০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • 42

শাসক দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন জেলা। খুন-জখম থেকে লুটপাট চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কত বড় চ্যালেঞ্জ এইসব ঘটনা?

আউশগ্রামের অন্য একটি ঘটনায় তৃণমূলের দুই শিবিরের বিবাদ গিয়ে পৌঁছায় থানায়। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যার সত্যতা যাচাই করেনি ডিডাব্লিউ। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, থানার মধ্যে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত দুজনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। এলাকার একটি নিকাশি নালা নির্মাণকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল তৈরি হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুলিশের সামনেই তৃণমূল নেতা অরূপ মৃধা আর এক তৃণমূল নেতা সাদেরুল শেখকে হুমকি দেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে গত ৪ জুনে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট হয়। মধুসূদনপুর এলাকায় তৃণমূলের একচেটিয়া দাপট। এখানকার পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য। সেখানে ত্রাণ বিলি নিয়ে বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যেই ঝগড়া গড়ায় কিল, চড় থেকে লাঠালাঠিতে। এতে ছয় জন আহত হন। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। নিজের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই পঞ্চায়েত প্রধান সুলেখা হালদার অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে এসে গন্ডগোল বাধিয়েছেন এক ছাত্রনেতা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বিধায়ক শওকত মোল্লা ও সাবেক বিধায়ক আরাবুল ইসলামের মধ্যে টানাপড়েন রয়েছে।

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই দলাদলি থেকে মুক্ত নয়। খোদ বিধায়কের বাড়িতে এমনই ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের বাড়িতে গত শনিবার চড়াও হন স্থানীয় বিজেপি কর্মী পলাশ ঢালি। তার সঙ্গে স্থানীয় আর এক বিজেপি নেতা রামপ্রসাদ শিকদারের গন্ডগোল চলছে। দুজনে বিধায়কের বাড়িতে ঝগড়া মেটাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় পলাশ ধারালো অস্ত্র নিয়ে রামপ্রসাদের উপরে চড়াও হন।

শাসক দলের হাতে বিরোধী নেতাকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে। ২০২৩ সালের মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়, বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়াকে খুন করা হয়। ৩৫ জন তৃণমূল কর্মীর নামে এফআইআর হয়েছিল। এই মামলার তদন্তভার হাতে নিয়ে এনআইএ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল।

গোষ্ঠী লড়াই রাজনৈতিক দলগুলির বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠলেও তা অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবনতি ঘটাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ হোক বা বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই এই হানাহানির ভয়ংকর ছবি দেখা যায় নির্বাচনে।

বছর দুয়েক আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে অনেক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে জুলাই মাসের নির্বাচন ও তার আগে প্রচার পর্বে মোট ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। নির্বাচনের দিন মারা গিয়েছিলেন ১৫ জন। এদের মধ্যে ৯ জন তৃণমূলের বাকি ৬ জন বিরোধী দলের। গ্রামবাংলায় রাজ্যের শাসক দলের দাপট থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকদের প্রাণ গিয়েছে বেশি।

সংঘাত বা হানির কারণ যাই হোক, কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ কেন রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না?

সম্প্রতি যে ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়েছিল, তার কেন্দ্রে ছিলেন বীরভূম জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। টেলিফোনে বোলপুর থানার আইসিকে অকথ্য গালিগালাজ করে ভুল স্বীকার করেন তিনি। বীরভূমের আর এক উদীয়মান নেতা কাজল শেখের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা বলে পরে জানা যায়।

এই ঘটনার পরেও অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এমনকী পুলিশি তলবে হাজিরা দিতে তিনি দেরি করেছেন। বিরোধীদের দাবি, শাসক দলের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ক্ষেত্রে শাসক দলের ভূমিকা ও পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “শাসক দলের কোন্দল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। এসব পরিস্থিতিতে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই, বিন্দুমাত্র সক্রিয় হলে পুলিশকে কেমন গালিগালাজ শুনতে হয়, সেটা কদিন আগে বীরভূমের নেতার ফোনের সংলাপ দেখেই আমরা বুঝেছি। দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কোনো রিপোর্ট পাঠালে, যার বিপক্ষে যাচ্ছে, তিনি পুলিশকে আক্রমণ করছেন।”

তার বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে পুলিশ স্বাভাবিকভাবে দলীয় প্রভাবশালী নেতার উপরে নির্ভর করে থাকে। পুলিশ বুঝতে পারছে না, কার কথা শুনবে।

পুলিশ বা প্রশাসনের একটি স্তরের আধিকারিক তার উচ্চতর পদাধিকারীর কথা শুনছেন না। দলীয় নেতা এ ব্যাপারে কী বলছেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকছেন। যে রাজনৈতিক নেতার দিকে এরা তাকিয়ে থাকছেন, তার সঙ্গে আর এক নেতার বিরোধ থাকতে পারে। এসব ভেবে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বীরভূম বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা আছে, তাই পুলিশ কাজ করতে পারছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষও মনে করছে কোনো সমস্যা হলে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে যাওয়া ভালো। তারা পুলিশ-প্রশাসনের বদলে নেতাদের কাছে যাচ্ছে। এই প্রবণতা আইনশৃঙ্খলার পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। এটা আমাদের অরাজক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, “রাজনীতি যতদিন আছে, ততদিন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ থাকবে। শাসক বা বিরোধী নির্বিশেষে। কংগ্রেস যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল না, তখন সোমেন মিত্র বনাম সুব্রত মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর লড়াইয়ে মানুষ খুন হয়েছে। সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন উত্তর ২৪ পরগনায় সুভাষ চক্রবর্তী ও অমিতাভ নন্দীর লড়াই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ফলে এখনো সেটা আছে।”

তার মতে, “শাসক দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, সেটা আমার মনে হয় না। তবে অবশ্যই এটা ঠিক, শাসক দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করতে হলে বা ব্যবস্থা নিতে গেলে, পুলিশের উপর চাপ থাকে।”

এই চাপ কেমন? তার ব্যাখ্যা দিয়ে সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “শাসক দলের আশ্রয়ে থাকলে, যদি কেউ বেআইনি অস্ত্রধারী অপরাধী হয়, তাহলে তার অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। অপরাধীরা নিরাপদে তাদের অপরাধ পরিচালনার জন্য সব শাসক দলে আশ্রয় নিয়ে নেয়। পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যদি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশ কাজ করতে পারত, তাহলে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সম্ভব হত।”

ডয়চে ভেলে বাংলা

পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ এবং আইনশৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ

০৮:০০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

শাসক দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন জেলা। খুন-জখম থেকে লুটপাট চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কত বড় চ্যালেঞ্জ এইসব ঘটনা?

আউশগ্রামের অন্য একটি ঘটনায় তৃণমূলের দুই শিবিরের বিবাদ গিয়ে পৌঁছায় থানায়। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যার সত্যতা যাচাই করেনি ডিডাব্লিউ। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, থানার মধ্যে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত দুজনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে। এলাকার একটি নিকাশি নালা নির্মাণকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল তৈরি হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুলিশের সামনেই তৃণমূল নেতা অরূপ মৃধা আর এক তৃণমূল নেতা সাদেরুল শেখকে হুমকি দেন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে গত ৪ জুনে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট হয়। মধুসূদনপুর এলাকায় তৃণমূলের একচেটিয়া দাপট। এখানকার পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য। সেখানে ত্রাণ বিলি নিয়ে বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যেই ঝগড়া গড়ায় কিল, চড় থেকে লাঠালাঠিতে। এতে ছয় জন আহত হন। তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। নিজের দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই পঞ্চায়েত প্রধান সুলেখা হালদার অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ, বহিরাগতদের নিয়ে এসে গন্ডগোল বাধিয়েছেন এক ছাত্রনেতা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বিধায়ক শওকত মোল্লা ও সাবেক বিধায়ক আরাবুল ইসলামের মধ্যে টানাপড়েন রয়েছে।

রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই দলাদলি থেকে মুক্ত নয়। খোদ বিধায়কের বাড়িতে এমনই ঘটনা ঘটেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের বাড়িতে গত শনিবার চড়াও হন স্থানীয় বিজেপি কর্মী পলাশ ঢালি। তার সঙ্গে স্থানীয় আর এক বিজেপি নেতা রামপ্রসাদ শিকদারের গন্ডগোল চলছে। দুজনে বিধায়কের বাড়িতে ঝগড়া মেটাতে গিয়েছিলেন। সেই সময় পলাশ ধারালো অস্ত্র নিয়ে রামপ্রসাদের উপরে চড়াও হন।

শাসক দলের হাতে বিরোধী নেতাকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে। ২০২৩ সালের মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায়, বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়াকে খুন করা হয়। ৩৫ জন তৃণমূল কর্মীর নামে এফআইআর হয়েছিল। এই মামলার তদন্তভার হাতে নিয়ে এনআইএ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল।

গোষ্ঠী লড়াই রাজনৈতিক দলগুলির বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠলেও তা অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবনতি ঘটাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ হোক বা বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই এই হানাহানির ভয়ংকর ছবি দেখা যায় নির্বাচনে।

বছর দুয়েক আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে অনেক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে জুলাই মাসের নির্বাচন ও তার আগে প্রচার পর্বে মোট ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। নির্বাচনের দিন মারা গিয়েছিলেন ১৫ জন। এদের মধ্যে ৯ জন তৃণমূলের বাকি ৬ জন বিরোধী দলের। গ্রামবাংলায় রাজ্যের শাসক দলের দাপট থাকা সত্ত্বেও তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকদের প্রাণ গিয়েছে বেশি।

সংঘাত বা হানির কারণ যাই হোক, কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পুলিশ কেন রাজনৈতিক কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না?

সম্প্রতি যে ঘটনা নিয়ে আলোড়ন পড়েছিল, তার কেন্দ্রে ছিলেন বীরভূম জেলার দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। টেলিফোনে বোলপুর থানার আইসিকে অকথ্য গালিগালাজ করে ভুল স্বীকার করেন তিনি। বীরভূমের আর এক উদীয়মান নেতা কাজল শেখের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা বলে পরে জানা যায়।

এই ঘটনার পরেও অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। এমনকী পুলিশি তলবে হাজিরা দিতে তিনি দেরি করেছেন। বিরোধীদের দাবি, শাসক দলের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ঠিক সময়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ক্ষেত্রে শাসক দলের ভূমিকা ও পুলিশের পদক্ষেপ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “শাসক দলের কোন্দল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। এসব পরিস্থিতিতে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই, বিন্দুমাত্র সক্রিয় হলে পুলিশকে কেমন গালিগালাজ শুনতে হয়, সেটা কদিন আগে বীরভূমের নেতার ফোনের সংলাপ দেখেই আমরা বুঝেছি। দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কোনো রিপোর্ট পাঠালে, যার বিপক্ষে যাচ্ছে, তিনি পুলিশকে আক্রমণ করছেন।”

তার বক্তব্য, “এই পরিস্থিতিতে পুলিশ স্বাভাবিকভাবে দলীয় প্রভাবশালী নেতার উপরে নির্ভর করে থাকে। পুলিশ বুঝতে পারছে না, কার কথা শুনবে।

পুলিশ বা প্রশাসনের একটি স্তরের আধিকারিক তার উচ্চতর পদাধিকারীর কথা শুনছেন না। দলীয় নেতা এ ব্যাপারে কী বলছেন, সেদিকে তাকিয়ে থাকছেন। যে রাজনৈতিক নেতার দিকে এরা তাকিয়ে থাকছেন, তার সঙ্গে আর এক নেতার বিরোধ থাকতে পারে। এসব ভেবে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বীরভূম বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা আছে, তাই পুলিশ কাজ করতে পারছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষও মনে করছে কোনো সমস্যা হলে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে যাওয়া ভালো। তারা পুলিশ-প্রশাসনের বদলে নেতাদের কাছে যাচ্ছে। এই প্রবণতা আইনশৃঙ্খলার পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। এটা আমাদের অরাজক ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, “রাজনীতি যতদিন আছে, ততদিন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষ থাকবে। শাসক বা বিরোধী নির্বিশেষে। কংগ্রেস যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল না, তখন সোমেন মিত্র বনাম সুব্রত মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর লড়াইয়ে মানুষ খুন হয়েছে। সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন উত্তর ২৪ পরগনায় সুভাষ চক্রবর্তী ও অমিতাভ নন্দীর লড়াই নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ফলে এখনো সেটা আছে।”

তার মতে, “শাসক দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, সেটা আমার মনে হয় না। তবে অবশ্যই এটা ঠিক, শাসক দলের নেতাকে গ্রেপ্তার করতে হলে বা ব্যবস্থা নিতে গেলে, পুলিশের উপর চাপ থাকে।”

এই চাপ কেমন? তার ব্যাখ্যা দিয়ে সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “শাসক দলের আশ্রয়ে থাকলে, যদি কেউ বেআইনি অস্ত্রধারী অপরাধী হয়, তাহলে তার অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। অপরাধীরা নিরাপদে তাদের অপরাধ পরিচালনার জন্য সব শাসক দলে আশ্রয় নিয়ে নেয়। পুলিশ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যদি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশ কাজ করতে পারত, তাহলে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকটাই সম্ভব হত।”

ডয়চে ভেলে বাংলা