০৩:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

এপি’র প্রতিবেদন: হাসিনা-বিরোধী বিদ্রোহের পরিণতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ

গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক গণআন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ নতুন সূচনা রচনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। ওই অভ্যুত্থানে তাঁর ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেন—নির্ভরযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, নির্বাচনপদ্ধতি ও সংবিধান সংস্কার করা এবং ১৫ জুলাই ২০২৪-এ শুরু হওয়া কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর রাস্তায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

এক বছর পর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এখনো সেই বিদ্রোহের পরিণতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় মেরুকরণ ও কঠিন আইনশৃঙ্খলা অবস্থার মুখে বাংলাদেশ আজ জর্জরিত।

হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভের এক বছর পর দেশের অবস্থা সম্পর্কে যা জানা দরকার:

রাজনৈতিক অস্থিরতা

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশে গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। যে ছাত্ররা হাসিনাকে অপসারণ করেছিল, তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে দুই প্রধান বংশগত দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ—এর প্রভাব ভাঙার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সমালোচকেরা বলেন, দলটি ইউনূস সরকার‑ঘনিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

এদিকে দেশের রাজনীতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ এক দশকেরও বেশি সময় দমন হওয়ার পর জামাত-ই-ইসলামী ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। ছাত্রদের নতুন দলের মিত্র এই সংগঠনটি, মে মাসে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের শূন্যতা পূরণে তৎপর। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে মুখোমুখি। স্বাধীনতা-বিরোধী অবস্থানের (১৯৭১) জন্য কুখ্যাত জামাতের বর্তমান জনসমর্থন অনিশ্চিত।

বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামী—দুই দলই প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার নিয়ে মুখোমুখি। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। ইউনূস আগামী এপ্রিলের নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও নড়বড়ে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে সংশয় বাড়ছে। সেনাপ্রধান চলতি ডিসেম্বরেই ভোট চান—যা ইউনূসের পছন্দ নয়।

“বিপ্লব-পরবর্তী হানিমুন বেশিক্ষণ টেকে না, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়,” মন্তব্য করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। “জনআদেশ ছাড়া (অর্থাৎ নির্বাচিত না হয়েই) গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা যে‑কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যই দুঃসাধ্য।”

নির্বাচনের আগে সংস্কার চান ইউনূস

ইউনূস নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছেন, কারণ তিনি সংবিধান থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা ও পুলিশ পর্যন্ত বিস্তৃত সংস্কার করতে চান। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে—একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন তার সীমা নির্ধারণ, দ্বিস্তরবিশিষ্ট সংসদ চালু করা এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য করা। মৌলিক কিছু সংস্কারের বিষয়ে এখনো ঐকমত্য নেই। বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামী শর্তসাপেক্ষে কিছু প্রস্তাব মেনে নিলেও অন্যগুলো নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জামাত-ই-ইসলামী চায় সরকারকে আরও সময় দিয়ে সংবিধান সংশোধন সম্পন্ন করতে, অথচ বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অনড়। ছাত্রনেতা‑গঠিত নতুন দলটিও মূলত জামাতের কৌশল অনুসরণ করছে।

“সংস্কার‑প্রক্রিয়া দেশের ঐক্য আনার কথা ছিল, কিন্তু সেটাই এখন বিরোধের কেন্দ্র,” বলেন কুগেলম্যান। “এক পক্ষ সময় বাড়াতে চায়, আরেক পক্ষ দ্রুত নির্বাচন চায়।”

মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ইসলামপন্থীদের উত্থান

ইউনূস সরকারের অধীন মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ থেকেই গেছে। সংখ্যালঘু হিন্দুরা অভিযোগ করছে, সরকার তাদের যথাযথ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। বাংলাদেশ হিন্দু‑বৌদ্ধ‑খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর শত শত হামলা হয়েছে।

হাসিনা‑সমর্থকেরা অভিযোগ করছে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কয়েক হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, যদিও প্রশাসন এসব দাবি অস্বীকার করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “হাসিনা আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হলেও নিরাপত্তা খাতে টেকসই সংস্কার কিংবা শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।”

এদিকে একাধিক ইসলামপন্থী গোষ্ঠী—যারা নারীর অধিকার সীমিত করা ও শরিয়া আইন প্রণয়নের দাবি তোলে—ক্ষমতার ভাগীদার হতে সক্রিয়। তারা বিএনপি কিংবা জামাত-ই-ইসলামীর মতো বড় দলের সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টা করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের গোষ্ঠীর নির্বাচনী সাফল্য ইতিহাসে সীমিত; তবু তাদের বাড়ন্ত প্রভাব জাতীয় রাজনীতিকে আরও খণ্ডিত করতে পারে।

বিদেশনীতি ও বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য

হাসিনা আমলে বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁর পতনের পর ইউনূস সরকার ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ঘনিষ্ঠতায় ঝুঁকেছে।

মার্চে ইউনূসের প্রথম রাষ্ট্রভ্রমণ ছিল বেইজিং, যেখানে তিনি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেন। বিপরীতে, পুরোনো মিত্র হাসিনার অপসারণে ক্ষুব্ধ ভারত এখনো তাঁকে ঢাকার অনুরোধ সত্ত্বেও প্রত্যর্পণ করেনি; বরং বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান সাময়িক স্থগিত রেখেছে।

পাশ্চাত্য ও জাতিসংঘ ইউনূস সরকারকে সমর্থন করলেও ঢাকার দীর্ঘদিনের ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ পররাষ্ট্রনীতিতে এখনো বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে কুগেলম্যান মনে করেন, দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে “ট্রাম্প‑ফ্যাক্টর”।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে ইউএসএইডের অর্থসাহায্য স্থগিত করেন, অথচ হাসিনা অপসারণ-পরবর্তী পুনর্গঠনপর্বে ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রত্যাশা করছিল।

“এখন ঢাকাকে এমন এক অনিয়মিত মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে সাজাতে হবে, যারা বাংলাদেশের দিকে মূলত বাণিজ্যিক চোখে তাকাবে,” মন্তব্য করেন কুগেলম্যান।

এপি’র প্রতিবেদন: হাসিনা-বিরোধী বিদ্রোহের পরিণতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ

০৭:১৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক গণআন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশ নতুন সূচনা রচনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। ওই অভ্যুত্থানে তাঁর ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেন—নির্ভরযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, নির্বাচনপদ্ধতি ও সংবিধান সংস্কার করা এবং ১৫ জুলাই ২০২৪-এ শুরু হওয়া কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পর রাস্তায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

এক বছর পর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এখনো সেই বিদ্রোহের পরিণতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় মেরুকরণ ও কঠিন আইনশৃঙ্খলা অবস্থার মুখে বাংলাদেশ আজ জর্জরিত।

হাসিনা-বিরোধী বিক্ষোভের এক বছর পর দেশের অবস্থা সম্পর্কে যা জানা দরকার:

রাজনৈতিক অস্থিরতা

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশে গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। যে ছাত্ররা হাসিনাকে অপসারণ করেছিল, তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে দুই প্রধান বংশগত দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ—এর প্রভাব ভাঙার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সমালোচকেরা বলেন, দলটি ইউনূস সরকার‑ঘনিষ্ঠ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

এদিকে দেশের রাজনীতি আরও জটিল হয়েছে, কারণ এক দশকেরও বেশি সময় দমন হওয়ার পর জামাত-ই-ইসলামী ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। ছাত্রদের নতুন দলের মিত্র এই সংগঠনটি, মে মাসে নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের শূন্যতা পূরণে তৎপর। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে মুখোমুখি। স্বাধীনতা-বিরোধী অবস্থানের (১৯৭১) জন্য কুখ্যাত জামাতের বর্তমান জনসমর্থন অনিশ্চিত।

বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামী—দুই দলই প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার নিয়ে মুখোমুখি। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়েও তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। ইউনূস আগামী এপ্রিলের নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও নড়বড়ে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে সংশয় বাড়ছে। সেনাপ্রধান চলতি ডিসেম্বরেই ভোট চান—যা ইউনূসের পছন্দ নয়।

“বিপ্লব-পরবর্তী হানিমুন বেশিক্ষণ টেকে না, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়,” মন্তব্য করেন ওয়াশিংটনভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান। “জনআদেশ ছাড়া (অর্থাৎ নির্বাচিত না হয়েই) গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা যে‑কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যই দুঃসাধ্য।”

নির্বাচনের আগে সংস্কার চান ইউনূস

ইউনূস নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছেন, কারণ তিনি সংবিধান থেকে শুরু করে বিচারব্যবস্থা ও পুলিশ পর্যন্ত বিস্তৃত সংস্কার করতে চান। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে—একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন তার সীমা নির্ধারণ, দ্বিস্তরবিশিষ্ট সংসদ চালু করা এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি নির্ভরযোগ্য করা। মৌলিক কিছু সংস্কারের বিষয়ে এখনো ঐকমত্য নেই। বিএনপি ও জামাত-ই-ইসলামী শর্তসাপেক্ষে কিছু প্রস্তাব মেনে নিলেও অন্যগুলো নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

জামাত-ই-ইসলামী চায় সরকারকে আরও সময় দিয়ে সংবিধান সংশোধন সম্পন্ন করতে, অথচ বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে অনড়। ছাত্রনেতা‑গঠিত নতুন দলটিও মূলত জামাতের কৌশল অনুসরণ করছে।

“সংস্কার‑প্রক্রিয়া দেশের ঐক্য আনার কথা ছিল, কিন্তু সেটাই এখন বিরোধের কেন্দ্র,” বলেন কুগেলম্যান। “এক পক্ষ সময় বাড়াতে চায়, আরেক পক্ষ দ্রুত নির্বাচন চায়।”

মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ইসলামপন্থীদের উত্থান

ইউনূস সরকারের অধীন মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ থেকেই গেছে। সংখ্যালঘু হিন্দুরা অভিযোগ করছে, সরকার তাদের যথাযথ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। বাংলাদেশ হিন্দু‑বৌদ্ধ‑খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর শত শত হামলা হয়েছে।

হাসিনা‑সমর্থকেরা অভিযোগ করছে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কয়েক হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে, যদিও প্রশাসন এসব দাবি অস্বীকার করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “হাসিনা আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ হলেও নিরাপত্তা খাতে টেকসই সংস্কার কিংবা শক্তিশালী, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে।”

এদিকে একাধিক ইসলামপন্থী গোষ্ঠী—যারা নারীর অধিকার সীমিত করা ও শরিয়া আইন প্রণয়নের দাবি তোলে—ক্ষমতার ভাগীদার হতে সক্রিয়। তারা বিএনপি কিংবা জামাত-ই-ইসলামীর মতো বড় দলের সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টা করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের গোষ্ঠীর নির্বাচনী সাফল্য ইতিহাসে সীমিত; তবু তাদের বাড়ন্ত প্রভাব জাতীয় রাজনীতিকে আরও খণ্ডিত করতে পারে।

বিদেশনীতি ও বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য

হাসিনা আমলে বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাঁর পতনের পর ইউনূস সরকার ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ঘনিষ্ঠতায় ঝুঁকেছে।

মার্চে ইউনূসের প্রথম রাষ্ট্রভ্রমণ ছিল বেইজিং, যেখানে তিনি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান নিশ্চিত করেন। বিপরীতে, পুরোনো মিত্র হাসিনার অপসারণে ক্ষুব্ধ ভারত এখনো তাঁকে ঢাকার অনুরোধ সত্ত্বেও প্রত্যর্পণ করেনি; বরং বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান সাময়িক স্থগিত রেখেছে।

পাশ্চাত্য ও জাতিসংঘ ইউনূস সরকারকে সমর্থন করলেও ঢাকার দীর্ঘদিনের ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ পররাষ্ট্রনীতিতে এখনো বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে কুগেলম্যান মনে করেন, দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে “ট্রাম্প‑ফ্যাক্টর”।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে ইউএসএইডের অর্থসাহায্য স্থগিত করেন, অথচ হাসিনা অপসারণ-পরবর্তী পুনর্গঠনপর্বে ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রত্যাশা করছিল।

“এখন ঢাকাকে এমন এক অনিয়মিত মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক নতুনভাবে সাজাতে হবে, যারা বাংলাদেশের দিকে মূলত বাণিজ্যিক চোখে তাকাবে,” মন্তব্য করেন কুগেলম্যান।