১০:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
ক্রেপাসকুলার সাপ: প্রকৃতির এক রহস্যময় সত্তা আমেরিকা ও চীন স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে: কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা পেরিয়ে কীভাবে এগোনো যায় কাল থেকেই কার্যকর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ইলিশের চেয়ে গরুর মাংসের দামই এখন বড় দুশ্চিন্তা নেভিল মাসকেলাইন: একটি প্যাডেড স্যুট পরা পুরুষ কীভাবে নেভিগেশন শিল্পে বিপ্লব আনলেন মাদারল্যান্ড কখনো ভোলে না’ বীরকে —তাইওয়ানে গোপন মিশনে শহীদ উউ শিকে স্মরণ করছে চীন বার্নার্ড জুলিয়ানের করুণ জীবন— যার উত্থান ও পতন সমান নাটকীয় ১৯২৯—যে বছরে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার স্বপ্ন নগদহীন পেমেন্ট ভালো—কিন্তু সেটি ব্যর্থ হলে সমস্যা মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭)

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধা

৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

ইসরায়েল বর্তমানে হামাসের দেওয়া ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পরীক্ষা করছে। এই প্রস্তাবে গাজার হাতে থাকা অর্ধেক ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে। তবে ইসরায়েল স্পষ্ট করেছে যে যুদ্ধ শেষ করতে হলে সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।

প্রস্তাবটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শিগগির বৈঠক ডাকবেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। ফিলিস্তিনি পক্ষ জানিয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যেই ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে।

মধ্যস্থতায় মিশর ও কাতার

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিশর ও কাতার। মার্কিন সমর্থিত প্রস্তাবটিতে গাজার ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ২০০ ফিলিস্তিনি দণ্ডিত বন্দি এবং অজ্ঞাতসংখ্যক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ককে মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

হামাস আরও শত শত গাজাবাসী বন্দি মুক্তির দাবি করেছে বলে মিশরের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলের হিসাবে ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দি গাজায় রয়েছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলি রাজনৈতিক সূত্র বলছে, দেশের নীতি স্পষ্ট—সব বন্দিকে মুক্ত করতে হবে। সূত্রের ভাষায়, “আমরা হামাসকে শেষ পর্যায়ে মোকাবিলা করছি এবং কোনো বন্দিকে ফেলে আসব না।”

তবে এই অবস্থান সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সমতুল্য নয়। এর মানে হলো, আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

কাতারের সতর্কবার্তা

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সফল হলে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির পথ খুলে যাবে। তিনি সতর্ক করেন, যদি প্রস্তাব ব্যর্থ হয়, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

প্রস্তাবে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার ও গাজায় আরও বেশি মানবিক সহায়তা ঢোকার সুযোগ রাখার কথাও উল্লেখ আছে। বর্তমানে ইসরায়েল গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, আর ২২ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যাভাব ক্রমেই মারাত্মক হচ্ছে।

নতুন সামরিক পরিকল্পনা

আলোচনার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার রাতে সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনাটি চার ধাপে সাজানো হয়েছে—দক্ষিণ গাজায় মানবিক অবকাঠামো গড়ে তোলা, গাজা সিটি খালি করানো, শহর ঘিরে ফেলা এবং শেষে স্থল অভিযান চালানো।

এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ভয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণে পালিয়ে গেছে। গাজায় মঙ্গলবার ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার মানুষের প্রতিক্রিয়া

খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। আবদাল্লাহ আল খাওয়াজা বললেন, “ইসরায়েল সব সময় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, এবারও একই হবে বলে আশঙ্কা করি।”

অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত আওয়াদ লাবদে আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চাই ইসরায়েল এবার ইতিবাচক জবাব দিক।”

ইসরায়েলের ভেতরে চাপ

যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বড় প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছে। গত রবিবার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

তবে নেতানিয়াহুর চরম দক্ষিণপন্থি মন্ত্রীরা, যেমন বেজালেল স্মোত্রিচ ও ইতামার বেন-গভির, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত না করা পর্যন্ত থামার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা গাজা দখল ও সংযুক্ত করার কথাও বলেছেন।

হামাসের অবস্থান

হামাস কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশিক জানিয়েছেন, তারা যে প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন তা একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি, যা যুদ্ধ শেষের আলোচনার পথ তৈরি করবে। এবার তারা অতিরিক্ত কোনো শর্ত দেয়নি বলেও মধ্যস্থতাকারী সূত্র জানিয়েছে।

তবে যুদ্ধ পুরোপুরি থামার সম্ভাবনা এখনও দূরবর্তী। ইসরায়েল শর্ত দিয়েছে, হামাসকে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে হবে এবং নেতাদের গাজা ছাড়তে হবে। এসব শর্ত হামাস প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুদ্ধের পটভূমি

যুদ্ধ শুরু হয় যখন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এর পর থেকে ইসরায়েলের অভিযানে ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে যোদ্ধা আর সাধারণ নাগরিকের হিসাব আলাদা করা হয়নি।

এই আক্রমণে গাজার জনসংখ্যার বেশির ভাগ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্রেপাসকুলার সাপ: প্রকৃতির এক রহস্যময় সত্তা

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধা

০৪:৫৬:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

ইসরায়েল বর্তমানে হামাসের দেওয়া ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পরীক্ষা করছে। এই প্রস্তাবে গাজার হাতে থাকা অর্ধেক ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তির শর্ত রাখা হয়েছে। তবে ইসরায়েল স্পষ্ট করেছে যে যুদ্ধ শেষ করতে হলে সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।

প্রস্তাবটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শিগগির বৈঠক ডাকবেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। ফিলিস্তিনি পক্ষ জানিয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যেই ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে।

মধ্যস্থতায় মিশর ও কাতার

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে মিশর ও কাতার। মার্কিন সমর্থিত প্রস্তাবটিতে গাজার ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি বন্দির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ২০০ ফিলিস্তিনি দণ্ডিত বন্দি এবং অজ্ঞাতসংখ্যক নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ককে মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।

হামাস আরও শত শত গাজাবাসী বন্দি মুক্তির দাবি করেছে বলে মিশরের নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলের হিসাবে ৫০ জন ইসরায়েলি বন্দি গাজায় রয়েছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত।

ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলি রাজনৈতিক সূত্র বলছে, দেশের নীতি স্পষ্ট—সব বন্দিকে মুক্ত করতে হবে। সূত্রের ভাষায়, “আমরা হামাসকে শেষ পর্যায়ে মোকাবিলা করছি এবং কোনো বন্দিকে ফেলে আসব না।”

তবে এই অবস্থান সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সমতুল্য নয়। এর মানে হলো, আলোচনার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

কাতারের সতর্কবার্তা

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সফল হলে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির পথ খুলে যাবে। তিনি সতর্ক করেন, যদি প্রস্তাব ব্যর্থ হয়, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

প্রস্তাবে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার ও গাজায় আরও বেশি মানবিক সহায়তা ঢোকার সুযোগ রাখার কথাও উল্লেখ আছে। বর্তমানে ইসরায়েল গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, আর ২২ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যাভাব ক্রমেই মারাত্মক হচ্ছে।

নতুন সামরিক পরিকল্পনা

আলোচনার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ মঙ্গলবার রাতে সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনাটি চার ধাপে সাজানো হয়েছে—দক্ষিণ গাজায় মানবিক অবকাঠামো গড়ে তোলা, গাজা সিটি খালি করানো, শহর ঘিরে ফেলা এবং শেষে স্থল অভিযান চালানো।

এরই মধ্যে হাজার হাজার মানুষ সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের ভয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণে পালিয়ে গেছে। গাজায় মঙ্গলবার ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজার মানুষের প্রতিক্রিয়া

খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। আবদাল্লাহ আল খাওয়াজা বললেন, “ইসরায়েল সব সময় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, এবারও একই হবে বলে আশঙ্কা করি।”

অন্যদিকে বাস্তুচ্যুত আওয়াদ লাবদে আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা চাই ইসরায়েল এবার ইতিবাচক জবাব দিক।”

ইসরায়েলের ভেতরে চাপ

যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বড় প্রতিবাদ সৃষ্টি করেছে। গত রবিবার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ বন্দিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

তবে নেতানিয়াহুর চরম দক্ষিণপন্থি মন্ত্রীরা, যেমন বেজালেল স্মোত্রিচ ও ইতামার বেন-গভির, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং হামাসকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত না করা পর্যন্ত থামার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা গাজা দখল ও সংযুক্ত করার কথাও বলেছেন।

হামাসের অবস্থান

হামাস কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশিক জানিয়েছেন, তারা যে প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন তা একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি, যা যুদ্ধ শেষের আলোচনার পথ তৈরি করবে। এবার তারা অতিরিক্ত কোনো শর্ত দেয়নি বলেও মধ্যস্থতাকারী সূত্র জানিয়েছে।

তবে যুদ্ধ পুরোপুরি থামার সম্ভাবনা এখনও দূরবর্তী। ইসরায়েল শর্ত দিয়েছে, হামাসকে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে হবে এবং নেতাদের গাজা ছাড়তে হবে। এসব শর্ত হামাস প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে।

যুদ্ধের পটভূমি

যুদ্ধ শুরু হয় যখন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এর পর থেকে ইসরায়েলের অভিযানে ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন। এদের মধ্যে যোদ্ধা আর সাধারণ নাগরিকের হিসাব আলাদা করা হয়নি।

এই আক্রমণে গাজার জনসংখ্যার বেশির ভাগ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।