১০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে দিলে আন্দোলন এর হুশিয়ারি

বিদেশিদের কাছে বন্দর হস্তান্তরের বিরোধিতা

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল যদি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে। ২৫ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত “দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের” এক আলোচনা সভায় নেতারা একযোগে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি প্রাকৃতিক ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান—যা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।

গয়েশ্বরের কড়া সমালোচনা: দুর্নীতি ও সরকারের ব্যর্থতা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। বরং আগের সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর রক্ষা করাই সবচেয়ে জরুরি।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বন্দর পরিচালনার জন্য যদি দেশীয় দক্ষ জনবল না থাকে, তাহলে এক্সপার্ট বিদেশ থেকে আনা যেতে পারে—যেমন গার্মেন্টস শিল্পে হয়েছিল। কিন্তু সরাসরি বন্দর হস্তান্তর নয়।’’

ইউনূস প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক ঐক্যের কথা

গয়েশ্বর আরও বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে সরকারের আচরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে ৩১ দফা নিয়ে আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সব বড় দল এই সংস্কার নিয়ে একমত। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আগেই যেন ঈশ্বর আমার মৃত্যু না দেন।”

সভায় অংশগ্রহণকারী নেতাদের বক্তব্য

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। সঞ্চালনায় ছিলেন এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু। বক্তব্য দেন বিভিন্ন দলের নেতারা, যেমন:

  • মোস্তফা জামাল হায়দার (জাতীয় পার্টি)
  • সাইফুল হক (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি)
  • রুহিন হোসেন প্রিন্স (সিপিবি)
  • মজিবুর রহমান মঞ্জু (এবি পার্টি)
  • বজলুর রশিদ ফিরোজ (বাসদ)
  • নাজমুল হক প্রধান (জাসদ)
  • নূরুল হক নূর (গণঅধিকার পরিষদ)
  • তারেক রহমান (আমজনতা পার্টি)

বন্দরের ইতিহাস ও নিরাপত্তার প্রশ্ন

সভায় সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ১৩৮ বছরের পুরোনো, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বন্দর। এই বন্দরে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষম জাহাজ ভিড়ে। তিনি বলেন, বন্দর লিজ দিলে বিদেশি কোম্পানি নিজেদের মতো করে ট্যারিফ নির্ধারণ করবে, এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষয় হবে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২১/২২ সালে শেখ হাসিনার জামাতা দুবাইয়ে আটক হওয়ার সময় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে একটি টার্মিনাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যা তখনও প্রতিহত করা হয়েছিল।

অভ্যন্তরীণ সরকার নিয়ে প্রশ্ন

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হওয়ায় তাদের উচিত নয় চট্টগ্রাম বন্দরের মতো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে গণশুনানি করা জরুরি। একই বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বন্দর লিজ, এনবিআর ভাঙা এসব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়।

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়। সাইফুল হক বলেন, “সরকারকে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদ থেকে সরাতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরকার না সরলে বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যেতে হবে।”

এই সভায় সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতারা একমত হয়েছেন যে, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক প্রাণশক্তি, যা কোনোভাবেই বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তারা সরকারকে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে দিলে আন্দোলন এর হুশিয়ারি

০৪:৫৭:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

বিদেশিদের কাছে বন্দর হস্তান্তরের বিরোধিতা

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল যদি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে। ২৫ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত “দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের” এক আলোচনা সভায় নেতারা একযোগে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি প্রাকৃতিক ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান—যা বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া হলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।

গয়েশ্বরের কড়া সমালোচনা: দুর্নীতি ও সরকারের ব্যর্থতা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। বরং আগের সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর রক্ষা করাই সবচেয়ে জরুরি।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বন্দর পরিচালনার জন্য যদি দেশীয় দক্ষ জনবল না থাকে, তাহলে এক্সপার্ট বিদেশ থেকে আনা যেতে পারে—যেমন গার্মেন্টস শিল্পে হয়েছিল। কিন্তু সরাসরি বন্দর হস্তান্তর নয়।’’

ইউনূস প্রসঙ্গ ও রাজনৈতিক ঐক্যের কথা

গয়েশ্বর আরও বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে সরকারের আচরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে ৩১ দফা নিয়ে আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সব বড় দল এই সংস্কার নিয়ে একমত। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আগেই যেন ঈশ্বর আমার মৃত্যু না দেন।”

সভায় অংশগ্রহণকারী নেতাদের বক্তব্য

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। সঞ্চালনায় ছিলেন এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু। বক্তব্য দেন বিভিন্ন দলের নেতারা, যেমন:

  • মোস্তফা জামাল হায়দার (জাতীয় পার্টি)
  • সাইফুল হক (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি)
  • রুহিন হোসেন প্রিন্স (সিপিবি)
  • মজিবুর রহমান মঞ্জু (এবি পার্টি)
  • বজলুর রশিদ ফিরোজ (বাসদ)
  • নাজমুল হক প্রধান (জাসদ)
  • নূরুল হক নূর (গণঅধিকার পরিষদ)
  • তারেক রহমান (আমজনতা পার্টি)

বন্দরের ইতিহাস ও নিরাপত্তার প্রশ্ন

সভায় সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ১৩৮ বছরের পুরোনো, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বন্দর। এই বন্দরে ১ হাজার থেকে আড়াই হাজার কন্টেইনার ধারণক্ষম জাহাজ ভিড়ে। তিনি বলেন, বন্দর লিজ দিলে বিদেশি কোম্পানি নিজেদের মতো করে ট্যারিফ নির্ধারণ করবে, এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ক্ষয় হবে এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২১/২২ সালে শেখ হাসিনার জামাতা দুবাইয়ে আটক হওয়ার সময় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে একটি টার্মিনাল দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যা তখনও প্রতিহত করা হয়েছিল।

অভ্যন্তরীণ সরকার নিয়ে প্রশ্ন

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হওয়ায় তাদের উচিত নয় চট্টগ্রাম বন্দরের মতো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে গণশুনানি করা জরুরি। একই বক্তব্যে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বন্দর লিজ, এনবিআর ভাঙা এসব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়।

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়। সাইফুল হক বলেন, “সরকারকে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে এবং বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদ থেকে সরাতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরকার না সরলে বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যেতে হবে।”

এই সভায় সর্বস্তরের রাজনৈতিক নেতারা একমত হয়েছেন যে, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনৈতিক প্রাণশক্তি, যা কোনোভাবেই বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তারা সরকারকে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অন্যথায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।