সারাক্ষণ রিপোর্ট
৫ মে ২০২৫ সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সিপিবি(এম)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভা পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরেড এম এ সামাদ এবং আলোচনায় অংশ নেন কমরেড সাহিদুর রহমান, মুফতী তালেবুল ইসলাম, তারেক ইসলাম বিডি, শাহীন আহমেদ, বিধান চন্দ্র দাস, সামসুল হক সরকার, কমরেড মিয়াজী ও নারী নেত্রী এলিজা রহমান।
নারীর প্রতি উস্কানিমূলক বক্তব্যের নিন্দা
সভায় নেতৃবৃন্দ নারী সংস্কার কমিশনকে ঘিরে হেফাজত-জামাতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠীর নারী বিদ্বেষী বক্তব্য ও কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষা ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান। তারা জানান, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে নারী কমিশন অন্যতম। এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার পর থেকেই মৌলবাদীরা নারী অবমাননাকর বক্তব্য ছড়িয়ে যাচ্ছে, যা গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।
রাজু ভাস্কর্যে নারী অবমাননার ঘটনার নিন্দা
বাম জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী প্রতিকৃতিতে জুতা মারা এবং বস্ত্রহরণ করে উগ্র মৌলবাদীরা সমগ্র নারী সমাজকে অসম্মান করেছে। এই কর্মকাণ্ডকে সভ্যতাবিরোধী ও বর্বর বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করা হয়।
অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ও নারীর অধিকারের অস্বীকৃতি
সভায় আলোচকরা হেফাজতের মহাসমাবেশে প্রদত্ত অশ্লীল বক্তব্যকে অন্ধকার যুগের চর্চা বলে অভিহিত করেন। তারা বলেন, নারীর গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করে কোনো আধুনিক রাষ্ট্র গড়া সম্ভব নয়। নারী কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়—এ নিয়ে মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু মবতন্ত্র ও উস্কানি কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।
ঐকমত্য প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক পরামর্শের গুরুত্ব
নেতৃবৃন্দ জানান, সব কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা চলছে। তারা বলেন, মত প্রকাশের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে যারা সহিংসভাবে মত চাপিয়ে দিতে চায়, তারা রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি।
নারী বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান
কমরেডরা বলেন, নারীর সমানাধিকার অস্বীকার করা মানে ’৫২, ’৬২, ’৭১ এবং ’২৪ সালের আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে অস্বীকার করা। একটি মহল নারীকে মধ্যযুগীয় ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখছে এবং নারীকে ঘরে বন্দী রাখতে চায়।
সরকার ও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান
সভা শেষে নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি জনগণকেও এই নারী বিদ্বেষী প্রচারণা ও চেতনার বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার এবং প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।