দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ ও সরকারের প্রতি আহ্বান
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশু, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। সেই সাথে আহতদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
শাসনের ব্যর্থতায় বাড়ছে দুর্ভোগ
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্ঘটনা যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা দেখা দিলেও জনগণের দুর্ভোগের আসল কারণ হচ্ছে শাসনের দুর্বলতা ও দুর্নীতি। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে যেকোনো দুর্যোগে জনগণ কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকারের ভেতরেই আরেকটা সরকার: ক্ষমতার দ্বৈততা নিয়ে অভিযোগ
এক বিবৃতিতে জিএম কাদের বলেন, এখন সরকারঘনিষ্ঠরাই বলছেন—সরকারের ভেতরেই আরেকটা সরকার আছে। তারা নিজেরাই বলছেন বর্তমান সরকারের নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নেই এবং এটি নিরপেক্ষ নয়। তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় পার্টিকে মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অফিস ও বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তার নিজের নামে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
মাইলস্টোন ঘটনার পরও সরকারের উদাসীনতা
মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনার পর উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা জনরোষের মুখে পড়েন এবং ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন। এরপর সরকার জরুরি বৈঠক ডেকে, দুর্ঘটনা মোকাবিলার সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজেদের রক্ষায় রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে জোট গঠন করে—যা জনগণের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, এ বৈঠকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নয়, বরং সরকার নিজের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত।
সমালোচনার জবাবে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ তকমা
সরকারবিরোধী যে কেউই এখন ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কাদের। মাইলস্টোনের সামনে বিক্ষোভ করা সাধারণ ছাত্র ও নাগরিকদেরও আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ হিসেবে লেবেল দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার ঘৃণা, হিংসা ও প্রতিহিংসার সংস্কৃতি তৈরি করেছে—যেখানে প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
মব ভায়োলেন্সের অভিজ্ঞতায় সরকারের উপলব্ধি
কাদের বলেন, অতীতে সরকার মব ভায়োলেন্সে নীরব থেকেছে। ব্যবসা দখল, অফিসে অগ্নিসংযোগ, ইফতার পার্টিতে হামলার সময় সরকার কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। কিন্তু এখন নিজেরা যখন ভুক্তভোগী হয়েছেন, তখন নিন্দা জানাতে শুরু করেছে এবং আত্মরক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জাতীয় পার্টির সক্রিয়তা
তিনি বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন পরিণত হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখন দেশে বৈষম্য আরও বেড়েছে। চাকরি ও ব্যবসায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে দলীয় পরিচয় অনুযায়ী। জাতীয় পার্টি এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, যার কারণে তাদের বহু নেতা-কর্মী মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দুই জন নেতা শহীদ হয়েছেন, বহু নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার গোপন অপচেষ্টা
জিএম কাদের অভিযোগ করেন, সরকার চাইছে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে। কিন্তু যেহেতু সরাসরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়, তাই ‘জিএম কাদেরবিহীন জাতীয় পার্টি’ তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাজনীতি করার অধিকারও কেড়ে নিচ্ছে।
দেশের সামনে সংকটপূর্ণ সময়
জিএম কাদের হুঁশিয়ার করেন, দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক দুর্দশার দিকে যাচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হচ্ছেন, কারখানায় আগুন দেওয়া হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। তৈরি পোশাক খাতে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে। রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, আয় না থাকলে মানুষ কর দেবে কোথা থেকে? কর না পেলে সরকার বেতন দেবে কীভাবে? অভাব বাড়লে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
একমাত্র সমাধান: নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন
সবশেষে তিনি বলেন, দেশের এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো একটি অবাধ, সবার অংশগ্রহণে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সরকারকে দল হিসেবে না থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যদি একদিকে নিজেরা দল করে, আর অন্যদিকে অন্যদের দমন করে, তাহলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগই থাকে না।
তিনি বলেন, এখন প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় একটি দল একচেটিয়া রাজনীতি করছে, অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মতো নিবন্ধিত দলকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।