দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও সফররত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে আর আক্রমণাত্মক অবস্থানে থাকবে না। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার পর ভারত ও চীন সীমান্ত চিহ্নিতকরণের পথে এগোতে রাজি হয়েছে। মঙ্গলবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত ভারত-চীন বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের ২৪তম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সীমান্ত চিহ্নিতকরণের ধাপভিত্তিক পরিকল্পনা
দুই পক্ষ প্রথমে কম বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে কাজ শুরু করবে। এই প্রক্রিয়া চার ধাপে এগোবে—
১) ভারত-চীন সীমান্তবিষয়ক পরামর্শ ও সমন্বয় ব্যবস্থার (WMCC) অধীনে একটি প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ দল গঠন।
২) সীমান্তে কম সংঘাতপূর্ণ জমির অংশ চিহ্নিতকরণ।
৩) সেই জমির সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ (delimitation)।
৪) আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে দাগ কেটে সীমান্ত খুঁটি বসানো (demarcation)।
এভাবে বড় কোনো সমাধানের অপেক্ষায় না থেকে ছোট ছোট ধাপে অগ্রগতি এনে দুই দেশের মধ্যে আস্থা তৈরির কৌশল নেওয়া হয়েছে।

পূর্ব লাদাখে সেনা অবস্থান পরিবর্তন
২০২০ সালের মে মাসের সংঘর্ষের পর পূর্বাঞ্চলে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হলেও বিতর্কিত এলাকাগুলোতে বাফার জোন তৈরির কাজ বাকি আছে। এদিকে দুই দেশ পূর্ব লাদাখসহ বিভিন্ন এলাকায় সেনাদের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি থেকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে। এর আওতায় ট্যাঙ্ক, রকেট ও ভারী আর্টিলারি সীমান্ত থেকে পিছনে সরানো হবে। ভারতের লাদাখ অঞ্চলে দুর্গম পর্বতমালা থাকলেও চীনের তিব্বত মালভূমি অপেক্ষাকৃত সমতল হওয়ায় চীনা সেনারা দ্রুত গতিতে নড়াচড়া করতে পারে। তাই এই সমঝোতা ভবিষ্যতের সামরিক হুমকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বাভাবিক সম্পর্কের পথে ফেরা
দুই দেশ সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে সম্পর্ক ধীরে ধীরে ২০২০ সালের এপ্রিল-পূর্ব অবস্থায় ফিরছে। ভারত বুঝতে পারছে পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সক্রিয় উপস্থিতি। তবুও ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের ফলেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খুলেছে।

আগামীর দিকনির্দেশনা
আগামী ৩১ আগস্ট তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) সম্মেলনে মোদি ও শি আবারও বৈঠক করবেন। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য বাস্তবভিত্তিক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
এই নতুন সীমান্ত চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া দুই এশীয় শক্তিকে স্থায়ী শান্তি ও আস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
 
																			 সারাক্ষণ রিপোর্ট
																সারাক্ষণ রিপোর্ট								 


















