বিশ্ববাজারে সোনার দাম অভূতপূর্ব উত্থানে ৪ হাজার ডলারের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সোনা কেনার কারণে এই মূল্যবৃদ্ধি এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির বড় আলোচ্য বিষয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগকারী ও গয়না ক্রেতারা ভাবছেন—এখনই কিনবেন, নাকি অপেক্ষা করবেন?
সোনার বাজারে নতুন মাইলফলকের পথে
দুবাই: একসময় যা কল্পনাতীত মনে হয়েছিল, সেই ৪ হাজার ডলারের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে সোনার দাম। ক্রমবর্ধমান এই দামের ধাক্কা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত জুড়ে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে গয়না ক্রেতাদের ভাবনায় নতুন প্রশ্ন তুলেছে — এখনই কি কিনবেন, নাকি অপেক্ষা করবেন?
কেন বাড়ছে সোনার দাম
বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতাই সোনার দামের দ্রুত বৃদ্ধির মূল কারণ। এইচএসবিসির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, খুব শিগগিরই প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়াতে পারে। ব্যাংকটি বলছে, বাড়তি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অনিশ্চিত সরকারি আর্থিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন — সবকিছুই সোনার বাজারকে উপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এছাড়া, বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারাবাহিক সোনা কেনা এবং বড় বিনিয়োগকারীদের ডলার-নির্ভরতা কমানোর প্রবণতাও দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ। ফলে, সোনা আবারও বৈশ্বিক অর্থনীতির নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে ফিরে এসেছে।
বিশ্লেষকদের অভিমত
গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষণ বলছে, দীর্ঘমেয়াদে সোনার বাজার শক্তিশালী থাকবে, যদিও দাম ৪ হাজার ডলারে পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রতি আউন্স সোনার দাম পৌঁছাতে পারে ৩ হাজার ৭০০ ডলারে, আর ২০২৬ সালের মাঝামাঝি তা ৪ হাজার ডলারের সীমা অতিক্রম করতে পারে।
তবে তারা সতর্ক করেছে, যদি বড় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ ডলার-ভিত্তিক সম্পদ থেকে সরে এসে সোনায় বিনিয়োগ শুরু করে, তাহলে দাম বেড়ে যেতে পারে ৪ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত। অর্থাৎ, স্বল্পমেয়াদে কিছুটা ওঠানামা হলেও দীর্ঘমেয়াদে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাই স্পষ্ট।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি
গত সপ্তাহেই সোনা ছুঁয়েছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম — প্রতি আউন্স ৩,৮৯৬.৪৯ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অচলাবস্থা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদহ্রাসের প্রত্যাশাই এই বৃদ্ধির পেছনের প্রধান কারণ।
যেহেতু সোনা সুদ দেয় না, তাই সুদের হার কমলে এর আকর্ষণ বেড়ে যায়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সোনার দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বড় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক কেনা এবং গোল্ড-সমর্থিত এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)-এর প্রবাহ বাড়ায় বাজার আরও চাঙ্গা হয়েছে।
তবে এইচএসবিসি সতর্ক করে বলেছে, যদি ফেডারেল রিজার্ভ প্রত্যাশার চেয়ে ধীরে সুদ কমায়, তাহলে সাময়িকভাবে দাম কিছুটা কমে যেতে পারে।
ইউএই ক্রেতাদের জন্য কী অর্থ বহন করছে
দুবাইয়ের গয়নার দোকানগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সোনার দামের সঙ্গে সরাসরি তাল মিলিয়ে চলে। যদিও দিরহামের ডলারের সঙ্গে সংযোগ কিছুটা স্থিতিশীলতা দেয়, তবুও সোনা এখন অনেক বেশি দামী হয়ে উঠেছে।
বিয়ে বা উৎসবের কেনাকাটায় এখন পরিবারগুলোকে হয় বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে, নয়তো হালকা ওজনের গয়না বেছে নিতে হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সময় নির্ধারণ এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — একসঙ্গে বড় অঙ্ক না কিনে ধাপে ধাপে কেনা ভালো, এতে গড় দাম কমে এবং অতিরিক্ত দামে কেনার ঝুঁকি কমে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দাম ৩,৯০০ – ৪,০০০ ডলারের কাছাকাছি যায়, কিছু বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলতে বিক্রি করতে পারে — ফলে সাময়িক পতন হতে পারে। তবে তারা মনে করেন, এই ধাক্কা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
আগামীর সম্ভাবনা
এইচএসবিসি ও গোল্ডম্যান স্যাকস উভয়ই ধারণা করছে, আগামী এক থেকে দেড় বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কেনা অব্যাহত রাখবে, বিশেষত যেসব দেশ ডলারের বিকল্প হিসেবে সোনা মজুদ করছে। সঙ্গে যদি যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কমে ও বৈশ্বিক উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তবে সোনার জন্য আরও এক শক্তিশালী বছর অপেক্ষা করছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রেতাদের জন্য সোনার ৪ হাজার ডলার ছোঁয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তাটি পরিষ্কার — ধৈর্য ধরুন, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কেনাকাটা করুন, এবং ছোটখাটো দামের পতনের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রস্তুত থাকুন।
#সোনা #সোনার_দাম #সংযুক্ত_আরব_আমিরাত #বিনিয়োগ #অর্থনীতি #গোল্ডম্যান_স্যাকস #এইচএসবিসি #দুবাই #বিশ্ববাজার #সারাক্ষণ_রিপোর্ট