদযাপন
আসাদের পতনের পর, দামেস্ক এবং আলেপ্পোসহ সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে জনগণ রাস্তায় নেমে বিজয় উদযাপন করছে। বিদ্রোহী নেতারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে। বিদ্রোহীদের মধ্যে মতবিরোধ, দেশটির ভগ্নপ্রায় অবকাঠামো এবং বিদেশি প্রভাব এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলতে পারে।

রাশিয়ার ভূমিকায় পরিবর্তন
আসাদ সরকারের পতনের পর, সিরিয়ায় রাশিয়ার অবস্থানও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া তাদের সামরিক ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশন রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এখন আর সিরিয়ায় আগের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
সিরিয়ার পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
সিরিয়ার পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অর্থনীতি, অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ এবং বিশাল শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক সাহায্য প্রয়োজন।
তবে পশ্চিমা দেশগুলো এখনও দ্বিধাগ্রস্ত যে, বিদ্রোহী শাসনের অধীনে সিরিয়ার পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করা কতটা নিরাপদ হবে।
অন্যদিকে, চীন, ইরান এবং তুরস্কও সিরিয়ার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার ও বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে সিরিয়ার নতুন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে।
বিদ্রোহী সরকার এই আহ্বানের প্রতি কীভাবে সাড়া দেয়, তা দেখার বিষয়।
সিরিয়া এখন একটি নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে। জনগণের জন্য এটি নতুন আশার বার্তা বহন করে, তবে একইসঙ্গে এটি বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। দেশটি কীভাবে এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসে, তা সময়ই বলে দেবে।
Sarakhon Report 



















