১০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
শতবর্ষে পরাবাস্তবতার বিস্ময়: স্বপ্ন আর অবচেতনের শিল্পযাত্রা ভেনেজুয়েলা ও কিউবা: সামনে কী প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে তারা। তার মূল্য দিতে হচ্ছে যন্ত্রণাদায়কভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মহাপ্রয়াণ কিমোনোর কাপড়ে নতুন জীবন, বিলাসী পোশাকে জাপানি ঐতিহ্যের আধুনিক রূপ টোকিওর কফি বাজারে ম্যামথ কফির ঝড় গাঁজার নির্যাসে দীর্ঘমেয়াদি পিঠের ব্যথা কমার প্রমাণ মিলছে গবেষণায় ছোট বিমানবন্দরের বড় সুবিধা, ভিড় আর ঝামেলা এড়িয়ে বদলাচ্ছে যাত্রীদের উড়াল অভ্যাস ভারী বর্ষণে দক্ষিণ স্পেনে আকস্মিক বন্যা, নিহত ১ নিখোঁজ ২ হলিউডের অন্ধকার পর্দা: ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মালিকানা লড়াইয়ে অনিশ্চিত প্রেক্ষাগৃহের ভবিষ্যৎ

খেলাপিদের জন্য কড়া নিয়ম: ঋণ, এলসি ও গ্যারান্টি বন্ধ

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে আসছে বড় পরিবর্তন। নতুন আইন অনুযায়ী, একবার ঋণখেলাপি হলে কেউ আর ঋণ, এলসি বা গ্যারান্টি নিতে পারবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নিয়ম কার্যকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

আইন সংশোধনের প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সংশোধনীর খসড়া ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরেই এটি অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হবে।

খেলাপিদের কঠোর শাস্তি

নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—একবার ঋণখেলাপি হলে আর কোনো ঋণ বা সুবিধা মিলবে না।
২০২৩ সালে যুক্ত হওয়া ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ জটিলতার কারণে এটি কার্যকর হয়নি।
তবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান শাস্তি বহাল থাকবে।

পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন

পরিচালনা পর্ষদে সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ২০ থেকে ১৫ করা হবে।
এর অর্ধেক সদস্য হতে হবে স্বতন্ত্র পরিচালক। তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
বর্তমানে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক রাখা বাধ্যতামূলক থাকলেও তা বাড়িয়ে সাত-আট জন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে নিরপেক্ষতা বাড়বে।

পরিবারতন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ

বর্তমানে একই পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পরিচালক থাকতে পারেন। আত্মীয়তার সূত্রে আরও দুজন যোগ হওয়ার সুযোগও আছে।
নতুন আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন পরিচালক থাকার বিধান আনা হচ্ছে।
‘পরিবারের’ সংজ্ঞায় শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এভাবে পরিবারতন্ত্র ও আত্মীয় নিয়োগ কমানোই মূল লক্ষ্য।

মেয়াদ সীমিতকরণ

এখন একজন পরিচালক টানা ১২ বছর দায়িত্বে থাকতে পারেন।
নতুন নিয়মে তা কমিয়ে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ৬ বছর করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘদিন একই ব্যক্তি দায়িত্বে থাকলে প্রভাবশালী গোষ্ঠী তৈরি হয়, যা শৃঙ্খলা নষ্ট করে।

গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণনীতি

আগে কোনো ব্যবসায়িক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলেও অন্য প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা নিতে পারত।
নতুন আইনে এই সুযোগ থাকবে না।
একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে পুরো গ্রুপই ঋণ সুবিধা হারাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. নজরুল হুদা বলেন, খেলাপিকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বা ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভাগ করা বাস্তবে কার্যকর হয়নি, বরং এতে দুর্নীতির সুযোগ বেড়েছিল।
তিনি মনে করেন, বোর্ড ছোট করা ও স্বতন্ত্র পরিচালক বাড়ানো ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যোগ্য ও পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করা।

আইএমএফের শর্ত পূরণ

২০২২ সালে আইএমএফ ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ করেছিল। তখন রাজনৈতিক কারণে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
এবার সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই এই সংস্কার অপরিহার্য।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন এই আইন বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও পরিবারতন্ত্র কমবে। এতে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে আইন বাস্তবায়নের কঠোরতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।

জনপ্রিয় সংবাদ

শতবর্ষে পরাবাস্তবতার বিস্ময়: স্বপ্ন আর অবচেতনের শিল্পযাত্রা

খেলাপিদের জন্য কড়া নিয়ম: ঋণ, এলসি ও গ্যারান্টি বন্ধ

০৬:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে আসছে বড় পরিবর্তন। নতুন আইন অনুযায়ী, একবার ঋণখেলাপি হলে কেউ আর ঋণ, এলসি বা গ্যারান্টি নিতে পারবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নিয়ম কার্যকর হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

আইন সংশোধনের প্রস্তুতি

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সংশোধনীর খসড়া ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরেই এটি অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর হবে।

খেলাপিদের কঠোর শাস্তি

নতুন আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—একবার ঋণখেলাপি হলে আর কোনো ঋণ বা সুবিধা মিলবে না।
২০২৩ সালে যুক্ত হওয়া ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ ধারা বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ জটিলতার কারণে এটি কার্যকর হয়নি।
তবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান শাস্তি বহাল থাকবে।

পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন

পরিচালনা পর্ষদে সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ২০ থেকে ১৫ করা হবে।
এর অর্ধেক সদস্য হতে হবে স্বতন্ত্র পরিচালক। তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
বর্তমানে তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক রাখা বাধ্যতামূলক থাকলেও তা বাড়িয়ে সাত-আট জন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে নিরপেক্ষতা বাড়বে।

পরিবারতন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ

বর্তমানে একই পরিবার থেকে সর্বোচ্চ তিনজন পরিচালক থাকতে পারেন। আত্মীয়তার সূত্রে আরও দুজন যোগ হওয়ার সুযোগও আছে।
নতুন আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দুজন পরিচালক থাকার বিধান আনা হচ্ছে।
‘পরিবারের’ সংজ্ঞায় শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এভাবে পরিবারতন্ত্র ও আত্মীয় নিয়োগ কমানোই মূল লক্ষ্য।

মেয়াদ সীমিতকরণ

এখন একজন পরিচালক টানা ১২ বছর দায়িত্বে থাকতে পারেন।
নতুন নিয়মে তা কমিয়ে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ৬ বছর করা হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘদিন একই ব্যক্তি দায়িত্বে থাকলে প্রভাবশালী গোষ্ঠী তৈরি হয়, যা শৃঙ্খলা নষ্ট করে।

গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণনীতি

আগে কোনো ব্যবসায়িক গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলেও অন্য প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা নিতে পারত।
নতুন আইনে এই সুযোগ থাকবে না।
একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে পুরো গ্রুপই ঋণ সুবিধা হারাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. নজরুল হুদা বলেন, খেলাপিকে ‘ইচ্ছাকৃত’ বা ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভাগ করা বাস্তবে কার্যকর হয়নি, বরং এতে দুর্নীতির সুযোগ বেড়েছিল।
তিনি মনে করেন, বোর্ড ছোট করা ও স্বতন্ত্র পরিচালক বাড়ানো ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যোগ্য ও পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করা।

আইএমএফের শর্ত পূরণ

২০২২ সালে আইএমএফ ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ করেছিল। তখন রাজনৈতিক কারণে কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
এবার সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই এই সংস্কার অপরিহার্য।

অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন এই আইন বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও পরিবারতন্ত্র কমবে। এতে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং সাধারণ আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে আইন বাস্তবায়নের কঠোরতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর।