হঠাৎ করেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আমাদের সামনে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের একটি পরিসংখ্যান হাজির করেছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) ওই তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেষ্টমেন্ট (এফডিআই) ১৯.১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে এফডিআই বেড়ে দাড়িয়েছে ১.৬৯ বিলিয়ন (১৬৯ কোটি) ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ১৪২ কেটি ডলার। হঠাৎ করে কেউ এই পরিসংখ্যান দেখলে বেশ রোমাঞ্চিতই হবেন। কারণ এক প্রকার স্থবির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে ১৯ শতাংশের বেশি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি বেশ আশাপ্রদ ঘটনা।
কিন্তু বাস্তবতা যখন ভিন্ন কথা বলে তখনই বিপত্তি ঘটে। প্রশ্ন উঠে বিনিয়োগ আহরণের দায়িত্বে থাকা একটি সরকারি সংস্থার সেই পরিসংখ্যান নিয়ে। উদ্যোক্তারা তখন হতবাকও হয়। এই পরিসংখ্যান দেখেও অর্থনীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই হতবাক হয়েছেন। কারণ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে বিপরীত চিত্রই উঠে এসেছে।
বিনিয়োগ আহররণের ফলে এদেশে আসা বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এফডিআই এসেছিল ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে এই বছর বিনিয়োগ প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে।
তাছাড়া, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগ খরা চলছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি থামকে আছে। বেকারত্বের হার দেশে এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌছেছে। একের পর এক বিসিএস পরীক্ষা আহ্বান করে বেকারত্ব পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মরত মানুষেরাও চাকরি হারিয়ে বেকারত্বের মিছিলে যোগ দিয়েছে।

যে কোন দেশে বিদেশী বিনিায়োগ বৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেনা। তার ওপর উচ্চ মুল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে উচ্চ সুদ বিরাজ করছে। এ কারণে দেশীয় বিনিয়োগে ভাটা চলছে। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এমননকি সরকারের পরিকল্পণা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রতিবেদনেই এই চিত্র উঠে এসেছে।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ খরার চিত্রও বাংলাদেশ ব্যাংকের বেসরকারি খাতের ঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনই প্রমাণ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলত দেশে নতুন ব্যবসায় স্থবিরতা ও বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। তা কমতে কমতে ৭ শতাংশে নীচে নেমে এসেছে সেপ্টেম্বরে।
দেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগেই এই যখন অবস্থা, যেখানে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছেন কোন সাহসে তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে আগের প্রান্তিকের তুলনায় দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) সব সূচকই ছিল নেতিবাচক। দেশে নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বা ইক্যুইটি বাড়েনি। তাহলে দেশে ১৯ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগ কিভাবে এল তা নিয়ে অনেকের মাঝেই কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতির ভাষায়, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ তথা এফডিআইকে ইক্যুইটি ক্যাপিটাল বা ইকুইটি মুলধন বলা হয়। এই ইক্যুইটি মুলধন দেশে বিনিয়োগ হলে তার দ্রুত ইতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। কারণ এই মুলধন বিনিয়োগে যেমন শিল্পায়ন তথা নতুন শিল্প স্থাপিত হয়, প্রযুক্তি বিকাশ ঘটে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এই ইক্যুইটিতে মুলত পুরানো শিল্পের পাশাপাশি নতুন শিল্প স্থাপিত হয়। এই বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি, শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচন এবং দীর্ঘ মেয়াদে উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
আর এর বিপরীত চিত্র ঘটে যখন ইক্যুইটি কমে যায়। এমনকি এফডিআই বৃদ্ধি পেলেও ইক্যুইটি কমে গেলে তার প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের ওপর। বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা তখন সতর্ক হয়ে যায়। ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ থেকে দূরে অবস্থান করে বা অন্য দেশে চলে যায়।
বাংলাদেশে মুলত এই ঘটনাটিই ঘটেছে। একদিনে এফডিআই যেমন কমে গেছে, বিপরীতে দেশীয় বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের উপার্জিত মুনাফা এদেশে তাদের শিল্প সংস্কারে পুন:বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই পুন: বিনিয়োগের পরিমান ছিল ৭৫ কোটি ৮১ লাখ ডলার। এই পুন:বিনিয়োগও অনেক সময় দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃংখলার যে অবস্থা তাতে কী বিনিয়োগে আস্থা তৈরি কোন সুযোগ আছে? কারণ দেশীয় উদ্যোক্তারাও জানে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভূগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংকটজনক অবস্থায় আছে। আর এই সংকটের কারণে সরকার দেশের বিদ্যমান বিদেশী কোম্পানিগুলোকে তাদের অর্জিত মুনাফা নিজ দেশে নিয়ে যেতে দেয়া হয়নি। ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলোর সামনে ওই অর্জিত মুনাফা এই দেশে বিনিয়োগ করার ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। বাধ্য হয়েই বিদেশী কোম্পানিগুলো এদেশে পুন:বিনিয়োগ করেছে। এটিকে কোনভাবে ইক্যুইটি বিনিয়োগ তথা শিল্পায়ন বলা যাবে না। এতে কোন কর্মসংস্থান হবে না, তবে কারখানার মান উন্নয়ন ঘটবে।
এখন প্রশ্ন হলো- যদি তারা তাদের অর্জিত মুনাফার অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারতো তাহলে কী দেশের এই অস্থির অবস্থায় তারা এদেশে পুন:বিনিয়োগ করতো?

এই তথ্য দেশীয় উদ্যোক্তারা যেমন ভালো করেই জানেন, তেমনি বিদেশী উদ্যোক্তা যারা এদেশে বিনিয়োগ করতে চায় তাদেরও অজানা থাকার কথা নয়। কারণ যে কোন বিদেশী বিনিয়োগকারী কোন দেশে বিনিয়োগের আগে এসব তথ্য যাচাই করে তবেই বিনিয়োগ করে থাকে। তাদের বোকা ভাবার কোন কারণ নেই।
তবে হ্যা, গত এক বছরে কিছু বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। কিছু চীনা প্রতিষ্ঠান এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে তারা বেপজার সঙ্গে চুক্তিও করেছে। এটি একটি নিয়মিত ঘটনা। তবে এসব বিনিয়োগ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
একইভাবে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকুলে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকুলে এলে হয় তো এসব কোম্পানি বিনিয়োগ করবে। কারণ বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের লক্ষ্যস্থল। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বিনিয়োগ পারিবেশও উন্নত করতে হবে। কারণ এখন তীব্র জ্বালানি তথা গ্যাস সংকট চলছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত পাওয়ায় দুরহ ব্যাপার। ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে বড় আকারে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত নয়। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পেতে হলে আগে এসব সংকট দূর করে বাংলাদেশকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। তা না হলে হঠাৎ করে এ ধরণের ‘ভৌতিক বিনিয়োগ পরিসংখ্যান’ বিদেশী কেন দেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থাও তৈরি করা যাবে না।
আর এই ভৌতিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশের বিনিয়োগ চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। ১৬৯ কোটি ডলার দেশের প্রকৃত বিনিয়োগ চাহিদার মাত্র চার ভাগের এক ভাগ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অন্তত এক শতাংশ বৃদ্ধি করতে হলে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের এফডিআই প্রয়োজন। অস্টম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পণায় এফডিআই জিডিপির ৩ শতাংশ নিয়ে যাওয়ার প্রক্ষেপন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত জিডিপির ১ শতাংশের উপরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এক শতাংশের নীচেই অবস্থান করছে।
এফডিআই নয় বরং আন্ত:কোম্পানি ঋণের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। বর্তমানে আন্ত:কোম্পানি ঋণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে এই আন্ত:কোম্পানি ঋণ ১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলারে দাড়িয়েছে। কারণ স্বল্প মেয়াদে কোন সিসটার প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়লে মাদার প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা সামাল দিয়ে থাকে। এটি কোন দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ নয়। তারল্য সংকট কেটে গেলে তা আবার ফেরত দিতে হয়। তবে এই আন্ত:কোম্পানি ঋণ কোনভাবে এফডিআই নয়। কারণ এটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে কাজে লাগানো হয় না, শুধুমাত্রা তারল্য সংকট মেটায়। এই আন্ত:কোম্পানি ঋণও কী এফডিআই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে কীনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এই এফডিআই পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শ্রীলংকা, চিলি, সুদান, ইউক্রেন, মিশর এবং ইন্দোনেশিয়ার উদাহরণ টেনে এনেছে। এসব দেশে এফডিআই কমে গেছে, আর বাংলাদেশে বেড়েছে। এই উদাহরণ দেখিয়ে বিডা স্বস্তির ঢেকুর তোলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা একেবারেই অবান্তর। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও বাড়ছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার জন্য। আর ওই দেশগুলো ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অবস্থান করছে। বরং বাংলাদেশের এই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য প্রচুর বিদেশী বিনয়োগ প্রয়োজন। বরং এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার মতো আমাদের আঞ্চলিক প্রতিযোগীদের উদাহরণ দিলে সঠিক হতো। কিন্তু এই দুই দেশের উদাহরণ দেয়া হয়নি। কারণ, ভিয়েতনামের এফডিআই আগের বছরের চেয়ে গত বছর ৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮.২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে। আর কম্বোডিয়ায় গেছে ৮.১ বিলিয়ন ডলারে বিদেশী বিনিয়োগ। এখানে এমন দেশগুলোর উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেখানে একমাত্র শ্রীলংকা ছাড়া কোন দেশ আমাদের ধারেকাছে নেই। আর শ্রীলংকা এখনও পুরোপুরি অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে তাদের এফডিআই কমবে এটাই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ এখনও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। ২০২৪-২৫ বছর থেকে শুরু থেকেই এই অস্থিরতা শুরু হয়েছে এবং বছরের শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকারই কথা এবং সেই আস্থাহীনতা এখনও বিদ্যমান। তাছাড়া এই অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগ আহরণের জন্য বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতিতে নাটকীয় কিছু করতে পারেনি সরকার। আমলাতন্ত্রের লাফ ফিতার সেই দৌরাত্ম এখনও বিদ্যমান। এখন এদেশে শিল্প স্থাপন করতে হলে ৪২ জায়গা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। ব্যাংকিং খাত বিপুল পরিমান মন্দ ঋণের ভারে জর্জরিত। পুঁজি বাজারের অবস্থাও তলানীতে। যে সকল দিদেশী বিনিয়োগকারী ছিল তারাও পুঁজি প্রত্যহার করে চলে গেছে। অনিয়মিত বিদ্যুত, অদক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং ব্যয়বহুল লজিস্টিক ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে। যদিও বাংলাদেশে বিপুল সস্তা শ্রমশক্তি আছে, কিন্তু জনশক্তি খুবই অদক্ষ। যার ফলে উৎপাদনশীলতা এখানে অনেক কম। বিনিয়োগের আস্থা তৈরির জন্য এই অবকাঠামোগত বিষয়গুলোও জরুরি।
অথচ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার এই বিষয়টি চেপে গেছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টির উল্লেখ নেই।
তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে হলে ইক্যুইটি মুলধন ও এফডিআইয়ের সঠিক গণনা করতে হবে। কাগুজে নয়, করতে হবে আর্থিক খাতের অর্থবহ সংস্কার। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে কার্যকর ওয়ান স্টপ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে এবং নিয়ম কানুণে আইনগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে বিদ্যুত ও লাজিষ্টিক সেবা শুধু পরিকল্পনায় নয়, বাস্তবে দেখাতে হবে। সর্বপরি, বাংলাদেশের বিপুল পরিমান যুব শক্তিকে কারিগরী ও ভোকেশনার শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক শিল্প পরিচালনার মতো করে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে এমনিতেই এদেশের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হবে, ভৌতিক পরিসংখ্যানের আর প্রয়োজন হবে না।
লেখক: আর্থনৈতিক বিশ্লেষক
আকিব রহমান 























