০৩:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনা গবেষকদের নতুন তত্ত্ব: সময় কি সত্যিই পেছনে যায় না ফুজিয়ান যুদ্ধজাহাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, জে–১০সি’র সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা: ২০২৫ সালে চীনের সামরিক অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ দিক ব্রোঞ্জ যুগের কবরস্থান জানাল প্রাচীন চীনে লাল চালের মদ তৈরির রহস্য চীনের অফশোর ইউয়ান বড় মানসিক সীমা ভেঙে শক্তিশালী, মূল্যবৃদ্ধির গতি জোরালো ৫০ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে আলোচিত ‘জুলাইযোদ্ধা’ সুরভী গ্রেপ্তার চার্চে উড়ো চিঠি ও হুমকিতে উদ্বেগ বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতাদের জামায়াতের সঙ্গে জোটে এনসিপি কার্যত বিলীন হবে: আব্দুল কাদের রাউজানে একের পর এক হিন্দু বাড়িতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ, তথ্য দিলে পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের রাউজানে একের পর এক হিন্দু বাড়িতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ, তথ্য দিলে পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের অ্যাশেজে ধাক্কা আর চাপের মুখে বেন স্টোকস, সতীর্থদের জন্য সহমর্মিতা চাইলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক

ইন্দোনেশিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা

শিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া
২০১২ সালে আরিস গুনান্দার পারমাণবিক প্রকৌশল পড়ার জন্য যোগ দিয়েছিলেন যোগজাকার্তায়। সরকার তখন ব্যাংকা দ্বীপে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিচ্ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো কয়লা নির্ভর জ্বালানি নীতি বেছে নেওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেমে যায়। গুনান্দারসহ অনেক শিক্ষার্থী অন্য পেশায় চলে যান।

নতুন করে আশার আলো
সাম্প্রতিক সময়ে আবার ব্যাংকা দ্বীপে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আলোচনা শুরু হয়েছে। ১২ লাখ মানুষের এ দ্বীপে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন নেই, পুরোপুরি নির্ভরশীল সুমাত্রার ওপর। ২০২৪ সালের জুনে এক বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তিন দিন পর্যন্ত দ্বীপ অন্ধকারে ছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থরকন গেলাসা নামের একটি ছোট দ্বীপে পরীক্ষামূলক কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করেছে।

থরকনের প্রস্তাব
থরকন একটি ভিন্নধর্মী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়—মল্টেন সল্ট বা গলিত লবণ রিঅ্যাক্টর। এটি প্রচলিত ইউরেনিয়ামের পাশাপাশি টিন খনির উপজাত থোরিয়াম থেকেও শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। ব্যাংকা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টিন উৎপাদন এলাকা। ফলে থরকনের আগ্রহ এখানেই বেশি।
ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাপেতেন থরকনের সাইট মূল্যায়ন অনুমোদন দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি পিএলএন বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে।

বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক আগ্রহ
থরকন সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এতে যুক্ত আছেন মার্কিন হেজ ফান্ড ম্যানেজার গ্যারি বার্গস্ট্রম এবং লন্ডনভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্রুপ এক্সাস্কেল ফান্ড।
শুধু থরকন নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশও ইন্দোনেশিয়ায় পারমাণবিক শক্তি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে দেশটি কয়লার বিকল্প খুঁজছে।

স্থানীয় মানুষের সংশয়
যদিও প্রকল্পে অগ্রগতি হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়ে গেছে। গেলাসা দ্বীপ জনবসতিহীন হলেও মৎস্যজীবীরা ঝড় থেকে আশ্রয়ের জন্য দ্বীপটি ব্যবহার করেন। তাঁদের আশঙ্কা, বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সে সুযোগ হারাতে হবে।
সেন্ট্রাল ব্যাংকার প্রশাসক আলগাফ্রি রহমানও বলেন, স্থানীয় মানুষ আসলে এখনো থোরিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি ভালোভাবে বোঝে না। সাবেক পারমাণবিক গবেষক ও সংসদ সদস্য মুলিয়ান্টো মনে করেন, পরীক্ষিত প্রযুক্তিই আগে ব্যবহার করা উচিত।

সরকারের পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৬০ সালের মধ্যে দেশের ১৪ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক উৎস থেকে আসবে। ২০৩২ সালের মধ্যে প্রথম রিঅ্যাক্টর চালু হওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যদিও বাস্তবায়ন ২০২৯ সালেও সম্ভব হতে পারে। ব্যাংকা-বেলিতুং ও পশ্চিম কালিমান্তানকে প্রথম স্থাপনের জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
থরকন ২০২৭ সালে কাজ শুরু করে ২০২৮ সালের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র চালু করতে চায়। পরবর্তী ধাপে ২০৩৫ সালের মধ্যে ক্ষমতা বাড়িয়ে ৪ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও আইনি জটিলতা
প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনগত ও প্রশাসনিক কাঠামোর অভাব। এখনো পারমাণবিক কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টীয় বিধান চূড়ান্ত হয়নি। জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাপেতেনও স্বীকার করেছে, আগামী এক-দুই বছর হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
“যদি এখন ভিত্তি তৈরি না হয়, ভবিষ্যতে আর সম্ভব নাও হতে পারে,” বলেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান সুগেং সুমবারদজো।

উপসংহার
ইন্দোনেশিয়া কয়লার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই জ্বালানি খুঁজছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ সেই সম্ভাবনার একটি বড় অংশ হতে পারে। তবে প্রযুক্তি, অর্থায়ন, জনমত ও প্রশাসনিক কাঠামোর সমন্বয় ছাড়া এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনা গবেষকদের নতুন তত্ত্ব: সময় কি সত্যিই পেছনে যায় না

ইন্দোনেশিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা

০৭:২৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

শিক্ষার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া
২০১২ সালে আরিস গুনান্দার পারমাণবিক প্রকৌশল পড়ার জন্য যোগ দিয়েছিলেন যোগজাকার্তায়। সরকার তখন ব্যাংকা দ্বীপে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিচ্ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো কয়লা নির্ভর জ্বালানি নীতি বেছে নেওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেমে যায়। গুনান্দারসহ অনেক শিক্ষার্থী অন্য পেশায় চলে যান।

নতুন করে আশার আলো
সাম্প্রতিক সময়ে আবার ব্যাংকা দ্বীপে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আলোচনা শুরু হয়েছে। ১২ লাখ মানুষের এ দ্বীপে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন নেই, পুরোপুরি নির্ভরশীল সুমাত্রার ওপর। ২০২৪ সালের জুনে এক বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে তিন দিন পর্যন্ত দ্বীপ অন্ধকারে ছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থরকন গেলাসা নামের একটি ছোট দ্বীপে পরীক্ষামূলক কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা করেছে।

থরকনের প্রস্তাব
থরকন একটি ভিন্নধর্মী প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়—মল্টেন সল্ট বা গলিত লবণ রিঅ্যাক্টর। এটি প্রচলিত ইউরেনিয়ামের পাশাপাশি টিন খনির উপজাত থোরিয়াম থেকেও শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম। ব্যাংকা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টিন উৎপাদন এলাকা। ফলে থরকনের আগ্রহ এখানেই বেশি।
ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাপেতেন থরকনের সাইট মূল্যায়ন অনুমোদন দিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি পিএলএন বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করেছে।

বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক আগ্রহ
থরকন সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এতে যুক্ত আছেন মার্কিন হেজ ফান্ড ম্যানেজার গ্যারি বার্গস্ট্রম এবং লন্ডনভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্রুপ এক্সাস্কেল ফান্ড।
শুধু থরকন নয়, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশও ইন্দোনেশিয়ায় পারমাণবিক শক্তি বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর লক্ষ্যে দেশটি কয়লার বিকল্প খুঁজছে।

স্থানীয় মানুষের সংশয়
যদিও প্রকল্পে অগ্রগতি হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়ে গেছে। গেলাসা দ্বীপ জনবসতিহীন হলেও মৎস্যজীবীরা ঝড় থেকে আশ্রয়ের জন্য দ্বীপটি ব্যবহার করেন। তাঁদের আশঙ্কা, বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সে সুযোগ হারাতে হবে।
সেন্ট্রাল ব্যাংকার প্রশাসক আলগাফ্রি রহমানও বলেন, স্থানীয় মানুষ আসলে এখনো থোরিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি ভালোভাবে বোঝে না। সাবেক পারমাণবিক গবেষক ও সংসদ সদস্য মুলিয়ান্টো মনে করেন, পরীক্ষিত প্রযুক্তিই আগে ব্যবহার করা উচিত।

সরকারের পরিকল্পনা
ইন্দোনেশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৬০ সালের মধ্যে দেশের ১৪ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক উৎস থেকে আসবে। ২০৩২ সালের মধ্যে প্রথম রিঅ্যাক্টর চালু হওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যদিও বাস্তবায়ন ২০২৯ সালেও সম্ভব হতে পারে। ব্যাংকা-বেলিতুং ও পশ্চিম কালিমান্তানকে প্রথম স্থাপনের জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
থরকন ২০২৭ সালে কাজ শুরু করে ২০২৮ সালের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র চালু করতে চায়। পরবর্তী ধাপে ২০৩৫ সালের মধ্যে ক্ষমতা বাড়িয়ে ৪ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ ও আইনি জটিলতা
প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আইনগত ও প্রশাসনিক কাঠামোর অভাব। এখনো পারমাণবিক কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত প্রেসিডেন্টীয় বিধান চূড়ান্ত হয়নি। জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাপেতেনও স্বীকার করেছে, আগামী এক-দুই বছর হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
“যদি এখন ভিত্তি তৈরি না হয়, ভবিষ্যতে আর সম্ভব নাও হতে পারে,” বলেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান সুগেং সুমবারদজো।

উপসংহার
ইন্দোনেশিয়া কয়লার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে টেকসই জ্বালানি খুঁজছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ সেই সম্ভাবনার একটি বড় অংশ হতে পারে। তবে প্রযুক্তি, অর্থায়ন, জনমত ও প্রশাসনিক কাঠামোর সমন্বয় ছাড়া এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।