মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৪৮ পূর্বাহ্ন

ইউএসএইডের মতো সংস্থাগুলোর অর্থ তৃতীয়বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিকেও ধ্বংস করছে  

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫, ৮.০০ এএম

স্বদেশ রায়

ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএইড এর অর্থ বন্ধ করার পরে আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানান দেশে এ নিয়ে নানান ধরনের মতামত দেখা যাচ্ছে। অনেকে এর প্রয়োজনীয়তার পক্ষে অনেকে বিপক্ষে।

ইউএসএইড বা উন্নত বিশ্বের এ ধরনের সংস্থাগুলোর অর্থ বেশিক্ষেত্রে বেসরকারি অর্গনাইজেশানকে (এনজিও) দেয়া হয়ে থাকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। এই অর্থ কতটা ড্রেনেজ হয়, কতটা উন্নয়নে ব্যয় হয় বা এ অর্থের মূল উদ্দেশ্য কি, রেজাল্ট কী হয় তা বিভিন্ন সময় অনেকেই চুল চেরা বিশ্লেষণ করেছেন।

ইউএসএইডসহ এ ধরনের দাতা সংস্থার কাজ পর্যবেক্ষণকারী ও সাবেক সিইও পল ভ্যালাস সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক পোস্টে লিখেছেন,  ইউএসএইডের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ সংস্থা আর পৃথিবীতে নেই। তিনি অনেকগুলো উদাহরণ দিয়েছেন, তার ভেতর ২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্পে ৪.৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য’র বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখছেন, হাইতির ক্ষতিগ্রস্থদের জন্যে এ অর্থের মাত্র ২% ব্যয় হয়। এমনকি তিনি আর্ন্তজাতিক রেডক্রস সংস্থার কাজ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, রেডক্রস দাবী করেছিলো, হাইতিতে তারা ১৩০,০০০ বাড়ি তৈরি করেছে। কিন্তু দেখাগিয়েছিলো বাস্তবে যাচাইযোগ্য বাড়ি তৈরি হয়েছিলো ৬টি।

এই ইউএসএইড বা রেডক্রস নয়, সম্প্রতি “পলিটিকো”  তাদের এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকান্ডে যে অর্থ ব্যয় হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যার ভেতর অন্যতম, জাতিসংঘ মূলত জলবায়ু ফান্ডে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর জন্যে যে তথ্য সরবরাহ করে তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও যথেষ্ট গ্রহনযোগ্য নয়। বরং অধিকাংশ তথ্য এমনভাবে তৈরি করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে মানুষের মনে জলবায়ু নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করা। যাতে মানুষ জলবায়ু ফান্ডে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে চাপ সৃষ্টি করবে। অথচ অধিকাংশ তথ্যের ওইভাবে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। দেশে দেশে জলবায়ু নিয়ে যারা কাজ করে, এবং জাতিসংঘের আনুকূল্যে যে গ্রুপটি বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়- এদের ভেতর প্রকৃত বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত লোক কম থাকে। বরং নানা ধরনের তথাকথিত অধিকার আন্দোলনকারীদের সংখ্যাই বেশি থাকে।

পশ্চিমা বিশ্বের এই দাতা সংস্থাদের দেয়া অর্থ ও তা এনজিও’র মাধ্যমে ব্যয় হওয়া নিয়ে আামদের দেশে প্রথম প্রকাশনা বের হয় মোজাফফর ন্যাপের তরফ থেকে একটি পুস্তিকা। আশির দশকের প্রথমের দিকে পুস্তিকাটি বের হয়। সেখানে মূলত এই অর্থ এবং এনজিও কনসেপট একটি জাতির জন্যে এবং উন্নয়নের জন্যে কত ক্ষতিকর তা তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরে মোজাফফর ন্যাপের বেশিভাগ লোকজন নানানভাবে এনজিওতে ঢুকে পড়েন। ফলে ওই পুস্তিকাটিরও প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া গবেষক বদরুদ্দিন ওমরেরও কয়েকটি বই আছে এই পশ্চিমা অর্থ ও এনজিও নিয়ে।

তবে গত বিশ বছরের বেশি সময় হলো, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ বুঝতে সমর্থ হয়, বাস্তবে পশ্চিমা বিশ্বের এই অর্থ মূলত কোন দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নয়। এদের স্বার্থ ভিন্ন। আর অনেক শক্তিশালী ও উন্নয়নমূখী সরকার মূলত এ ধরনের অর্থ প্রবাহ ও তাদের কাজকে নানাভাবে থামিয়ে দিতে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের এ ধরনরে সরকারগুলো এবং তাদের শক্তিশালী নেতারা মূলত মাইক্রো লেভেলে উন্নয়নকে এমনভাবে নিয়ে যান যাতে সাধারণ মানুষের জীবন মান অনেক বেশি টেকসই উন্নতির পথে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে ওই সব তথাকথিত উন্নয়ন ভিত্তিক এনজিও অনেকটা অর্থহীন বা মূল দৃশ্যপট থেকে চলে যেতে থাকে।

তৃতীয় বিশ্বের এই সব নেতা ও সরকাররা যখন মাইক্রো লেভেলে এই টেকসই উন্নয়নের পথ ধরে- এ সময়ে দেখা গেছে পশ্চিমা বিশ্বের এই সাহায্যের ও কাজের চরিত্রও বদলেছে। পশ্চিমা এই সাহায্য তখন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজ ছেড়ে মানবাধিকার, রাষ্ট ও সমাজে উদারতন্ত্র এবং তৃতীয় বিশ্বের নির্বাচনীব্যবস্থা গড়ে তোলার নামে ব্যয় হয়েছে।

তুলনামূলক শক্তিশালী বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে এ অর্থ বেশিক্ষেত্রে সরকারের মাধ্যমে ব্যয় করতে বাধ্য হয় ওই সব সংস্থাগুলো। আবার সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো কোনক্রমেই এ অর্থ প্রবেশ করতে দেয়নি। বরং গোপনে যারা এ ধরনের অর্থ নিয়ে ছদ্মবেশে কাজ করতে গেছে তাদেরকে সিঙ্গাপুরের সরকার শুধু চিহ্নিত করেনি। তাদেরকে রাজনীতি থেকে, তাদের পেশা থেকে বিতাড়িত যেমন করেছে তেমনি অনেককে দেশ ছাড়তেও বাধ্য করেছে।

তবে এই অর্থ সাফল্যের সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের আর্গুমেনটেটিভ সোসাইটির দেশগুলোর রাজনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষতিও করেছে। আফ্রিকা ও এশিয়ার আর্গুমেনটেটিভ দেশগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে- যা কয়েক হাজার বছরের। আর তার সঙ্গে যোগ হয় উনবিংশ শতাব্দীর পশ্চিমা মুক্তচিন্তার বা বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলন বা রেঁনেসা। যা এই সমাজগুলোতে একটি বুদ্ধিজীবি শ্রেণী গড়ে তুলেছিলো। যাঁরা সামাজিক বিজ্ঞান থেকে ন্যাচারাল বিজ্ঞান সব খানেই পৃথিবীর মাপে নেতৃত্ব দিতেন।

বাস্তবে এই বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেনীই এই রাষ্ট্র ও সমাজগুলোর মূল নেতা ছিলেন। অর্থ ও সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে এ সকল দেশ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে তারা সমানে সমানে লড়তে সমর্থ ছিলো। আশির দশক থেকে এই দেশগুলোতে পশ্চিমা ফান্ডের এনজিও গড়ে তোলার পরে ধীরে ধীরে আঘাত এসেছে বুদ্ধিজীবি সমাজের প্রতি। কারণ, আগে কোন দেশ তার নিজের প্রয়োজনে থিঙ্কট্যাঙ্ক গড়ে তুলতো বা বুদ্ধিজীবিরা সচেতনভাবে নিজ দ্বায়িত্বে রাষ্ট্র ও সমাজের বিশেষ বিশেষ প্রশ্নে কথা বলতেন- পশ্চিমা ফান্ড এনজিও সৃষ্টি করে এর একটি বিকল্প দাঁড় করায়।

যেহেতু পশ্চিমা ফান্ডের এই এনজিওগুলো মূলত দুর্নীতি নির্ভর। তাই এখানে কোন বুদ্ধিজীবি যোগ দেন না। বুদ্ধিজীবিরা যেমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন তেমনি সব সময়ই তাঁর নিজ বুদ্ধি-বিবেচনা অনুযায়ী ও সর্বোপরি দেশ ও মানুষের স্বার্থে কাজ করেন।  তাই পশ্চিমা ফান্ড কখনও তাদেরকে পিক করে না। এবং করতে পারেনি। তবে পশ্চিমা ফান্ড যাদেরকে পিক করে তাদের এক ধরনের সততার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। যেমন তারা তাদের ফান্ডের মাধ্যমে এই যে সব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে, তাদের প্রধান সাধারণত কোন বেতন নেন না। তৃতীয় বিশ্বের সমাজ অনুযায়ী তাকে একজন আর্থিকভাবে নির্লোভ মানুষ হিসেবে দেখানোর জন্যে অনেকটা অবৈতনিক হিসেবে তার পদকে দেখানো হয় ওই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু পল ভ্যালাসের লেখা থেকে জানা যাচ্ছে, ৪.৪ বিলিয়ন অর্থের মাত্র ২% ব্যায় হয়েছিলো হাইতির ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্যে। বাদবাকী অর্থ কোথায় যায়, এই ফান্ড নিয়ে আরো অনেক গবেষণা আছে।  সেখানে দেখা যায়, এই ফান্ডের একটি বড় অংশ ওই ফান্ড নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতাসীনের ঘনিষ্টজন এবং যে যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে এটা ব্যয় হবে- ওই প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যক্তি বা কয়েকজন মিলে কীভাবে ব্যয় করেন।  তারা মূলত ওই অর্থের একটি বড় অংশ যে সকল দেশে অবৈধ অর্থ রাখা যায় সেখানে নানানভাবে সরিয়ে ফেলে। এর পরে ফান্ড নিয়ন্ত্রনকারী এবং যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে যে কার্যভূমিতে ওটা ব্যয় হবে- ওই সকল ব্যক্তির পেছনে নানানভাবে একটি বড় অংশ খরচ দেখানো হয়। যেমন তারা ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমনে যান। তাদের ভ্রমনে অবশ্যই এক্সিকিউটিভ ক্লাস সহ সম মাপের সব কিছু খরচ দেখানো হয়। যা মূলত কয়েক মিলিয়ন ডলার। আর এই ভ্রমন থেকে শুরু করে দেখা যায়, তার কাপড় ওয়াশ, সু পলিশ আর সর্বোপরি চিকিতসা সব মিলিয়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়।

এ কারণে যে দেশগুলো এই অর্থ ব্যয় করে এটা তাদের জনগনের ট্যাক্সের মানি হলেও এই অর্থ ব্যয়ের পক্ষে একটি গোষ্টি সব সময়ই সোচ্চার থাকে। তারা একের পর এক ক্ষেত্র তৈরির জন্যে অতিমাত্রায় অ্যগ্রেসিভওয়েতে কাজ করে।

এইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশের এই সকল এনজিও ব্যক্তিত্ব যখন বড় মাপের অর্থের মালিক হয়- তখন তারা অর্থ দিয়ে পশ্চিমা সম্মান কেনেন। এই সম্মানপ্রাপ্তি তাদের নিজ দেশের একটি শ্রেনীর মানুষের কাছে বড় মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে তাদের প্রচুর অর্থ ধীরে ধীরে নিজ নিজ দেশের মিডিয়ার ওপর একটি প্রভাব তৈরি করে। তখন তারা বিভিন্ন সেক্টরে যোগ্য ও শিক্ষিত ব্যক্তির পরিবর্তে মিডিয়ার মাধ্যমে এনজিও লালিত একশ্রেনীর বুদ্ধিজীবি তৈরি করে। শুধু তাই নয়, সমাজের চিন্তার ক্ষেত্রটিতে তারা অর্থ, পশ্চিমাদের সহযোগীতা, তাদের মিডিয়া ও দেশী মিডিয়ার ফলে এই লোকগুলোকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করে যে তারা সমাজের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে দেয়। তখন ছবি আঁকা থেকে শুরু করে মানবাধিকার এমনকি অর্থনীতির পলিসির ওপরও তারা এক ধরনের সামাজিক ও মনোজাগতিক আধিপত্য বিস্তার করে। আধিপত্য বিস্তার করে অর্থের জোরে বিশ্ববিদ্যালয়েও।

অন্যদিকে সরকার ও রাজনীতিবিদরাও একটি ক্যামোফ্লেক্সে পড়ে যায়। তারাও তাদেরকে সম্মান করতে শুরু করে। অন্যদিকে, তারা সমাজের ও রাষ্ট্রের মূল বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকে আর পৃষ্টপোষতকা দেয় না, তাদের কথাও শোনে না। এভাবে ধীরে ধীরে বুদ্ধিবৃত্তিকধারাটি এই পশ্চিমাফান্ড কেন্দ্রিক পশ্চিমাদের পেইড লোকের হাতে পড়ে যায় -এসব দেশগুলোতে। আর এই ধারা চলার ফলে দেখা যাচ্ছে হাজার বছরের প্রজ্ঞার ধারার সঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর রেঁনেসার ফলে সমাজের ও রাষ্ট্রের মনোজগত গড়ে তোলার ও এগিয়ে নেবার যে বুদ্ধিজীবি শ্রেণি গড়ে উঠেছিলো- তা অনেক ছোট দেশে শুকিয়ে যায় বা চাপা পড়ে যায়- এই এনজিও আগাছার চাপে।

আর পল যেমন হাইতির কথা লিখেছেন, তেমনি অতটা আমরা হয়তো তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো বিষয় উপস্থিত করতে পারবো না। কিন্তু তার নেট রেজাল্টটি তো দেখাতে পারবো। যেমন বাংলাদেশে আইলা আক্রান্ত এলাকায় এখনো এনজিও নিয়ন্ত্রিত কাজগুলোর ওই অর্থে কোন রেজাল্ট নেই। আবার সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নের জন্যে একটি ২৯ মিলিয়ন ডলারের বক্তব্য এসেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। বলা হয়েছে ২ জন কর্মীর একটি প্রতিষ্ঠানকে তা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টিকে সত্য নয় বলে দাবী করেছে। একদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার। তাই এখানে পিঠ বাঁচানোর জন্যে কথা না বলা ভালো। তবে যে ইউএসএইড নিয়ে কথা উঠেছে -গত প্রায় তিন চার বছর আমরা সাংবাদিক হিসেবে তাদের কাজ দেখেছি। তারা গনতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রদের ট্রেনিং দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বেশ কিছু পার্টির নেতা কর্মীদের নিয়ে তারা সারাদেশে ওয়ার্কশপ করেছে। কিন্তু কাদের মাধ্যমে এ কাজগুলো করা হয়েছে?  তারা কি কেউ রাজনীতি, নির্বাচন, সমাজ এগুলো খুব বেশি বোঝে? এই সব পার্টির বড় নেতাদের সঙ্গে কথা বললে জানা যাবে, এগুলো অর্থহীন ছিলো। ঠিক তেমনি নির্বাচন, দেশের রুল অফ ল নিয়েও তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করেছে। কাদের দিয়ে এ কাজ করানো হয়েছে। যারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে, তাদের কি প্রাকটিকাল নির্বাচন নিয়ে কোন অভিজ্ঞতা আছে? তাদের কি নির্বাচন নিয়ে কোন উচ্চতর একাডেমিক পড়াশুনা আছে?  অথচ তারাই নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের মুনী ঋষি হয়ে গেছে এই পশ্চিমা অর্থে।

ঠিক তেমনি রোহিঙ্গা শিবিরে বার বার রিপোর্ট করতে গিয়ে দেখেছি,  এবং সেখানে আমাদের প্রশাসনের সততা মেনে চলা কর্মকর্তাদের অনেকে বলেছেন, বাস্তবে বিদেশী ফান্ড যারা পান তারাই এ সমস্যা জিইয়ে রাখতে চান। তারা সরকারকেও বাধা দেন সমস্যা সমাধান করতে। কারণ তাদের সঙ্গে সরকারের রাঘব বোয়ালরা তখন ছিলেন। ওই সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ওখানে প্রশাসনের অনেক লোক তাদের সরকারের কথা শোনেনা- তারা এনজিও’র কথা শোনে। কারণ প্রতিদিন তারা এনজিওদের কাছ থেকে নগদ অর্থ পায়।

আর এ সত্য সকলে মানেন, অর্থ নিজেই একটি বড় শক্তি। তার সামনে অনেকেই ভেসে যায়। এমনকি ভেসে যায় রাষ্ট্র ক্ষমতা অবধি। তবে রাষ্ট্র ক্ষমতা অনেক বড় বিষয়, সেখানে না গিয়ে বরং যা চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে দেশে দেশে বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর রিপেলেসমেন্ট হয়েছে এনজিও শ্রেণী দিয়ে। যা প্রতিটি সমাজের জন্যে ক্ষতিকর শুধু নয়, ভয়ংকর। কারণ, এনজিও এবং দুর্ণীতি ও পশ্চিমা দাসত্ব হাত ধরাধরি করে চলে।

তাই যখন আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন এই অর্থ সাহায্য প্রায় সবটুকুই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- ইউরোপ দরিদ্র হতে চলেছে- সে সময়ে গ্লোবাল সাউথ আবার তার নিজ বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ ফিরে পাবার আশা দেখতে পারে।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ ও The Present World.

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024