আর্কটিকে সামরিক মহড়া ও চ্যালেঞ্জ
ইউরোপের আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা ক্রমবর্ধমানভাবে মহড়া চালাচ্ছে। কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে সামরিক সংঘাত ঘটেনি। এখন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীরা অভিজ্ঞতার অভাবে যুদ্ধের সম্ভাবনা কেমন হতে পারে, তা কল্পনা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্কটিক যুদ্ধ হবে ভিন্ন ও কঠিন।
সুইডিশ সেনা সার্জেন্ট মেজর ফ্রেডরিক ফ্লিঙ্ক জানান, আধুনিক সৈন্যরা সাধারণত শরীরচর্চায় পেশি গঠন করে, কিন্তু আর্কটিকের হিমশীতল পরিবেশে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়। একজন সৈন্য প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ক্যালরি হারায়, এমনকি কঠোর অনুশীলনে অংশ নেওয়ার আগেই। ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

প্রযুক্তি বনাম প্রকৃতি
ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে ভবিষ্যৎ সংঘাতের একটি চিত্র দেখিয়েছে, কিন্তু আর্কটিক সম্পূর্ণ আলাদা। ইউক্রেনে ড্রোন আকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, অথচ আর্কটিকে জ্বালানি জমে যায়, ব্যাটারি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে। সেখানে ব্যবহৃত ড্রোনগুলো বিশেষভাবে তৈরি, বড় আকারের এবং রানওয়ে বা ট্রেলারের সাহায্যে পরিচালিত হয়।
জাহাজ ও বিমানের জন্য বিশেষ লুব্রিকেন্ট প্রয়োজন হয়। বরফ সাবমেরিনকে আড়াল দিলেও একই সঙ্গে নেভিগেশন ও যোগাযোগে সমস্যা তৈরি করে। এই ক্ষেত্রে রাশিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, কারণ তাদের রয়েছে বরফ ভাঙতে সক্ষম গোপনীয় সাবমেরিন ও দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।
অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দান লাইটস যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায়। তাই আর্কটিক প্রতিরক্ষায় এখনো পুরোনো কৌশল কার্যকর—সাদা পোশাক পরা পদাতিক, স্কি বা স্নো-মোবাইল ব্যবহার।
সৈন্যদের টিকে থাকার লড়াই

আর্কটিকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সেনাদের সপ্তাহের পর সপ্তাহ টিকিয়ে রাখা। শীতের ধাক্কা কতটা মারাত্মক হবে, আগে থেকে কেউ অনুমান করতে পারে না। ফ্লিঙ্কের অভিজ্ঞতায়, অনেক সময় সৈন্যরা অতিরিক্ত ঠান্ডায় মৌলিক জিনিসও ভুলে যায়। তিনি একবার দেখেন, একজন সৈন্য আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হয়ে শুধু হাঁটছিলেন, অথচ তার ব্যাগেই ছিল বিশেষ তিন স্তরের সুইডিশ স্লিপিং-ব্যাগ।
রাশিয়া ও ন্যাটোর কৌশলগত হিসাব
ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় রাশিয়া আপাতত ন্যাটোকে আক্রমণ করবে না। তবে পাঁচ বছরের মধ্যে মস্কো এমন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত হতে পারে।
ওয়াশিংটনের হাডসন ইনস্টিটিউটের ব্রায়ান ক্লার্ক বলেন, রাশিয়া আর্কটিকে প্রভাবশালী হলেও পশ্চিমা দেশগুলো ওই অঞ্চলের নৌপথ ও অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে রাশিয়ার স্বার্থকে চাপে রাখতে পারে। এটি এক ধরনের কৌশলগত অসাম্য, যা পশ্চিমাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে।
বিশেষ বাহিনীর প্রস্তুতি
রাশিয়া যদি আক্রমণ চালায়, তবে নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বাহিনীকে দ্রুত সহায়তা দেবে ন্যাটো। মার্কিন সেনারা জার্মানি ও পোল্যান্ড থেকে আর্কটিকে মোতায়েন হবে।

নরওয়ের “লং রেঞ্জ রিকনেসান্স প্যাট্রোল” বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে তারা শত্রুপক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে, তুষারের গুহায় লুকিয়ে থাকে, হরিণ জবাই করে আগুনে রান্না করে। সম্প্রতি তারা ১০০ দিনের মহড়ায় ১৫০০ মাইল অতিক্রম করেছে, মাত্র একবার পুনরায় সরবরাহ পেয়েছে।
প্রশিক্ষণ ও মানসিক অভিযোজন
নর্ডিক প্রশিক্ষকেরা ন্যাটো মিত্রদের শেখাচ্ছেন কীভাবে তুষারে টিকে থাকা যায়, গাছ ছাড়া জায়গায় লুকানো যায়, কাঁচা মাছ খাওয়া যায় এবং গ্রীষ্মে দিনের আলোর মধ্যে মানিয়ে নেওয়া যায়।
নরওয়ের নর্থ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার তের্যে ব্রুইগার্ড বলেন, নতুনদের প্রায় এক মাস লাগে ঠান্ডায় অভ্যস্ত হতে। ঠান্ডাকে প্রতিরোধ করা নয়, বরং মেনে নেওয়াই টিকে থাকার মূল কৌশল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















