চীনের জাতীয় দিবস ও মধ্য-শরৎ উৎসব মিলিয়ে সাত দিনের “গোল্ডেন উইক” এবার রূপ নিয়েছে ভ্রমণ ও বিনোদনের উৎসবে। উৎসবের মাঝপথেই দেশজুড়ে পর্যটন ও খরচের বাজারে দেখা যাচ্ছে অভূতপূর্ব উচ্ছ্বাস। শুধু দেশীয় পর্যটক নয়, বিদেশি ভ্রমণকারীরাও যোগ করছেন নতুন গতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা এখন চীনের নতুন পর্যটন অর্থনীতির প্রাণশক্তি।
সংস্কৃতি ও খেলাধুলা এখন ভ্রমণের মূল আকর্ষণ
অক্টোবরের প্রথম চার দিনে চীনের রেলপথে যাত্রী চলাচল ছাড়িয়েছে ১০ কোটি। শুধু ৪ অক্টোবরেই রেলযাত্রা হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। একই সময়ে খুচরা ও রেস্তোরাঁ খাতে বিক্রি বেড়েছে ৩.৩ শতাংশ। বেইজিং, সাংহাই, গুয়াংঝো, শেনজেনের পাশাপাশি চেংদু ও শিয়ান ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০ লাখেরও বেশি যাত্রী চলাচল করেছেন।
হেংছিন সীমান্তপথে যাত্রী চলাচল বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি, আর গাড়ির চলাচল প্রায় ৪৫ শতাংশ। ভ্রমণ সংস্থা CYTS Tours-এর তথ্য বলছে, বেইজিংয়ের গুবেই ওয়াটার টাউনে বিদেশি ট্যুর গ্রুপ এখন মোট পর্যটকের অর্ধেক, কিন্তু তাদের ব্যয় মোট আয়ের ৫৩ শতাংশ—প্রমাণ করছে বিদেশি পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব।
‘অভিজ্ঞতা অর্থনীতি’র উত্থান
এবারের গোল্ডেন উইকে ভ্রমণের মানে বদলে গেছে—কেবল দৃশ্য দেখা নয়, অভিজ্ঞতা নেওয়াই মূল আনন্দ। বেইজিংয়ে চলছে চায়না ওপেন টেনিস ও ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস (WTT) চায়না স্ম্যাশ; প্রাদেশিক ফুটবল লিগ যেমন ‘সুচাও’ ও ‘চুয়ানচাও’ জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে টিকিট-নির্ভর পর্যটনে। পাশাপাশি দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতারসহ নানা ফিটনেস ইভেন্ট দেশজুড়ে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে উৎসবের ছুটিতে।
দেশজুড়ে ১২ হাজারেরও বেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে, যেখানে ‘সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি’, ‘সংস্কৃতি ও শিল্প’, ‘সংস্কৃতি ও পারফরম্যান্স’-এর সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে আধুনিক অভিজ্ঞতার নতুন দিগন্ত।
অর্থনীতিবিদ কাও হেপিং বলেন, এই প্রবণতা চীনের “অভিজ্ঞতা অর্থনীতি”-র উত্থানকে ইঙ্গিত করছে—যেখানে মানুষ এখন ভ্রমণকে দেখছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিনিয়োগ হিসেবে। অনেকেই সিনেমা বা টেলিভিশনের জনপ্রিয় স্থান ঘুরে ভিডিও বা লাইভস্ট্রিম করছেন, তৈরি করছেন ডিজিটাল যুগের সাংস্কৃতিক অর্থনীতি।
চীনের গোল্ডেন উইকের এই প্রবাহ তাই শুধু ছুটি নয়—এ এক নতুন অর্থনৈতিক সংস্কৃতি, যেখানে আনন্দ, অভিজ্ঞতা আর প্রযুক্তি মিলে জন্ম নিচ্ছে ভবিষ্যতের ভ্রমণবিপ্লব।