০৯:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

নিজ সাগরে জলকেলি শেষে পরণের বস্ত্রের অবস্থা

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫
  • 67

স্বদেশ রায়

কখনও কখনও কাহার ও গান বা নাচ দেখিয়া কেহ মনে করিতে পারেন যে তিনি মানুষকে জোর পূর্বক বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করিতেছেন। যাহারা সব সময় নিন্দুক তাহারা জোরপূর্বক বিনোদন দেওয়া হইতেছে এমনটি ভাবিয়া থাকেন। তবে যাহারা সব কিছু ভালো মনে দেখেন, তাহারা তো মনে করিতে পারেন,  তিনি সদয় হইয়া মানুষকে আনন্দিত করিতেছেন। এ ভূবন আনন্দময়, এখানে নিরানন্দ থাকিয়া নিজেকে বা আত্মাকে কষ্ট দিবার কোনই কারণ নাই। তাই সুধীজনমাত্রই মনে করিতে পারেন যাহারা বেসুরো গলায় গান শোনান, তাহারা বিনোদন চাপাইয়া দেন না। দেশে বিনোদনের অভাব বোধ করিয়াই তাহারা ওই গান শুনাইয়া থাকেন। যদি তাহারা বুঝিতে পারেন যে দীঘকালীন বিনোদন জাকিয়া বসিয়াছে, তখন তাহারা আর কষ্ট করিয়া, সময় নষ্ট করিয়া- গান শুনাইয়া বিনোদন দেবার প্রয়োজন মনে করেন না।

বরং তাহারা তখন বুঝিতে পারেন ভালো বিনোদন শুধুমাত্র গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেমন ধরুন, আগে রাজধানীর কাঁচা বাজার সহ সারা দেশের কাঁচা বাজারে( কিচেন মার্কেটে) মুরগি কিনিয়া কাটিয়া ছুলিয়া লইয়া যাইবার পরে- মুরগির দোকানগুলোতে মুরগির গলার (চিকেনের নেক) ঢিবি জমিয়া উঠিত। মুরগির গলা লইয়া যে একটি মহানন্দ আছে তাহা কেহই জানিত না। ইহা নিতান্ত দরিদ্র মানুষের হোটেলের খাবারের বিষয় বলিয়া কেহ কেহ জানিত।হঠাৎ করিয়া মুরগীর গলা খাইবার একটি উৎসব পড়িয়া গেলো- আর সেই গলা খাইবার জন্যে যখন দিকে দিকে “রব” উঠিল ও নামিল;  সেই রব আর মুরগির গলা খাইবার তীব্র বাসনার চিত্র যেমন মানুষকে আনন্দিত করিলো তেমনি যাহারা গলা খাইবার জন্য রব তুলিল তাহাদের আনন্দ দেখিয়া স্বয়ং মুরগিও কি বিনোদন উপভোগ করিলো না! কারণ যে গলা দিয়া সে কুর কুর করিয়া ডাকে সেই গলা যখন এতদিন পড়িয়া থাকিত, তাহাতে সে কি কষ্ট পাইতো না?  এখন তাহার সুস্বাদু ব্রেস্টমিট বা রানমিট বাদ দিয়া শুধু গলা খাইবার জন্যে যখন অশতিপর বৃদ্ধ হইতে শিশু অবধি নাঁচিয়া উঠিল তখন মানুষ কেন মুরগির শরীরেও কি বিনোদনের হিল্লোল উঠিল না?

ইহার পরে ধরা গেলো শিশু কিশোরদের জন্যে নতুন করিয়া রূপকথার জোয়ার আসিল। আহা কি আনন্দ! যেখানে শিশু কিশোররা ইউটিউবে ডুবিয়া গিয়াছিলো সেখানে তাহারা আবার তাহাদের নানী -দাদীদের সেই চির পরিচিত রূপকথায় ফিরিয়া আসিল। সময়ের বিবর্তনে রূপকথারও কিছু পরিবর্তন হইয়া থাকে। এমনকি রূপকথার নায়ক নায়িকাদের লিঙ্গান্তরও হইয়া থাকে। যদিও আধুনিক বিশ্বে উদারতন্ত্রে লিঙ্গর খুব বেশি গুরুত্ব নাই। সেখানে সমলিঙ্গ, লিঙ্গহীন সকলকে একই আনন্দে আনন্দিত করিবার একটি বাসনা আছে। যাহা তাহাদের কোন কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী মূল এজেন্ডাও হইয়া থাকে। যাহোক সেটা উন্নত দেশের রাজনৈতিক দল, যাহারা পৃথিবীর মাস্টারমাইন্ডদের অনুপ্রেরণা ও অনুপ্রেষণাদাতা তাহাদের লইয়া ভাবিয়া রূপকথার আনন্দ হইতে দূরে চলিয়া যাইবার প্রয়োজন নাই।

তাই দিকে দিকে দেখিতে পাওয়া গেলো সাতভাই চম্পা ও একটি বোন পারুল রূপকথা সাত বোন চম্পা ও একটি ভাই “হারাধন” হইয়া ফিরিয়া আসিল। আহা! আর যাই হোক রূপকথা তো, যাহাতে দাদা- দাদী ও নানা -নানীদের গলার স্বর মিশিয়া আাছে- তাহা শুনিয়া শিশু কি নাচিয়া উঠিবে না! কিশোর কি দল বাধিয়া বা গ্যাং ধরিয়া নাঁচিয়া উঠিবে না! উঠিতে হইবেই তো, না উঠিলে আর শিশু বা কিশোরগ্যাং বা দল কেন! আবার দাদা ও নানা কেন? উভয়ের কাছেই তো প্রিয় রূপকথা। একজন বলিতে ভালবাসেন, আরেকদল বিশ্বাস করিতে ভালবাসেন। এই ভালবাসিয়া বলা ও বিশ্বাস করিয়া ভালবাসা- ইহার চাইতে বড় বিনোদন আর কী হইতে পারে। আর সেখানে যদি দাদা বা নানা “হারাধন” ভাই হইয়া শিশু কিশোরগ্যাংদের লইয়া সাত বোন কে দিনের আলোয় বা রাতের আঁধারে আনিতে যায়- তাহা হইলে তাহার চাইতে আনন্দ আর কী হইতে পারে! কথায় আছে গাঙে গাঙে দেখা হয় তো বোনে বোনে দেখা হয় না। তাহার পরিবর্তে যদি যেখানে সাত বোন ফুল হইয়া -শুধু অন্যের বাগানে ফুটিয়া আছে- সেখানে হইতে কেবলই টুপ করিয়া ছিঁড়িয়া আনিতে হইবে- এমন একটি কাজের কথা মনে হইলেও তো নিজেকে রাজপুত্র বা কোটালপুত্র মনে হয়- যে কোন কৃষকের পুত্র বা কন্যার ছেড়া কাঁথার নিচে শুইয়া থাকিয়া। আর সেখানে যদি সত্যি সত্যি ছেড়া কাঁথা থেকে রাজা, রাজপুত্র বা কোটাল, কোটাল পুত্র হওয়া যায় তাহা হইলে তো আনন্দের ঢোলটি ধ্রিম ধ্রিম করিয়া বাজিয়া ওঠে। আর তখন যদি সেই ঢোল, “টাক ঢোল”, “ টাক ঢোল” বোল তুলিয়া যেখানে সেখানে বাজিয়া ওঠে তা হইলে যে আনন্দ নামিবে তাহার তুলনা কোথায় খুঁজিবে? ডি এল রায়ের “ এমন দেশ টি কোথাও খুঁজিয়া পাবে নাকো তুমি” হনুকরণে (অনুকরণের সঠিকার্থে) বলা যাইতে পারে,  এমন আনন্দ কোথাও খুঁজিয়া পাইবে নাকো তুমি।

রূপকথার জম্ম লইয়া যেমন কোন সাল বা তারিখ নাই তেমনি ইহা কে লিখিয়াছিলো তাহারও হদিস নাই। তবে রূপকথা বড়ই উদার- ইহা শুনিবার পরে যে কোন বালক বা কিশোর কিশোরী তাহা লইয়া তাহাদের কল্পনার জগতকে অনেক দূর লইয়া যাইতে পারে। বিদ্বানগন অবশ্য বলিয়া থাকেন, রূপকথা দেশে দেশে সৃষ্টি হইয়াছিলো, শিশু ও কিশোরদের কল্পনা বাড়াইবার জন্য। আর সেখানে যদি শিশু কিশোরগ্যাং তৈরি করিয়া সমবেত গ্যাং ধরিয়া কল্পনার জগত বাড়ানো যায়- তা হইলে তো ঢ্যাং ঢ্যাং করিয়া কিশোরগ্যাং যুবগ্যাং হইয়া উঠিবে। ইতিহাসে না থাকিলেও মহাকাব্যে শিশু কিশোরদের এমনি ঢ্যাং ঢ্যাং করিয়া শিশুকালেই যুবা হইবার কাহিনী তো আছে। তাহা হইতে বাংলায় একটি শব্দও আছে যাহা “বালখিল্য” । এই বালখিল্যরা মুনি ছিলো। তাহারা মায়ের পেট হইতে হাত মুঠা করিয়া চিৎকার করিয়া বাহির হইয়া আসিয়াছিলো। এবং সমগ্র যুবা ও বৃদ্ধদেরকে শাসন করিয়া বেড়াইতো।

তাই কিশোরগ্যাংকে বালখিল্য মুনিগ্যাং এ পরিণত না করিতে পারিলেও রূপকথার কল্পনায় তো তাহা সম্ভব হইবে।

তখন কোন এক বৃদ্ধ দাদা বা নানাকে সম্মুখে রাখিয়া এই বালখিল্য মুনিগ্যাং গভীর রাতে কল্পনায় সাত বোন চম্পাকে তুলিয়া আনিবার জন্যে দুলদুলে চড়িয়া, খোপবদ্ধ তরবারি লইয়া- সুরমা একে চোখে পাঠান বীরের মতো ছুটিতে পারিবে। সে ঘোড়াকে তাহারা বাতাসের বেগে ছোটাইয়া মুহূর্তে সাত বোন চম্পাকে তুলিয়া আনিয়া, নানাকে লইয়া নাচিতে নাচিতে নিজ মালিকানার পুকুরকে সমুদ্র মনে করিয়া আনন্দে ঝাপাইয়া পড়িতে পারিবে।

নিজ মালিকানার ওই সমুদ্রে বালখিল্যদের জলকেলিতে যদি তাহাদের সকল বসন স্রোতে ভাসিয়া যায় – তাহাও তাহাদের আনন্দ থামাইতে পারিবার কথা নহে। তাহাদের এই আনন্দ দেখিয়া মানুষ বিনোদন না পাইলেও বস্ত্রহীন নানা ও বালখিল্যগ্যাং তীরে উঠিয়া সাত বোনের সামনে দন্ডায়মান তো হইবে।  ইহাতে তাহাদের মনোজগতে কী পরিবর্তন ঘটিবে বা সাগরকূলের নাইয়ারা তাহা লইয়া বিনোদন পাইবে- না, লজ্জা পাইবে তাহাও বা কে জানে?

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ , The Present World.    

নিজ সাগরে জলকেলি শেষে পরণের বস্ত্রের অবস্থা

০৮:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

স্বদেশ রায়

কখনও কখনও কাহার ও গান বা নাচ দেখিয়া কেহ মনে করিতে পারেন যে তিনি মানুষকে জোর পূর্বক বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করিতেছেন। যাহারা সব সময় নিন্দুক তাহারা জোরপূর্বক বিনোদন দেওয়া হইতেছে এমনটি ভাবিয়া থাকেন। তবে যাহারা সব কিছু ভালো মনে দেখেন, তাহারা তো মনে করিতে পারেন,  তিনি সদয় হইয়া মানুষকে আনন্দিত করিতেছেন। এ ভূবন আনন্দময়, এখানে নিরানন্দ থাকিয়া নিজেকে বা আত্মাকে কষ্ট দিবার কোনই কারণ নাই। তাই সুধীজনমাত্রই মনে করিতে পারেন যাহারা বেসুরো গলায় গান শোনান, তাহারা বিনোদন চাপাইয়া দেন না। দেশে বিনোদনের অভাব বোধ করিয়াই তাহারা ওই গান শুনাইয়া থাকেন। যদি তাহারা বুঝিতে পারেন যে দীঘকালীন বিনোদন জাকিয়া বসিয়াছে, তখন তাহারা আর কষ্ট করিয়া, সময় নষ্ট করিয়া- গান শুনাইয়া বিনোদন দেবার প্রয়োজন মনে করেন না।

বরং তাহারা তখন বুঝিতে পারেন ভালো বিনোদন শুধুমাত্র গানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। যেমন ধরুন, আগে রাজধানীর কাঁচা বাজার সহ সারা দেশের কাঁচা বাজারে( কিচেন মার্কেটে) মুরগি কিনিয়া কাটিয়া ছুলিয়া লইয়া যাইবার পরে- মুরগির দোকানগুলোতে মুরগির গলার (চিকেনের নেক) ঢিবি জমিয়া উঠিত। মুরগির গলা লইয়া যে একটি মহানন্দ আছে তাহা কেহই জানিত না। ইহা নিতান্ত দরিদ্র মানুষের হোটেলের খাবারের বিষয় বলিয়া কেহ কেহ জানিত।হঠাৎ করিয়া মুরগীর গলা খাইবার একটি উৎসব পড়িয়া গেলো- আর সেই গলা খাইবার জন্যে যখন দিকে দিকে “রব” উঠিল ও নামিল;  সেই রব আর মুরগির গলা খাইবার তীব্র বাসনার চিত্র যেমন মানুষকে আনন্দিত করিলো তেমনি যাহারা গলা খাইবার জন্য রব তুলিল তাহাদের আনন্দ দেখিয়া স্বয়ং মুরগিও কি বিনোদন উপভোগ করিলো না! কারণ যে গলা দিয়া সে কুর কুর করিয়া ডাকে সেই গলা যখন এতদিন পড়িয়া থাকিত, তাহাতে সে কি কষ্ট পাইতো না?  এখন তাহার সুস্বাদু ব্রেস্টমিট বা রানমিট বাদ দিয়া শুধু গলা খাইবার জন্যে যখন অশতিপর বৃদ্ধ হইতে শিশু অবধি নাঁচিয়া উঠিল তখন মানুষ কেন মুরগির শরীরেও কি বিনোদনের হিল্লোল উঠিল না?

ইহার পরে ধরা গেলো শিশু কিশোরদের জন্যে নতুন করিয়া রূপকথার জোয়ার আসিল। আহা কি আনন্দ! যেখানে শিশু কিশোররা ইউটিউবে ডুবিয়া গিয়াছিলো সেখানে তাহারা আবার তাহাদের নানী -দাদীদের সেই চির পরিচিত রূপকথায় ফিরিয়া আসিল। সময়ের বিবর্তনে রূপকথারও কিছু পরিবর্তন হইয়া থাকে। এমনকি রূপকথার নায়ক নায়িকাদের লিঙ্গান্তরও হইয়া থাকে। যদিও আধুনিক বিশ্বে উদারতন্ত্রে লিঙ্গর খুব বেশি গুরুত্ব নাই। সেখানে সমলিঙ্গ, লিঙ্গহীন সকলকে একই আনন্দে আনন্দিত করিবার একটি বাসনা আছে। যাহা তাহাদের কোন কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী মূল এজেন্ডাও হইয়া থাকে। যাহোক সেটা উন্নত দেশের রাজনৈতিক দল, যাহারা পৃথিবীর মাস্টারমাইন্ডদের অনুপ্রেরণা ও অনুপ্রেষণাদাতা তাহাদের লইয়া ভাবিয়া রূপকথার আনন্দ হইতে দূরে চলিয়া যাইবার প্রয়োজন নাই।

তাই দিকে দিকে দেখিতে পাওয়া গেলো সাতভাই চম্পা ও একটি বোন পারুল রূপকথা সাত বোন চম্পা ও একটি ভাই “হারাধন” হইয়া ফিরিয়া আসিল। আহা! আর যাই হোক রূপকথা তো, যাহাতে দাদা- দাদী ও নানা -নানীদের গলার স্বর মিশিয়া আাছে- তাহা শুনিয়া শিশু কি নাচিয়া উঠিবে না! কিশোর কি দল বাধিয়া বা গ্যাং ধরিয়া নাঁচিয়া উঠিবে না! উঠিতে হইবেই তো, না উঠিলে আর শিশু বা কিশোরগ্যাং বা দল কেন! আবার দাদা ও নানা কেন? উভয়ের কাছেই তো প্রিয় রূপকথা। একজন বলিতে ভালবাসেন, আরেকদল বিশ্বাস করিতে ভালবাসেন। এই ভালবাসিয়া বলা ও বিশ্বাস করিয়া ভালবাসা- ইহার চাইতে বড় বিনোদন আর কী হইতে পারে। আর সেখানে যদি দাদা বা নানা “হারাধন” ভাই হইয়া শিশু কিশোরগ্যাংদের লইয়া সাত বোন কে দিনের আলোয় বা রাতের আঁধারে আনিতে যায়- তাহা হইলে তাহার চাইতে আনন্দ আর কী হইতে পারে! কথায় আছে গাঙে গাঙে দেখা হয় তো বোনে বোনে দেখা হয় না। তাহার পরিবর্তে যদি যেখানে সাত বোন ফুল হইয়া -শুধু অন্যের বাগানে ফুটিয়া আছে- সেখানে হইতে কেবলই টুপ করিয়া ছিঁড়িয়া আনিতে হইবে- এমন একটি কাজের কথা মনে হইলেও তো নিজেকে রাজপুত্র বা কোটালপুত্র মনে হয়- যে কোন কৃষকের পুত্র বা কন্যার ছেড়া কাঁথার নিচে শুইয়া থাকিয়া। আর সেখানে যদি সত্যি সত্যি ছেড়া কাঁথা থেকে রাজা, রাজপুত্র বা কোটাল, কোটাল পুত্র হওয়া যায় তাহা হইলে তো আনন্দের ঢোলটি ধ্রিম ধ্রিম করিয়া বাজিয়া ওঠে। আর তখন যদি সেই ঢোল, “টাক ঢোল”, “ টাক ঢোল” বোল তুলিয়া যেখানে সেখানে বাজিয়া ওঠে তা হইলে যে আনন্দ নামিবে তাহার তুলনা কোথায় খুঁজিবে? ডি এল রায়ের “ এমন দেশ টি কোথাও খুঁজিয়া পাবে নাকো তুমি” হনুকরণে (অনুকরণের সঠিকার্থে) বলা যাইতে পারে,  এমন আনন্দ কোথাও খুঁজিয়া পাইবে নাকো তুমি।

রূপকথার জম্ম লইয়া যেমন কোন সাল বা তারিখ নাই তেমনি ইহা কে লিখিয়াছিলো তাহারও হদিস নাই। তবে রূপকথা বড়ই উদার- ইহা শুনিবার পরে যে কোন বালক বা কিশোর কিশোরী তাহা লইয়া তাহাদের কল্পনার জগতকে অনেক দূর লইয়া যাইতে পারে। বিদ্বানগন অবশ্য বলিয়া থাকেন, রূপকথা দেশে দেশে সৃষ্টি হইয়াছিলো, শিশু ও কিশোরদের কল্পনা বাড়াইবার জন্য। আর সেখানে যদি শিশু কিশোরগ্যাং তৈরি করিয়া সমবেত গ্যাং ধরিয়া কল্পনার জগত বাড়ানো যায়- তা হইলে তো ঢ্যাং ঢ্যাং করিয়া কিশোরগ্যাং যুবগ্যাং হইয়া উঠিবে। ইতিহাসে না থাকিলেও মহাকাব্যে শিশু কিশোরদের এমনি ঢ্যাং ঢ্যাং করিয়া শিশুকালেই যুবা হইবার কাহিনী তো আছে। তাহা হইতে বাংলায় একটি শব্দও আছে যাহা “বালখিল্য” । এই বালখিল্যরা মুনি ছিলো। তাহারা মায়ের পেট হইতে হাত মুঠা করিয়া চিৎকার করিয়া বাহির হইয়া আসিয়াছিলো। এবং সমগ্র যুবা ও বৃদ্ধদেরকে শাসন করিয়া বেড়াইতো।

তাই কিশোরগ্যাংকে বালখিল্য মুনিগ্যাং এ পরিণত না করিতে পারিলেও রূপকথার কল্পনায় তো তাহা সম্ভব হইবে।

তখন কোন এক বৃদ্ধ দাদা বা নানাকে সম্মুখে রাখিয়া এই বালখিল্য মুনিগ্যাং গভীর রাতে কল্পনায় সাত বোন চম্পাকে তুলিয়া আনিবার জন্যে দুলদুলে চড়িয়া, খোপবদ্ধ তরবারি লইয়া- সুরমা একে চোখে পাঠান বীরের মতো ছুটিতে পারিবে। সে ঘোড়াকে তাহারা বাতাসের বেগে ছোটাইয়া মুহূর্তে সাত বোন চম্পাকে তুলিয়া আনিয়া, নানাকে লইয়া নাচিতে নাচিতে নিজ মালিকানার পুকুরকে সমুদ্র মনে করিয়া আনন্দে ঝাপাইয়া পড়িতে পারিবে।

নিজ মালিকানার ওই সমুদ্রে বালখিল্যদের জলকেলিতে যদি তাহাদের সকল বসন স্রোতে ভাসিয়া যায় – তাহাও তাহাদের আনন্দ থামাইতে পারিবার কথা নহে। তাহাদের এই আনন্দ দেখিয়া মানুষ বিনোদন না পাইলেও বস্ত্রহীন নানা ও বালখিল্যগ্যাং তীরে উঠিয়া সাত বোনের সামনে দন্ডায়মান তো হইবে।  ইহাতে তাহাদের মনোজগতে কী পরিবর্তন ঘটিবে বা সাগরকূলের নাইয়ারা তাহা লইয়া বিনোদন পাইবে- না, লজ্জা পাইবে তাহাও বা কে জানে?

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ , The Present World.