যশোরের অভয়নগরের একটি সাজানো গোছানো সুন্দর এলাকা নিয়ে, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বেশ আনন্দেই বাস করতো বলে বোঝা গেলো তাদের পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরগুলো দেখে। তাদের ইট ও টিনের বাড়ি, ইটের দেয়াল ও ইটের ছাদ ওয়ালা বাড়ি এসব দেখে ধরে নেওয়া যায় তারা বেশ নিশ্চিন্তেই এখানে বাস করতো।
রংপুরের গঙ্গা চড়ায় যাদের ওপর হামলা হলো, যারা সাইকেল ভ্যানে করে তাদের মালামাল নিয়ে এলাকা ত্যাগ করলো, তাদের বাড়ির মালামাল ও পেছনে ফেলে রাখা ভাঙা টিনের ঘরগুলো দেখে বোঝা যায় তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা যশোরের অভয়নগরের হিন্দুদের মতো অতটা ভালো নয়। আর এটাই স্বাভাবিক– কারণ, রংপুরের সাধারণ মানুষের অর্থনীতি ভালো হতে শুরু করেছে আসলে ২০০৮-এর পর থেকে। সেখান থেকে সত্যি অর্থে মঙ্গা উঠে গেছে গত দশ থেকে বারো বছর মাত্র।
অভয়নগরে দেখা গেলো যেভাবে নারীদের ওপর হামলা হয়েছে। বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে, ঠিক একইভাবে বাড়িঘর ভাঙা হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়ায়, হামলা হয়েছে নারীদের ওপর।
অন্যদিকে, ৫ আগস্টের পরে যখন ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মবের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদত্যাগ করানো হচ্ছিলো—সে সময়ের কুমিল্লার একটি স্কুলের এক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার পদত্যাগ করানোর একটি ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে। ভদ্র মহিলা হিন্দু, মধ্যবয়স্ক শিক্ষিকা। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্যে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে শুধু নির্যাতনই করা হয়নি। এক পর্যায়ে তার শরীর অনাবৃত করা হয়। তার পরে অনেকখানি অনাবৃত সেই স্কুল শিক্ষিকাকে ওইভাবে রাস্তায় ঘোরানো হয়।
যশোরের অভয়নগর থেকে, কুমিল্লা ও রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সব জায়গাতেই হামলার শিকারে নারীরা বাদ যায়নি। অন্যদিকে কুমিল্লা, অভয়নগর ও গঙ্গাচড়ার ঘটনা ছাড়াও গত বছর ৫ আগস্টের পরে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এ ধরনের ঘটনার বিবরণ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ দিয়েছিল। যে তথ্য প্রথম আলো কিছুটা হলেও ভেতরের পাতায় ছেপেছিল।
বাংলাদেশে ১৯৭১-এর পরে বর্তমান সময়ের মতো এত বড় আকারে না হলেও প্রথম বড় আকারে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন শুরু হয় ২০০১ সালে লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু হওয়া ওই নির্যাতনের রেশ সরকার পরিবর্তনের পরে আরও মাসখানেক ধরে চলতে থাকে।
তবে ওই সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের পার্থক্য হলো তখন মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় ঘটনাগুলো প্রকাশ পেত। যেমন তখন অধ্যক্ষ মুহুরী হত্যার পরে তাঁর ছবি ও সংবাদ সব মিডিয়া প্রকাশ করেছিল। অথচ বর্তমানে ময়মনসিংহে একজন প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হত্যা করা হয়েছে অনেকটা প্রকাশ্যে, খবরটা শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় পেয়েছি।
তাছাড়া ২০০১-এর ওই হিন্দু নির্যাতনের সময় ড. আনিসুজ্জামান, ওয়াহিদুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে প্রতিবাদ হয়েছিল। ড. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়ে বুদ্ধিজীবিরা গোটা দেশ ঘুরেন।
বর্তমানে মিডিয়া কেন প্রকাশ করে না তা আমি মিডিয়ার মানুষ হয়েও পুরোপুরি বুঝি না। তবে ওই সময়ে প্রধান মিডিয়া ছিল সংবাদপত্র। তার অধিকাংশের মাথার ওপর অসাম্প্রদায়িক ও শিক্ষিতজন ছিলেন। তাদের কয়েকজন এখনও আছেন, তবে কেন তারা প্রকাশ করেন না, তার কারণ ঠিক জানি না। কারণ কি কোনো বাধা—না, তাদের মনোজাগতিক মেটামরফোসিস হয়েছে, না, তারাও আতঙ্কে তা বুঝতে পারি না। অন্যদিকে বুদ্ধিজীবিদের এই নিশ্চুপতার কারণ নিয়ে একজন বুদ্ধিজীবি ও মানবাধিকার নেত্রী বললেন, “তুমি ২০০১-এর যে বুদ্ধিজীবিদের কথা বলছো, তাঁরা এখন বেঁচে থাকলে সকলেই হত্যা মামলার আসামী হতেন। তারা হিন্দু নির্যাতন নিয়ে কথা বলতে পারতেন না।”
তাহলে বাংলাদেশের এই হিন্দুদের ভবিষ্যত কি, যেখানে রাষ্ট্র তার পাশে নেই? সমাজের একটি প্রগতিশীল অংশের মানসিক মেটামরফোসিসের ফলে তারা নির্যাতনের পক্ষে সফট অবস্থান নিয়েছেন। আরেকটি অংশকে রাষ্ট্র ভীত করে রেখেছে। এ অবস্থায় শতভাগ অসহায় এই দুই কোটি মানুষের ভবিষ্যত কি?
আমি সাংবাদিক, অর্ধশিক্ষিত, কোন বিষয়ে পণ্ডিত নই, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত পদাধিকারবলে বুদ্ধিজীবিও নই। তাই বুদ্ধিবৃত্তির গভীরে গিয়ে এদের ভবিষ্যত খোঁজার সক্ষমতা ও জ্ঞান আমার নেই। তবে এখন মনে হয়, আমার মতো মানুষের ওই ভবিষ্যত খুঁজে কোন লাভ নেই। কারণ সাধারণ মানুষ যে বাস্তবতা বোঝে, আমাদের মতো যারা দেশ ও জাতি নিয়ে স্বপ্ন দেখি, হয়তো বাস্তবতার মাটিতে তাদের থেকে আমরা পিছিয়ে আছি।
কারণ, ২০০১-এর পর থেকে সাধারণ হিন্দুরা কিন্তু নীরবে মাইগ্রেশনকে বেছে নিয়েছে। আসামের শিলচর, ত্রিপুরার আগরতলা ও তার আশেপাশে, পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার যাদবপুর, মধ্যমগ্রাম, বাসন্তী, সন্দেশখালি আবার মালদহ, বীরভূম, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এসব জায়গায় গিয়ে দেখেছি ২০০১-এর পর থেকে আসা হাজার হাজার হিন্দু পরিবার। ঠিক এই হারে অবশ্য বিহার, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশে না থাকলেও ওড়িশায় গিয়ে প্রচুর পরিবার পেয়েছি। যখন তাদের দেখেছি, একবার নয় বারবার দেখেছি—সেই সময়ে মনে হয়েছিল এই মানুষগুলো মাতৃভূমি ছেড়ে ভুল করেছে। তখন মনে হয়েছিল, এই মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে পারে না, টিকে থাকার লড়াই করতে পারে না বলেই পলাতকের জীবন বেছে নিয়েছে। এই কষ্ট বেছে নিয়েছে।
১৯৭১ দেখেছি, ২০০১ দেখেছি, তারপরেও মনে হয়নি যে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য, মাতৃভূমির থেকে নিজস্ব জীবনের নিরাপত্তা অনেক বড়। এখন যখন দেখি যারা রাষ্ট্র চালায় বিভিন্ন সময়ে, তাদের সন্তানরা অধিকাংশই বিদেশী নাগরিক। তারাও অধিকাংশ বিদেশী নাগরিক। অথচ তারা সংখ্যাগুরু ধর্মালম্বী। তখন বুঝতে পারি, এই মানুষেরা আসলে রাষ্ট্রক্ষমতাকে কী কাজে লাগায় তা আমরা জানি না। এমনকি তারা যে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা আগেই নিশ্চিত করে এসব কাজে আসে, তাও আমাদের মতো মানুষরা বুঝি না। বরং এদের মতো এত সুবিধা ও রাজকীয় পথে না হলেও চুপিসারে যে হিন্দুরা ২০০১-এর পর থেকে মাইগ্রেশন করেছে—কেউ কেউ বলে ১৯৯২ থেকে একটা ঢেউ গেছে। এরা মনে হয় আমাদের মতো মানুষদের থেকে অনেক বেশি বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে।
যেমন এই যে এ কথা লিখছি, তারপরেও কিন্তু নিজের বিশ্বাসটি ভিন্ন স্থানে, সে বিশ্বাস মৃত্যু হোক আর যাই হোক তাহলেও মাতৃভূমি ছাড়বো কেন? এটা আমার দেশ। রাষ্ট্রের কিছু স্বার্থপর ও লোভী মানুষ আমাকে সংখ্যালঘু করেছে। কিন্তু আমার বন্ধু-বান্ধব, যাদের ঘিরে আমি বেড়ে উঠেছি—যাদের অনেকে আমার বড় ভাই ও পিতৃব্যর মতো, তাদের ভিতর তো কখনও সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু এটা দেখেনি। নিজের মনেও তো এটা হয় না। আবার কখনও কখনও মনে হয়, সাধারণ মানুষের জীবন তো আমি বুঝি না, তাদের নিরাপত্তাহীনতা বুঝি না।
যেমন মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে আমার একজন আপনজন আমাকে ফোন করে বললেন, ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছেন। এখন আর আমার মারা গেলেও কোন অসুবিধা নেই। কারণ, কাল মেয়েটিকে ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দিতে পেরেছি। সেখানে তার একটা বিয়েরও ঠিক হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ওই ছিল আমার সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ।
তার ফোন রেখে অনেকক্ষণ পড়ার রুমে এসে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকি। আসলে কে বেশি বাস্তব! ওই যে বৈধব্য জীবনে মানুষটি একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মেয়েকে ৫ আগস্টের পর ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দিতে পেরেছেন তিনি নাকি আমি। তখন মনে হলো, আসলে ছোটবেলা থেকে রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ আর ক্ষীতিমোহন সেনের পরে আমাকে বেশি আচ্ছন্ন করেছে, লালন ও তার উত্তরসূরীরা, আর সব থেকে বেশি আচ্ছন্ন করেছেন কাজী আব্দুল ওদুদ ও সৈয়দ মুজতবা আলী। কাজী আব্দুল ওদুদ ও সৈয়দ মুজতবা আলী ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পরে আর কোন মাতৃভূমি পাননি। নিরাপত্তাও পাননি। অন্যদিকে লালনও কোন ঈশ্বর নির্ভর ধর্মের কাছে আশ্রয় পাননি।
তাহলে আসলে এই দুই কোটি মানুষের জন্যেই কী প্রয়োজন আগে? তাদের মাতৃভূমি না তাদের নিরাপত্তা? যে নারী শিক্ষিকাকে বস্ত্রহীনা করে রাস্তায় ঘোরানো হয়েছে—সে তো কারো মা। আর সেই মা জন্মভূমি ও স্বর্গের থেকেও বড়। আর মা যেখানে বস্ত্রহীনা হয়, সেখানে মায়ের নিরাপত্তা বড় নাকি জন্মভূমি বড়?
রাষ্ট্রচিন্তা, জন্মভূমির চিন্তা যাদেরকে আবেগে আচ্ছন্ন করে রাখে, তারা কি বাস্তবে মানুষের নিরাপত্তার চিন্তা করতে ভুল করে? যেমন ১৯৭১ সালে নদীয়ার ডিসি ছিলেন যে ভদ্রলোক, যিনি মেহেরপুরে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান শুধু নয়, তাজউদ্দিন আহমদ ও তার সঙ্গী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে বিএসএফ-এর মাধ্যমে ভারতে নেওয়ার ব্যবস্থাসহ সব কিছুরই দায়িত্ব পালন করেছিলেন—ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে ২০১৭ সালে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই চাকরি হারিয়েছিলেন। তিনি চাকরি হারিয়েছিলেন মূলত ভারতের সিভিল সার্ভিস রুল ভাঙার কারণে।
কারণ, ভারতের সিভিল সার্ভিস রুল অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মকর্তা কোন রাজনৈতিক মতামত দিতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেদিন শুধু রাজনৈতিক মতামত দেননি; একজন ডিসি হয়েও তিনি সরাসরি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন। তার চিঠির সারমর্ম ছিল, শরনার্থী হিসেবে যারা ভারতে আসছে, তাদের নিরানব্বই ভাগই হিন্দু। ভারত অবশ্য তাদেরকে হিন্দু না বলে পাকিস্তানের নাগরিক বলছে বিশ্ববাসীর কাছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পূর্বপাকিস্তানে যা ঘটছে তাতে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় হিন্দুরা। আর তাদের বেশিভাগ নির্যাতিত হয়ে আসছে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু মুসলিমদের দ্বারা, পাকিস্তানের সেনাদের দ্বারা নয়। তাই বাংলাদেশ হলেও এই হিন্দুরা নিরাপত্তা পাবে না। বাংলাদেশ দ্রুতই পূর্ব পাকিস্তানের রূপ নেবে। তাই ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দেবার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে নিজস্ব সম্পদ নষ্ট না করা। বরং পশ্চিম পাকিস্তান যা যাচ্ছে সে পথে হাঁটা—অর্থাৎ ভারতের সীমান্তবর্তী যে কয়েকটি জেলা পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে দিতে চায়, সেটা নিয়ে সেখানে হিন্দুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এই ছিল মূলত তার চিঠির সারমর্ম।
এই চিঠি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পৌঁছানো মাত্রই তিনি তাঁকে চাকরিচ্যুতি করার নির্দেশ দেন। সে দেশের বিধি মতো তাঁকে দ্রুতই চাকরিচ্যুত করা হয়।
সেদিন তাঁর সঙ্গে অনেক রাত অবধি আলোচনা করে হোটেলে ফিরে, গভীর রাতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে ১৯৭১ সালের শরণার্থী যে শিবিরগুলোয় আমার নিত্য পা ফেলা ছিল, সেগুলোই দেখছিলাম। কারণ এই হোটেল ম্যারিয়ট এখন যেখানে—এর চারপাশে তখন জলে কাঁদায় তাবুতে, পাইপের মধ্যে বাস করতো শরনার্থীরা। আর তার ভেতর খালি পায়ে ছিল আমাদের নিত্য চলাচল।
তখন স্মৃতিতে জেগে ওঠে এর কাছাকাছিই ইন্দিরা গান্ধী এসেছিলেন। আর ইন্দিরা গান্ধীর সেই মুখ, সেই শাদা শাড়ী, পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিজয় উল্লাস মনে পড়তেই মনের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য হলেও একটা দ্বন্দ্ব ওঠেনি। কি বড়—নিরাপত্তা না মাতৃভূমি? পরে মনে হয়েছিল, ইন্দিরা গান্ধী যতটা ভবিষ্যত দেখতে পান, অতটা ভবিষ্যত তো একজন ডিসির পক্ষে দেখা সম্ভব নয়।
কিন্তু আজ যখন দুই কোটি হিন্দু মূলত দেশজুড়ে অভয়নগর, গঙ্গাচড়া আর কুমিল্লার বস্ত্রহীনা মা ও মুরাদনগরের বস্ত্রহীনা কন্যার মত বাস করছে, সেই সময়ে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে: আসলে ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে আমাদের মতো ক্ষুদ্র মানুষ—আমরা যারা রাষ্ট্র ও মাতৃভূমি নিয়ে আচ্ছন্ন থাকি, আমরা কি আসলে প্রকৃত অর্থে সমাজের ভালনারেবল গোষ্ঠী বা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভুলে যাই?
আবার হিসাব মেলাতে পারি না, সংখ্যাগুরুর মধ্যে যারা প্রকৃত অর্থে সব মানুষের একটি দেশ, একটি নিজস্ব সংস্কৃতির দেশ নিয়ে কাজ করেন, তারা তো বারবারই নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন। বরং যাদের চিন্তার ভিতর এসব নিয়ে মোনাফিকি আছে, অন্ধ ধর্মব্যবসা তাদের মনের ভিতর থাকলেও সেগুলো পোষাকে ঢাকা—তারাই শুধু সব সময় ভালো থাকে। তাই এই প্রগতিশীল ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষ যারা, তারা-ও এক ধরনের সংখ্যালঘু; আবার এই দুই কোটি হিন্দু যারা ধর্মীয় কারণে সংখ্যালঘু—এদের নিরাপত্তার পথ আসলে কোন পথে?
লেখক: সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ, The Present World.