০১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

চীনা বিরল ধাতু রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণে খাঁদের মুখে ভারতীয় গাড়ি শিল্প

সংকটের পেছনের কারণ

এপ্রিলে চীন সাত ধরনের বিরল খনিজ ও ম্যাগনেটের রপ্তানিতে নতুন শর্ত আরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে উচ্চ শুল্ক বসায়। এর পর থেকেই এসব অপরিহার্য উপকরণ ভারতের পথে প্রায় বন্ধ। ইলেকট্রিক সিট, স্টিয়ারিং, ব্রেক, ওয়াইপার, অডিও সিস্টেম থেকে পেট্রোলের ইঞ্জিন আর বৈদ্যুতিক মোটর—সর্বত্রই এই খনিজের ব্যবহার অপরিহার্য।

আমদানি অনুমোদনের জটিল পথ

রপ্তানিকারকদের এখন লাইসেন্স নিতে হবে। ভারতীয় আমদানিকারকের আবেদন প্রথমে দেশের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড, পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেয়ে দিল্লিতে চীনা দূতাবাসে যায়। সেখান থেকে চীনের সরবরাহকারীর হাতে, শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। বিগত কয়েক সপ্তাহে পাঠানো ২০টিরও বেশি আবেদন এখনও বেইজিংয়ে আটকে আছে।

উৎপাদনে তীব্র চাপ

সাধারণত ৩–৬ সপ্তাহের মজুত থাকলেও দ্রুতই তা ফুরোতে চলেছে। মারুতি সুজুকি আগেই সরবরাহঝুঁকির সতর্কবার্তা দিয়েছিল। বাজাজ অটো জানিয়েছে, জুলাই থেকেই চৌম্বক সংকট উৎপাদনে ‘গুরুতর’ প্রভাব ফেলবে, যাকে তারা “দিগন্তে কালো মেঘ” বলছে।

সরকারের তৎপরতা

ভারতের ভারী শিল্প, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সমূহ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত তুলেছে। বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাস চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার চেষ্টা করছে। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

বাজার ও ভোক্তার ওপর প্রভাব

২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত ২,২৭০ মেট্রিক টন বিরল খনিজ আমদানি করে, যার ৬৫ শতাংশ আসে চীন থেকে। ইতিমধ্যে মজুরি বৃদ্ধি অস্থিরতা ও স্থায়ী মূল্যস্ফীতিতে ক্রেতারা ব্যয় কমাচ্ছেন। ২০২২–২৩ সালে গাড়ি বিক্রি ২৭ শতাংশ বেড়েছিল; ২০২৪–২৫ এ তা নেমে এসেছে মাত্র ২.৬ শতাংশে (৪৩.৭ লাখ ইউনিট)। দুটি চাকা বিক্রির গতি আগের বছরের ৯.৩ থেকে ৭.৭ শতাংশে নেমেছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মবিলিটির পুনীত গুপ্তা সতর্ক করেছেন—সংকট দীর্ঘ হলে দাম বাড়াতে হবে না হলে মুনাফা কমবে; আবার দাম বাড়ালে ভোক্তা আরও দূরে সরে যাবে। উৎপাদন ব্যাহত হলে ডেলিভারির সময়ও দীর্ঘ হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

একই কারণে জাপানে সুজুকি সুইফটের উৎপাদন বন্ধ হয়েছে—চীনা কণ্ট্রোলে জাপানি গাড়ি শিল্পে এটাই প্রথম প্রত্যক্ষ আঘাত। ইউরোপীয় অটোমোটিভ সরবরাহ সংস্থা সিএলইপিএ জানায়, মহাদেশে ইতিমধ্যে একাধিক প্লান্ট বন্ধ হয়ে পড়েছে, স্টক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বন্ধ হবে। এপ্রিলে জমা পড়া শত শত লাইসেন্স আবেদনের মাত্র এক-চতুর্থাংশই অনুমোদন পেয়েছে।

সামনে কী

বিরল খনিজের মূল্য বাড়া মোটামুটি নিশ্চিত; উৎপাদন ব্যাঘাতে বাজারে গাড়ির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সংকট কাটাতে দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান, বিকল্প সরবরাহ উৎস ও নীতি সমন্বয় এখন সময়ের দাবি; নইলে ভারতের গাড়ি শিল্পের সাম্প্রতিক গতি আবারও থমকে যেতে পারে।

 

চীনা বিরল ধাতু রপ্তানি-নিয়ন্ত্রণে খাঁদের মুখে ভারতীয় গাড়ি শিল্প

০২:৩০:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

সংকটের পেছনের কারণ

এপ্রিলে চীন সাত ধরনের বিরল খনিজ ও ম্যাগনেটের রপ্তানিতে নতুন শর্ত আরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে উচ্চ শুল্ক বসায়। এর পর থেকেই এসব অপরিহার্য উপকরণ ভারতের পথে প্রায় বন্ধ। ইলেকট্রিক সিট, স্টিয়ারিং, ব্রেক, ওয়াইপার, অডিও সিস্টেম থেকে পেট্রোলের ইঞ্জিন আর বৈদ্যুতিক মোটর—সর্বত্রই এই খনিজের ব্যবহার অপরিহার্য।

আমদানি অনুমোদনের জটিল পথ

রপ্তানিকারকদের এখন লাইসেন্স নিতে হবে। ভারতীয় আমদানিকারকের আবেদন প্রথমে দেশের ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড, পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেয়ে দিল্লিতে চীনা দূতাবাসে যায়। সেখান থেকে চীনের সরবরাহকারীর হাতে, শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। বিগত কয়েক সপ্তাহে পাঠানো ২০টিরও বেশি আবেদন এখনও বেইজিংয়ে আটকে আছে।

উৎপাদনে তীব্র চাপ

সাধারণত ৩–৬ সপ্তাহের মজুত থাকলেও দ্রুতই তা ফুরোতে চলেছে। মারুতি সুজুকি আগেই সরবরাহঝুঁকির সতর্কবার্তা দিয়েছিল। বাজাজ অটো জানিয়েছে, জুলাই থেকেই চৌম্বক সংকট উৎপাদনে ‘গুরুতর’ প্রভাব ফেলবে, যাকে তারা “দিগন্তে কালো মেঘ” বলছে।

সরকারের তৎপরতা

ভারতের ভারী শিল্প, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সমূহ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত তুলেছে। বেইজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাস চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার চেষ্টা করছে। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।

বাজার ও ভোক্তার ওপর প্রভাব

২০২৩–২৪ অর্থবছরে ভারত ২,২৭০ মেট্রিক টন বিরল খনিজ আমদানি করে, যার ৬৫ শতাংশ আসে চীন থেকে। ইতিমধ্যে মজুরি বৃদ্ধি অস্থিরতা ও স্থায়ী মূল্যস্ফীতিতে ক্রেতারা ব্যয় কমাচ্ছেন। ২০২২–২৩ সালে গাড়ি বিক্রি ২৭ শতাংশ বেড়েছিল; ২০২৪–২৫ এ তা নেমে এসেছে মাত্র ২.৬ শতাংশে (৪৩.৭ লাখ ইউনিট)। দুটি চাকা বিক্রির গতি আগের বছরের ৯.৩ থেকে ৭.৭ শতাংশে নেমেছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মবিলিটির পুনীত গুপ্তা সতর্ক করেছেন—সংকট দীর্ঘ হলে দাম বাড়াতে হবে না হলে মুনাফা কমবে; আবার দাম বাড়ালে ভোক্তা আরও দূরে সরে যাবে। উৎপাদন ব্যাহত হলে ডেলিভারির সময়ও দীর্ঘ হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

একই কারণে জাপানে সুজুকি সুইফটের উৎপাদন বন্ধ হয়েছে—চীনা কণ্ট্রোলে জাপানি গাড়ি শিল্পে এটাই প্রথম প্রত্যক্ষ আঘাত। ইউরোপীয় অটোমোটিভ সরবরাহ সংস্থা সিএলইপিএ জানায়, মহাদেশে ইতিমধ্যে একাধিক প্লান্ট বন্ধ হয়ে পড়েছে, স্টক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বন্ধ হবে। এপ্রিলে জমা পড়া শত শত লাইসেন্স আবেদনের মাত্র এক-চতুর্থাংশই অনুমোদন পেয়েছে।

সামনে কী

বিরল খনিজের মূল্য বাড়া মোটামুটি নিশ্চিত; উৎপাদন ব্যাঘাতে বাজারে গাড়ির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সংকট কাটাতে দ্রুত কূটনৈতিক সমাধান, বিকল্প সরবরাহ উৎস ও নীতি সমন্বয় এখন সময়ের দাবি; নইলে ভারতের গাড়ি শিল্পের সাম্প্রতিক গতি আবারও থমকে যেতে পারে।