০৫:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
শীতের শুরুতে যুদ্ধের চাপ বাড়াচ্ছে ইউক্রেন, দীর্ঘ সংঘাতের ইঙ্গিত মস্কোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নতুন কড়াকড়ি, চাপের মুখে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির চাপ বাড়ছে,মানবিক সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে ভিয়েতনামের বিরল খনিজে ১৯ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এলএস ইকো এনার্জির নতুন মুম্বাই বিমানবন্দর চালু, উড়োজাহাজ খাতে আদানির এক লাখ কোটি টাকার বাজি চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত খনি কোম্পানির ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি, ইকুয়েডরের বড় তামা প্রকল্প কিনছে জিয়াংসি কপার সিউলই পারে যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া পরমাণু আলোচনা পুনরুজ্জীবিত করতে: বাস্তবতার পথে নতুন কৌশল মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানি বাড়লেও ভেতরে দুর্বলতার ইঙ্গিত দেখছেন বিশেষজ্ঞরা চীনা গবেষকদের নতুন তত্ত্ব: সময় কি সত্যিই পেছনে যায় না ফুজিয়ান যুদ্ধজাহাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, জে–১০সি’র সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা: ২০২৫ সালে চীনের সামরিক অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ দিক

ট্রাম্পের বাজি: ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে নতুন দূত সের্গিও গর

কে এই সের্গিও গর?
সের্গিও গর (আসল নাম গরোখোভস্কি) মূলত উজবেকিস্তানের তাসখন্দে জন্মগ্রহণ করেন, যখন অঞ্চলটি তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯৯ সালে তিনি ১২ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তাঁর বাবা ইউরি গরোখোভস্কি ছিলেন একজন এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি সোভিয়েত সামরিক বিমানের নকশা তৈরি করতেন—এর মধ্যে আইএল-৭৬ রয়েছে, যা ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরেও রয়েছে। মা ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত। যুক্তরাষ্ট্রে এসে তারা লস অ্যাঞ্জেলসে বসতি গড়েন। পরে সের্গিও ওয়াশিংটনের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

রিপাবলিকান রাজনীতির উত্থান
ছাত্রজীবন থেকেই সের্গিও রিপাবলিকান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি প্রথমে বিতর্কিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ কিং ও মিশেল বাখম্যানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। এরপর সিনেটর র‌্যান্ড পলের দলে যোগ দিয়ে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ পর্যন্ত উন্নীত হন।

২০২০ সালের নির্বাচনের সময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে প্রবেশ করেন এবং দ্রুত “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (MAGA)” আন্দোলনের প্রভাবশালী মুখ হয়ে ওঠেন। ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী জয়ের পর তিনি হোয়াইট হাউজে “অফিস অব প্রেসিডেন্সিয়াল পারসোনেল”-এর পরিচালক হন—যেখানে সরকারি নিয়োগে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এলন মাস্কের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
এই শক্তিশালী পদে থাকার সময় ট্রাম্পের অন্য ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সের্গিও। বিশেষ করে এলন মাস্ক তাঁকে “সাপ” বলে আখ্যা দেন, যখন নাসার প্রধান হিসেবে জ্যারেড আইজ্যাকম্যানের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। বলা হয়, গর ট্রাম্পকে দেখিয়েছিলেন যে আইজ্যাকম্যান পূর্বে ডেমোক্র্যাটদের দান করেছিলেন।

ভারতের জন্য দূত নিয়োগ
তবুও ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ মহলে সের্গিওকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি চমৎকার প্রতিনিধি হবেন।” বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকও মন্তব্য করেন, “ভারত এখন নিরাপদ হাতে আছে।”

ভারতে প্রতিক্রিয়া কিছুটা মিশ্র। একদিকে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় স্বস্তি এসেছে, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞতাহীন একজন নবাগতকে দায়িত্ব দেওয়ায় উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। এই পদে একসময় চেস্টার বোওলস, জে কে গ্যালব্রেইথ বা ড্যানিয়েল মোইনিহানের মতো খ্যাতনামারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সমর্থন ও সমালোচনা
সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা আশা জাদেজা মোতওয়ানি বলেছেন, “ভারত এখন সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবে। আগে যা মাসের পর মাস লাগত, এখন কয়েক ঘণ্টায় সম্ভব হবে।”

সাবেক ট্রাম্প উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও এই নিয়োগে খুশি। তাঁর মতে, “সের্গিওই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি যেকোনো সময় প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি প্রবেশাধিকার পান।” যদি আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে এটাই সর্বোত্তম নিয়োগ মনে করতাম।

তবে সমালোচকরা মনে করছেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার অভাব ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, এতে ভারত-পাকিস্তানকে একই সূত্রে গেঁথে দেখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়োগের প্রবণতা
কূটনৈতিক রেকর্ড অনুযায়ী, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত যে ৬১ জন রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫৮ জনই রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত। মাত্র ৩ জন আছেন পেশাদার কূটনীতিক দপ্তর থেকে। সাধারণত ৩০ শতাংশের মতো রাজনৈতিক নিয়োগ হলেও এবার তা ৯৫ শতাংশ।

উল্লেখযোগ্যভাবে বিতর্কিত নিয়োগের মধ্যে রয়েছেন—চার্লস কুশনার (ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত), কিম্বার্লি গুইলফয়েল (গ্রীসে রাষ্ট্রদূত) এবং বিলিয়নিয়ার টিলম্যান ফার্টিটা (ইতালিতে রাষ্ট্রদূত)।


সের্গিও গরের ভারতের রাষ্ট্রদূত হওয়া একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা এনে দেবে, অন্যদিকে অভিজ্ঞতার অভাব ও রাজনৈতিক আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে নিয়োগ হওয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। ফলে তাঁর নিয়োগকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতের শুরুতে যুদ্ধের চাপ বাড়াচ্ছে ইউক্রেন, দীর্ঘ সংঘাতের ইঙ্গিত মস্কোর

ট্রাম্পের বাজি: ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে নতুন দূত সের্গিও গর

১২:১২:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

কে এই সের্গিও গর?
সের্গিও গর (আসল নাম গরোখোভস্কি) মূলত উজবেকিস্তানের তাসখন্দে জন্মগ্রহণ করেন, যখন অঞ্চলটি তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯৯ সালে তিনি ১২ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তাঁর বাবা ইউরি গরোখোভস্কি ছিলেন একজন এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার, যিনি সোভিয়েত সামরিক বিমানের নকশা তৈরি করতেন—এর মধ্যে আইএল-৭৬ রয়েছে, যা ভারতীয় বিমানবাহিনীর বহরেও রয়েছে। মা ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত। যুক্তরাষ্ট্রে এসে তারা লস অ্যাঞ্জেলসে বসতি গড়েন। পরে সের্গিও ওয়াশিংটনের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

রিপাবলিকান রাজনীতির উত্থান
ছাত্রজীবন থেকেই সের্গিও রিপাবলিকান রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি প্রথমে বিতর্কিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ কিং ও মিশেল বাখম্যানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন। এরপর সিনেটর র‌্যান্ড পলের দলে যোগ দিয়ে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ পর্যন্ত উন্নীত হন।

২০২০ সালের নির্বাচনের সময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে প্রবেশ করেন এবং দ্রুত “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (MAGA)” আন্দোলনের প্রভাবশালী মুখ হয়ে ওঠেন। ট্রাম্পের ২০২৪ সালের নির্বাচনী জয়ের পর তিনি হোয়াইট হাউজে “অফিস অব প্রেসিডেন্সিয়াল পারসোনেল”-এর পরিচালক হন—যেখানে সরকারি নিয়োগে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এলন মাস্কের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
এই শক্তিশালী পদে থাকার সময় ট্রাম্পের অন্য ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সের্গিও। বিশেষ করে এলন মাস্ক তাঁকে “সাপ” বলে আখ্যা দেন, যখন নাসার প্রধান হিসেবে জ্যারেড আইজ্যাকম্যানের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। বলা হয়, গর ট্রাম্পকে দেখিয়েছিলেন যে আইজ্যাকম্যান পূর্বে ডেমোক্র্যাটদের দান করেছিলেন।

ভারতের জন্য দূত নিয়োগ
তবুও ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ মহলে সের্গিওকে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি চমৎকার প্রতিনিধি হবেন।” বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকও মন্তব্য করেন, “ভারত এখন নিরাপদ হাতে আছে।”

ভারতে প্রতিক্রিয়া কিছুটা মিশ্র। একদিকে হোয়াইট হাউজের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হওয়ায় স্বস্তি এসেছে, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞতাহীন একজন নবাগতকে দায়িত্ব দেওয়ায় উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। এই পদে একসময় চেস্টার বোওলস, জে কে গ্যালব্রেইথ বা ড্যানিয়েল মোইনিহানের মতো খ্যাতনামারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সমর্থন ও সমালোচনা
সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা আশা জাদেজা মোতওয়ানি বলেছেন, “ভারত এখন সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবে। আগে যা মাসের পর মাস লাগত, এখন কয়েক ঘণ্টায় সম্ভব হবে।”

সাবেক ট্রাম্প উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননও এই নিয়োগে খুশি। তাঁর মতে, “সের্গিওই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি যেকোনো সময় প্রেসিডেন্টের কাছে সরাসরি প্রবেশাধিকার পান।” যদি আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতাম, তাহলে এটাই সর্বোত্তম নিয়োগ মনে করতাম।

তবে সমালোচকরা মনে করছেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার অভাব ভারতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাঁরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, এতে ভারত-পাকিস্তানকে একই সূত্রে গেঁথে দেখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনে রাজনৈতিক নিয়োগের প্রবণতা
কূটনৈতিক রেকর্ড অনুযায়ী, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত যে ৬১ জন রাষ্ট্রদূত মনোনীত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৫৮ জনই রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত। মাত্র ৩ জন আছেন পেশাদার কূটনীতিক দপ্তর থেকে। সাধারণত ৩০ শতাংশের মতো রাজনৈতিক নিয়োগ হলেও এবার তা ৯৫ শতাংশ।

উল্লেখযোগ্যভাবে বিতর্কিত নিয়োগের মধ্যে রয়েছেন—চার্লস কুশনার (ফ্রান্সে রাষ্ট্রদূত), কিম্বার্লি গুইলফয়েল (গ্রীসে রাষ্ট্রদূত) এবং বিলিয়নিয়ার টিলম্যান ফার্টিটা (ইতালিতে রাষ্ট্রদূত)।


সের্গিও গরের ভারতের রাষ্ট্রদূত হওয়া একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুবিধা এনে দেবে, অন্যদিকে অভিজ্ঞতার অভাব ও রাজনৈতিক আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে নিয়োগ হওয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। ফলে তাঁর নিয়োগকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে।