মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

ডিপ্লোমেসির থ্রি চেইন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫, ১১.০৮ এএম

স্বদেশ রায়

ডিপ্লোমেসিতে থ্রি চেইন এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই, কখনও কখনও চেইন বাড়ানোও হয়। তবে থ্রি চেইন মূলত জনপ্রিয় হয়েছিলো বা খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে।

ভিন্ন পেশা থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন, তাও সরাসরি প্রেসিডেন্ট হিসেবে। অন্য পেশা থেকে রাজনীতিতে এসেও- আমেরিকার যে ক’জন গেইম চেঞ্জার প্রেসিডেন্ট- রোনাল্ড রেগান তাদরে মধ্য অন্যতম। যদিও প্রেসিডেন্ট বুশের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে, ওয়াল্ড অর্ডার বদলে গেছে। আমেরিকা এখনও পৃথিবীতে একক সুপার পাওয়ার। তবে আমেরিকাকে এই স্থানে আনার জন্যে সব থেকে বড় কৃতিত্ব দেয়া হয় রোনাল্ড রেগানকে।

দেশের ভেতর অনেক প্রতিষ্ঠান বা শক্তি যাদের বিরুদ্ধে রোনাল্ড রেগানকে লড়তে হতো, সে ক্ষেত্রে তার অন্যতম একটি অস্ত্র ছিলো থ্রি চেইন। অর্থাত ওই প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের সরবরাহ কমাও। ওই প্রতিষ্ঠান যে ক্ষতিকর কাজগুলো করে সেগুলো যাতে সুগারকোটেড না হয়, সেটি আটকে দাও। এবং তার বিপরীতে প্রয়োজনীয় শক্তিকে শক্তিশালী করো।

যেমন এ মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগী ইলন মাস্ককে দেখা যাচ্ছে ইউএসএইডের কার্যক্রম বন্ধ করায় তিনি যে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় বাধা পাচ্ছেন- সেখানে তিনি প্রয়োজনীয় এই চেইন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন।

আর্ন্তজাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যুদ্ধে বার বার দেখা যায় এই থ্রি চেইন পদ্ধতি। অর্থাৎ কোন দেশ যদি অন্য কোন দেশের জন্যে ক্ষতিকর হয় তাহলে ক্ষতিকর ওই দেশকে ঘিরে ফেলার জন্যে বা নির্দিষ্ট একটি বৃত্তে আটকে দেবার জন্যে বা তাকে পরাজিত করার জন্যে চেইনগুলো যেভাবে ব্যবহার করা হয়। ওই দেশের সঙ্গে শিল্প, বানিজ্য বিষয়ক যে কার্যক্রমগুলো ছিলো তা কমিয়ে অনেক বেশি নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং এই কাজগুলো যাতে ওই দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য দেশগুলোও না করে তার জন্যে কূটনৈতিক তত্‌পরতা চালিয়ে একই ভাবে ওই দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কমিয়ে দেয়ার কাজটি করা হয়। শুধুমাত্র রাষ্ট্রশক্তি নয়,  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ওয়াল্ড ব্যাংক ও আইএমএফও ধীরে ধীরে অনেক দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ব্লাড লাইন সাপ্লাইয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই যে দেশের বিপরীতে এই চেইন অর্থাত শেকল ব্যবহার করা হচ্ছে, ওই দেশ যাতে ওয়াল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ এর লাইফ লাইন না পায় তার জন্যেও একটা কূটনৈতিক চ্যানেলে কাজ করানো হয়। এবং এর সপক্ষে ওই দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কাজে জড়িত সব দেশগুলোকে মোটামুটি এক কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়। অন্যদিকে কেউ যদি ওই দেশের পক্ষে থাকতে চায় তাকেও তখন অন্য শিকলে আটকানোর চেষ্টা হয়, যাতে সে নিজেকে নিয়ে বা নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত শুধু নয় ,তার অর্থনীতির ওপর এমন আঘাত সৃষ্টি করা হয় যাতে সে নিজের অর্থনীতি সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

কোন দেশে কোন নতুন সরকার আসার পরে বা কোন ভিন্ন ধরনের সরকার আসার পরে যদি দেখা যায়- অতীতে তার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যারা জড়িত ছিলো তারা নিজেদের কাজকে স্লো করে দিয়েছে, নতুন করে ওই অর্থে কোন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সেখানে শুরু করছে না- এমনকি এমনও পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে যে ওই দেশ যে পণ্যগুলো বাইরে বিক্রি করে; তা বিক্রি হলেও অন্য দেশের একই পণ্য’র তুলনায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে- এ সময়ে স্বাভাবিকই বোঝা যায়, ওই দেশ রেগানের শেকল নীতিতে আটকা পড়ে গেছে।

অর্থনৈতিক ওই শেকলের পাশাপাশি ওই দেশ যে সেবা ও সহযোগীতা মূলক সুযোগগুলো এতদিন অন্য দেশের কাছ থেকে পেতো সেগুলোও দেখা যায় কমিয়ে আনা হচ্ছে, না হয় বন্ধ করা হচ্ছে। যেমন ওই দেশটি অতীতে অন্য দেশ বা তার সঙ্গে অধিক সম্পর্ক বা ভৌগলিক সুবিধাযুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে যে সুবিধাগুলো পেতো যেমন, পর্যটন, শিক্ষা, চিকিতসা, শ্রম বিনিময়, টেকনোলজি বিনিময়, ইউটিলিটি সরবরাহ- এমনকি ধর্মীয় যাতায়ত বা ধর্মীয় আচরণ পালন সুবিধা- সেগুলোও নানা ভাবে অতীতের সহযোগী দেশগুলো কমিয়ে দিচ্ছে। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে। এই ঘটনা যখন কোন দেশের জন্যে ঘটতে থাকে তখন ধরে নেয়া হয় ওই দেশটি থ্রি চেইনের দ্বিতীয় চেইনে আটকা পড়েছে।

এর পরে এসে দাঁড়ায় তৃতীয় চেইন। অর্থাৎ যে দেশটির বিপরীতে এই চেইনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে আটকে ফেলার জন্য ওই দেশটি যে অপরাধে অপরাধী তা যেন সে সুগারকোটেড করে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে বিশ্ব মঞ্চে কোনরূপ মার্কেটিং না করতে পারে। সেজন্য তার সুগারকোটেড করার পথগুলো শেকল দিয়ে আটকে দিয়ে- তার প্রকৃত চরিত্রকে উম্মোচন করা ও আর্ন্তজাতিকভাবে তা তুলে ধরা।

সাধারণত বর্তমান বিশ্বে একটি রাষ্ট্র বা সরকার কখন খারাপ বা ক্ষতিকর রাষ্ট্র বা সরকার হিসেবে চিহ্নিত হয়? ক্ষতিকর রাষ্ট্রগুলে বর্তমান বিশ্বে এভাবে চিহ্নিত হচ্ছে- যেমন কোন রাষ্ট্র যদি  অনিয়ন্ত্রিত ডিক্টেটর শাসিত  রাষ্ট্র ও অথোরেটিয়ান রাষ্ট্র হিসেবে অন্য’র জন্যে ক্ষতিকর হয়। কোন রাষ্ট্র যদি আর্ন্তজাতিক মাদক চোরচালানের অন্যতম করিডোর হয়। কোন রাষ্ট্র যদি মাদকের মতই অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের ক্ষেত্র হয়। কোন রাষ্ট্র যদি অন্য কোন রাষ্টের ক্ষতি করার জন্যে তার ভূমিকে ব্যবহার করতে দেয়। আর বর্তমান মুহূর্তে সেই রাষ্ট্রকে সব থেকে ক্ষতিকর হিসেবে দেখা হয়, ওই রাষ্ট্র যদি জঙ্গী ব্রিডিং এর হাব হয়, সেখানে যদি জঙ্গীরা অবাধে চলাচল শুধু নয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রকেও অনেকখানি নিয়ন্ত্রন করে।

তখন এই রাষ্ট্র’র বা ওই রাষ্ট্রে’র সরকারের বিরুদ্ধে এমন শক্ত চেইন ব্যবহার করা হয় যাতে সেটা ওই রাষ্ট্র বা ওই রাষ্ট্রের সরকার কোন মতেই ভাঙ্গতে না পারে। এবং নিজেকে কোনভাবেই সুগার কোটেড করে মার্কেটিং না করতে পারে। কারণ, জঙ্গীরাও এখন অনেক কৌশলী। তারা সমাজসেবী, নারী, অধিকারকর্মী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব  এমনি বিভিন্ন ছদ্মবেশে তাদের জঙ্গী নেতা গড়ে তোলে। তাই এগুলোকে সামনে রেখে বা প্রজেক্ট করে তারা যাতে তাদের জঙ্গীবাদ ও জঙ্গী ক্ষেত্রে তৈরির ওপর একটা সুগার কোট না দিতে পারে সে জন্যে অনেক শক্ত চেইন বর্তমান বিশ্ব কূটনীতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। জঙ্গীরা সাধারণত প্রথমে যে কাজগুলো করে, অর্থাত ওই দেশের যে ইনটেলেকচুয়াল শক্তি জঙ্গীদের জন্যে ক্ষতিকর তাদের ওপর আঘাত করে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের তারা শত্রু মনে করে  তাই পরবর্তীতে তাদের ওপর আঘাত করে, এরপরে নারী প্রগতিকে জঙ্গীরা সব সময় শত্রু মনে করে এই কারনে যে সাধারণ প্রগিতশীল নারী তাদের নতুন জঙ্গী ব্রিডিং বা জম্ম দেবার  ক্ষেত্রে একটি অনেক বড় বাধা। তাই তারা প্রগতিশীল নারীদের ওপর আঘাত করে। এবং অন্য সাধারণ নারীকে মানসিকভাবে বন্দী করার কাজে নেমে পড়ে। এ ধরনের জঙ্গী রাষ্ট্রগুলো কী করছে বা সেখানে কী ঘটছে সেটাকে ওই রাষ্ট্রের বিপরীতে যারা শেকলে আটকানো নীতি ব্যবহার করতে চায়- তারা নিজেরা প্রথমে এগুলোকে সামনে নিয়ে আসে। যাতে অন্য অন্য যে দেশ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তারা বিষয়টি নিয়ে সজাগ হয়।কারণ, জঙ্গীদের কোন বর্ডার থাকে না। হাজার মাইল দূরে বসেও জঙ্গীদের হাত থেকে কেউ নিরাপদ নয়। তাই জঙ্গী এ মুহূর্তের বিশ্বে অন্যতম বড় সিকিউরিটি সমস্যা। এ কারণে মধ্য মানের অর্থনৈতিক দেশ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সুপার পাওয়ারও এ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। এই জঙ্গীকে ঠেকাতে বা ধ্বংস করতে তারা যে কোন ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সারা পৃথিবীতে। আর যখন পৃথিবীর কোন সুপার পাওয়ারের এই নিরাপত্তা বিষয়ের দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি কোন দেশকে জঙ্গী ধারার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে তখন নিশ্চিত হতে হয় ওই দেশ রেগ্যানের থ্রি চেইন কৌশলে শক্তভাবে আটকা পড়েছে।

আর এমন সময়ে ওই দেশের হাতে সাধারণত তিনটে অপশন থাকে। যেমন পৃথিবীতে অনেক দেশে অতীতে নির্বাচনে মাধ্যমে জঙ্গীরা জয়ী হলেও সে দেশের সামরিক বাহিনী দেশকে জঙ্গী শাসনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। আবার অনেক দেশকে সে দেশের প্রগতিশীল জনগোষ্টি জাগ্রত হয়ে জঙ্গীর হাত থেকে রক্ষা করেছে। এ দুটি অপশন যদি না দেখা যায় তখন সুপার পাওয়ারের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া সাধারণত আর কোন অপশন ওই ধরেনর দেশগুলোর জন্যে থাকে না।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ  ও The Present World.    

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024